পেকুয়া উপজেলার এক মাত্র চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। পেকুয়া উপজেলাবাসীর চিকিৎসা সেবার কথায় ১৯৯৮সালে সৌদি সরকারের অর্থায়নে পেকুয়ায় একটি ২০শষ্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল প্রতিষ্টা করেন। তৎকালীন সময়ে প্রকল্পের অধিনে ডা: মজিবুর রহমান, ডা: নুরুল আলম, ডা: শাহ আলমসহ ৪৬জন কর্মকর্তা কর্মচারী দিয়ে ধারাবাহিবভাবে এই হাসপাতাল পরিচালনা করে আসেন।
বর্তমান আ’লীগ সরকারের স্বাস্থ্য সচিব ২০১১সালে পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শনে এসে পেকুয়াবাসীর স্বাস্থ্য সেবার একমাত্র কেন্দ্র ২০শয্যা হাসপাতালকে ৩১শয্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং সরকারীকরণ (রাজস্ব) করার সিদ্ধান্ত নেন। পরে বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করে পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৩১শয্যায় উন্নীত হয়। সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃক রাজস্ব খাতের ডাক্তার ও জনবল নিয়োগ দেন। রাজস্ব খাতে টিএইচও ডাঃ পূণ্যবর্ধন বড়–য়াসহ ৮জন এবং উপসহকারী মেডিকেল অফিসার হিসাবে ডাঃ জিয়া উদ্দিন, ডাঃ শামীম, ২জন ষ্টার্ফ নার্স ও একজন ডেন্টালও নিয়োগ দেন। পূর্বে প্রকল্পের অধিনে দায়িত্বে থাকা আরএমও ডাঃ মজিবুর রহমান এবং মেডিকেল অফিসার ডাঃ নুরুল আলমও কর্মরত থাকেন। এদিকে প্রকল্পের অধিনে থাকা কর্মকর্তা কর্মচারীরা তাদের বেতন সরকারী করণের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রাণালয়ের বিরুদ্ধে মামলা করে। পরে মন্ত্রাণালয় ৩৯জনকে সরকারীকরণ করলেও বাকী ৭জনকে বিভিন্ন জটিলতার কারণে সরকারীকরণ হননি। কিন্তু, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সংখ্যা বৃদ্ধি এবং হাসপাতালের শয্যা বৃদ্ধি হলেও বৃদ্ধি পায়নি চিকিৎসা সেবার মান। পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তারগন প্রাইভেট চেম্বার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। ফলে স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে চরম হুমকির মুখে পেকুয়া উপজেলার হতদরিদ্র দুই লক্ষাধিক জনগণ।
সুষ্ঠ তদারকির অভাবে বর্তমান সময়ে এই হাসপাতালের ডাক্তাররা সরকারী অফিস সময়ে দায়িত্ব পালন না করে পেকুয়া সদরের চৌমুহুনী এবং পেকুয়া বাজারের বিভিন্ন ফার্মেসী কেন্দ্রীক প্রাইভেট চেম্বার ও প্রাইভেট ক্লিনিকে রোগী দেখতে ব্যস্ত সময় কাটান। এতে, পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপনার করুণ অবস্থায় পরিণত হয়েছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরকারী ওষুধ সরবরাহ না করে ঔষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের সাথে আতাঁত করে টাকার বিনিময়ে ডাক্তাররা বিভিন্ন নিম্নমানের ঔষুধ দিচ্ছেন বলে রোগীদের অভিযোগ।
হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলার কারণে একমাত্র এ্যাম্বুলেন্সটি দীর্ঘ দিন ধরে অকেজো হয়ে আছে। ড্রাইভার থাকলেও সে বর্তমানে হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করছে না।
এদিকে গত বুধবার(১৮মে) দুপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরেজমিনে পরিদর্শন করতে গেলে দেখা যায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের দীর্ঘ লাইন। তারা অপেক্ষা করছে কখন ডাক্তারের দেখা পাবে, ঔষুধ নিয়ে বাড়ি ফিরবে। রোগীদের ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায় ভর্তিকৃত রোগীরাও সকাল থেকে ডাক্তারের অপেক্ষায় রয়েছেন। সরকারী সময়ে ডাক্তাররা বিভিন্ন প্রাইভেট চেম্বারে ব্যস্ত রয়েছে বলে তাদের অভিযোগ।
রোগীদের দূর্ভোগের কথা কক্সবাজার সিভিল সার্জনকে মোবাইল ফোনে জানানো হয়।
সেবা নিতে আসা বেশ কয়েকজন রোগীর সাথে জানান, তারা সকাল সাড়ে ১০টা থেকে টিকেট নিয়ে বসে আছে। কিন্তু ১২টা পর্যন্ত কোন ডাক্তারের দেখা পায়নি। শেষ পর্যন্ত ঔষুধ না পেয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে তাদের। হাসপাতালে রেজিষ্টার খাতায় তোলা নামে বেনামের রোগী দেখিয়ে সরকারী রাজস্ব হাতিয়ে দিচ্ছে এ হাসপাতালের কর্তাবাবুরা। তারপওে মাস শেষে বেতনও তুলছেন তারা।
বর্তমান সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাসিম গ্রামগঞ্জের ডাক্তারদের মানুষের সেবা নিশ্চিত না করতে পারলে চাকুরী ছেড়ে দিতে এবং যথাযথ দায়িত্ব পালন করার জন্য নিদের্শ দিলেও সেই নির্দেশনা মানছে না পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বরত ডাক্তাররা।
টিএইচও(ভারপ্রাপ্ত) ডা: মুজিবুর রহমান কোথায় জানতে চাইলে অফিসের পিয়ন জানায় স্যার সরকারী কাজে বাইরে ব্যস্ত আছেন। উল্লেখ্য টিএইচও ডাঃ পূণ্যবর্ধন বড়–য়া অনুমতিবিহীন অনুপস্থিত(আন অথারাইজ্ড এ্যাবসেন্স) আছেন বলে জানান জেলা সিভিল সার্জনের পিএ।
এব্যাপারে কক্সবাজার জেলা সিভিল সার্জনের সাথে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ফোনে সংযোগ পাওয়া যায়নি।
পাঠকের মতামত