বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম দুই সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলমকে ট্রাকচাপা দিয়ে হত্যাচেষ্টা করার অভিযোগে ট্রাক ড্রাইভার ও হেলপারকে আটক করা হয়েছে। আজ বুধবার রাতে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া থানা পুলিশ তাদের আটক করে।
আটক ড্রাইভারের নাম আসিম আহমেদ নেওয়াজ ও হেলপার শেখ সবুজ মাহাতীর। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
গাড়ি বহরে থাকা বান্দরবান কলেজের বাংলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ সামি বলেন, ‘হাসনাত ও সারজিসকে হত্যা করতে পরিকল্পিতভাবে গাড়ি চাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। অভিযুক্ত ট্রাকটির চালক ও হেলপার পুলিশ হেফাজতে আছেন।’
জানা গেছে, চট্টগ্রামে নিহত অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফের কবর জিয়ারত শেষে ফেরার পথে বুধবার আনুমানিক সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চুনতি ইউনিয়নের হাজী রাস্তার মোড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তবে এই ঘটনায় দুই সমন্বয়ক অক্ষত রয়েছেন। তিনটা গাড়ি বহর ছিল তাদের। এরমধ্যে দুর্ঘটনার শিকার গাড়িতে হাসনাত ও সারজিস থাকলে মাঝপথে তারা গাড়ি পরিবর্তন করেন।
ফেসবুকে আহমদুল্লাহ সাকিব নামে একজন লিখেছেন, শহীদ অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফ ভাইয়ের কবর জিয়ারত করে ফেরার পথে আনুমানিক সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চুনতি ইউনিয়নের হাজী রাস্তার মোড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলমের গাড়ি বহরে ট্রাক চাপা দিয়ে হত্যা চেষ্টা করা হয়। আমরা বাইক নিয়ে গাড়িটি আটকানোর চেষ্টা করলে আমাদেরও চাপা দেওয়ার চেষ্টা করে। আল্লাহর রহমতে বেঁচে গেছি।
লোহাগাড়া থানার দায়িত্বরত এএসআই মো. আলিম দুর্ঘটনার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, এই ঘটনায় একটি ট্রাক জব্দ করা হয়েছে। ড্রাইবার আসিম আহমেদ নেওয়াজ ও তার হেলপার শেখ সবুজ মাহাতীরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার রাতে কর্মসূচির ডাক দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক হান্নান মাসুদ।
নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে এক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস আলমকে ট্রাকচাপা দিয়ে হত্যাচেষ্টার প্রতিবাদে রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে টিএসসির রাজু ভাস্কর্য থেকে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে।’
জানা গেছে, বুধবার অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফের কবর জিয়ারত শেষে ফেরার পথে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চুনতি ইউনিয়নের হাজী রাস্তার মোড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এর আগে আজ দুপুরে চট্টগ্রাম নগরের টাইগারপাস মোড়ে চট্টগ্রামে আইনজীবী আলিফ হত্যার প্রতিবাদে এক বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে বক্তব্য দেন হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলম।
সমাবেশে ইসকনকে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে আইনজীবী আলিফ নিহতের ঘটনায় জড়িতদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি জানান তারা।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমার ভাই সাইফুলকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। এই ইসকনকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে অবশ্যই নিষিদ্ধ করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘ইসকন কীভাবে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগের সহায়তায় ভারতের প্রেসক্রিপশনে বাংলাদেশে অশান্তি সৃষ্টি করছে তা আমরা ভুলে যাইনি। ধর্মের দোহাই দিয়ে উগ্রবাদী সংগঠন পরিচালনা করলে বাংলাদেশে এক হাত জায়গাও দেওয়া হবে না।’
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার বিকেলে সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভরতদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় নিহত হন আইনজীবী আলিফ। এছাড়াও পুলিশের ১২ জন সদস্যও আহত হয়েছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।
পাঠকের মতামত