এত দিন পাঠ্যবই, খবরের কাগজ আর টেলিভিশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি দেখেছে আফিয়া আবিদা। ঢাকায় একটি অনুষ্ঠানে দূর থেকে দেখার অভিজ্ঞতাও হয়েছে। আফিয়ার ধারণা ছিল, প্রধানমন্ত্রী ধরাছোঁয়ার বাইরের একজন মানুষ। কিন্তু ট্রেনে ওঠার পর যাত্রী হিসেবে প্রধানমন্ত্রীকে পেয়ে ভীষণ আপ্লুত সে। এভাবে কাছ থেকে দেখা আর কথা বলার সুযোগ পাবে ভাবেনি সে। ট্রেনে প্রধানমন্ত্রী তাকে জড়িয়ে ধরেছিলেন। জানতে চেয়েছিলেন, কেমন লাগছে ট্রেনে চড়তে। অভিভূত আফিয়া জবাবে বেশি কিছু বলতে পারেনি। কেবল বলেছে, ভালো।
গতকাল শনিবার বেলা দেড়টার দিকে দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজার আইকনিক স্টেশন থেকে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত ট্রেনে চড়ে ১৯ কিলোমিটার দূরের রামু রেলস্টেশনে যান। এই সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নানা শ্রেণি–পেশার ২৮০ জনের একটি দল ট্রেনে ভ্রমণ করে। আফিয়াসহ বেশ কয়েকজন শিশুও ছিল ওই দলে।
কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে আফিয়া। প্রথম আলোর কাছে নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরতে গিয়ে সে বলে, এত দিন পাঠ্যপুস্তকে শেখ হাসিনার রাজনীতি, জীবনবৃত্তান্ত পড়েছি। টেলিভিশনের দেখেছি তাঁকে অনেকবার। চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময় ২০১৯ সালে রাজধানীতে আয়োজিত এক প্রতিযোগিতায় বক্তা নির্বাচিত হয়েছিলাম। তখন পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে দূর থেকে দেখেছিলাম প্রধানমন্ত্রীকে। গতকালের ট্রেনযাত্রায় শেখ হাসিনাকে একেবারে কাছে অন্য রকম লেগেছে। তিনি খুবই মমতাময়ী একজন মানুষ। আমাকে জড়িয়ে ধরে আদর করেছেন। ছবিও তুলেছেন। এই স্মৃতি আমি কখনো ভুলব না।’
কী কথা হলো জানতে চাইলে আফিয়ার জবাব, ‘প্রথমে কেমন আছি জানতে চাইলেন, তারপর জিজ্ঞাসা করেন, ট্রেন জার্নি কেমন লাগছে? বলেছি, অনেক ভালো লাগছে।’
আফিয়া জানায়, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী এত মানবিক, এত মমতাময়ী আগে বুঝতে পারিনি। আমিও তাঁর মতো উদার-মানবিক মানুষ হতে চাই।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ট্রেনে উঠেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঝিনুক বিক্রেতা এক শিশুকে জড়িয়ে ধরেন। এরপর তার কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকার ঝিনুক দিয়ে তৈরি রকমারি পণ্য কেনেন। শিশুর নাম তানিয়া আফরি প্রিয়া। বাড়ি কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের পাশের কলাতলী গ্রামে। বাবার নাম শহর আলী। দেড় বছর ধরে সে সমুদ্রসৈকতে ভ্রমণে আসা পর্যটকদের ঝিনুক পণ্য বিক্রি করে সংসারে অর্থের জোগান দিচ্ছে।
রেলযাত্রায় প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়েছিল আফিয়ার মতোই আরেক শিশু আলিয়া আফসা মানহা (৭)। সে কক্সবাজার পিটিআই স্কুলের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী। যদিও তার প্রধানমন্ত্রীর কাজকর্ম সম্পর্কে এখনো পুরোপুরি ধারণা নেই। তবু বুঝতে পেরেছে, দেশটা চালান তিনিই। সেই মানুষটিকে কাছে পেয়ে আলিয়াও ভীষণ খুশি।
ট্রেনে শিশুদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী। গতকাল বিকেলে কক্সবাজার থেকে রামু যাওয়া বিশেষ ট্রেনে
ট্রেনে শিশুদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী। গতকাল বিকেলে কক্সবাজার থেকে রামু যাওয়া বিশেষ ট্রেনেছবি সংগৃহীত।
কক্সবাজার শহরের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের স্কুল ‘অরুণোদয়’–এর দুই শিশুও ছিল প্রধানমন্ত্রী সফরসঙ্গী। ওই স্কুলের শিক্ষক তৃষিতা দাশ বলেন, এত দিন শিশুরা প্রধানমন্ত্রীকে টেলিভিশনে দেখেছে। এখন সরাসরি কাছে পেয়ে তারা অবাক হয়েছে। নতুন ট্রেনের যাত্রাও শিশুদের আনন্দ দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর রেলযাত্রায় বিভিন্ন পেশার সাধারণ মানুষজন ছিলেন। তাদের কেউ ঝিনুক বিক্রেতা, কেউ জেলে, শুঁটকি বিক্রেতা, লবণচাষি, রাজমিস্ত্রি, সমুদ্রসৈকতের ফটোগ্রাফার, পান ব্যবসায়ী, নারী উদ্যোক্তা, সিএনজি অটোরিকশাচালক, আশ্রয়ণ প্রকল্পের উপকারভোগী আর কেউবা ইমাম।
উদ্বোধনী ট্রেনে চড়া এবং প্রধানমন্ত্রীকে কাছ থেকে দেখার অনুভূতি প্রকাশ করে কক্সবাজার সদরের দক্ষিণ ডিককুল গ্রামের বিধবা নারী জান্নাত বেগম বলেন, ‘দারুণ মুহূর্ত ছিল দিনটি। কক্সবাজারের প্রথম ট্রেনে চড়ার স্মৃতি ভুলতে পারছি না।’
দেড়টায় রওনা করা ট্রেনটি আধা ঘণ্টায় পৌঁছে রামু স্টেশনে। ট্রেনের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটার। চলন্ত ট্রেনের দুই পাশের মাঠজুড়ে সবুজ শস্যের ভান্ডার, মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা সারি সারি সবুজ সুপারিবাগান। পথে পথে দাঁড়িয়ে হাজারো নারী-পুরুষ প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়েছেন। অনেকেরই হাতে ছিল শেখ হাসিনার ছবিসংবলিত পোস্টার-ব্যানার। প্রথম আলো