প্রকাশিত: ১৮/০৮/২০১৭ ১০:১১ পিএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ২:৫৬ পিএম

স্বাস্থ্য ডেস্ক::
এক বৃদ্ধা প্রতিদিন তার বাড়ির পাশের কয়েকটি পেঁপে গাছের কাছে যান আর পেঁপের ফুলগুলো ছিঁড়ে নিয়ে আসেন। সেগুলো সবজির মতো রান্না করে খান। ছোটবেলা বিষয়টি খেয়াল করতেন তার নাতি হোইনু হাউজেল। বড় হয়ে পেঁপের ফুলের রহস্য বের করতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন।

তিনি জানতে পারেন, তার দাদীর ডায়াবেটিস ছিলো। পেঁপে গাছের ফুলগুলো তার দেহে ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতো। ওই বৃদ্ধা এমন বহু জিনিস ব্যবহার করতেন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য। রোগ নিরাময়ে এসব খাদ্যের কাজ বিজ্ঞান দিয়ে ব্যাখ্যা করা কঠিন হলেও আসল ব্যাপরটি হলো, তা দারুণ কাজ করে।

তা ছাড়া পুরনো মানুষদের ব্যবহার করা এসব বহু সবজি বা প্রাকৃতিক জিনিস পরবর্তীতে আধুনিক চিকিৎসার অ্যান্টিডোট হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। হাউজেলের দাদী সারা জীবন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করেছেন এবং সুস্থভাবে বেঁচে ছিলেন। তার মায়েরও ডায়াবেটিস এবং তিনি দাদীর শেখানো খাদ্যদ্রব্যগুলো পথ্য হিসেবে খাচ্ছেন এবং দিব্যি ভালো আছেন।

এ বিষয়ে ‘নিউট্রি হেলথ’ এর মহাব্যবস্থাপক ড. শিখা শর্মা বলেন, পেঁপের ফুল বিষয়ে আমিও যথেষ্ট সচেতন। এটি আসলেই লিভারের সমস্যায় কাজ করে এবং ফুসফুসের সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। পেঁপে গাছের ফুলই নয়, পেঁপের সঙ্গে এর পাতাও কিন্তু পেকে যায়। এই তিনটি জিনিসই ভিটামিন এবং স্বাস্থ্যকর উপাদানে ভরপুর।

আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান বলে, পেঁপে গাছের ফুল ভিটামিন এ, সি এবং ই-তে পরিপূর্ণ। স্বাস্থ্যকর বিপাক ক্রিয়ার জন্য এটি ফাইবারসমৃদ্ধ খাবারও বটে। আবার এতে ফোলেট ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এমন অবস্থায় থাকে যা দেহে কোলেস্টরেলের জারণক্রিয়াকে প্রতিহত করে। এমনকি অ্যাথেরোস্কেলোসিস, স্ট্রোক এবং হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধে সরাসরি কাজ করে। হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো ও ডায়াবেটিসের মাত্রা ঠিক রাখার জাদুকরী ক্ষমতা রয়েছে এতে।

শুধু আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান নয়, পেঁপে গাছের গুণ সেই প্রাচীন মায়া সভ্যতার মানুষরাও বুঝতে পেরেছিলেন। দক্ষিণ পূর্ব মেক্সিকো এবং সেন্ট্রাল আমেরিকার কিছু অংশে ‘ট্রি অব লাইফ’ গণ্য করে পূজো দেয়া হতো পেঁপে গাছকে। এই গাছ থেকে পাতা, ফুল এবং পেঁপে খেয়ে তাদের রোগ ভালো হয়ে যেতো। তাই গাছটি সরাসরি ঈশ্বর দিয়েছেন বলে বিশ্বাস করতেন তারা। গুজব রয়েছে, এসব কারণেই ক্রিস্টোফার কলম্বাসের প্রিয় ফল ছিলো পেঁপে।

বিশেষ করে ডায়াবেটিসের রোগীরা পেঁপে ফুল খেয়ে দেখতে পারেন, এ পরামর্শ আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান দেয়। হাউজেল তার দাদীর কাছ থেকে শেখা এই ফুল রান্নার পদ্ধতিও শিখিয়ে দিচ্ছেন আপনাদের।

❏ পেঁপে ফুল যখন খাবার: এখানে পেঁপের ফুল ও পেঁপের এমন দুটো সাধারণ রেসিপি দেওয়া হলো। স্রেফ খাবার হিসেবে নয়, এগুলো রীতিমতো পথ্য হিসেবে খাওয়া হয়। প্রথমে ফুলগুলো ছিঁড়ে আনতে হবে। এরপর তার পরিষ্কার পানিতে ভালো করে ধুতে হবে। ধোয়ার পর পানি শুকিয়ে নিতেন হাউজেলের দাদী। এরপর একটি কড়াইয়ে তেল গরম করে তাতে ফুলগুলো ভাজতেন। ফুলগুলো বেশ পরিপুষ্ট এবং টাটকা চেহারার থাকে। তেলে ছাড়ার পর যখন ফুলগুলো তার পরিপুষ্টভাব হারাবে তখন চুলো নিভিয়ে দিন। এতে লবণ বা হালকা গুলমরিচ মিশিয়ে এমনিতেই খেতে পারেন অথবা ভাতের সঙ্গেও নিতে পারেন। একেবারে সাদামাটা পদ্ধতিতে রান্না করা এই খাবার ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিস্ময়কর রকমের উপকারী। এতে হালকা তেতো স্বাদ রয়েছে যা খেতে ভালো লাগে।

আরেকটি রেসিপি যা আদতে পেঁপের সালাদ বলা যায়। পেঁপে এমন একটি ফল যা কাঁচা বা পাকা উভয় অস্থাতেই সমান উপকারী। আমাদের দেশেও নানা পদ্ধতিতে এটি রান্না করা হয়। ভারতের মণিপুরী এবং থাইল্যান্ডে এই সালাদ জনপ্রিয় পথ্য।

❏ যা লাগবে

১. মাঝারি আকারের একটি কাঁচা পেঁপে

২. ২ টেবিল চামচ তিল

৩. ২-৩টি বা প্রয়োজন মতো কাঁচা মরিচ

৪. রোদে শোকানো অথবা প্রক্রিয়াজাত মাছ

৫. প্রয়োজন মতো লবণ এবং

৬. প্রয়োজন মতো ধনের পাতা।

এটি তৈরির পদ্ধতি একেবারে সহজ। পেঁপে ছিলে নিয়ে পানিতে বার বার ধুয়ে নিন। ছোট ছোট স্টাইস করুন। মরিচ এবং মাছ বেঁটে নিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্টে লবণ ও তিল মিশিয়ে নিন। এবার একটি গামলায় সব মিশিয়ে নিয়ে সালাদটি উপভোগ করুন।

পাঠকের মতামত

উখিয়ায় জামায়াতের সহযোগী সম্মেলনে জেলা আমীর আনোয়ারী সন্ত্রাসমুক্ত শান্তির বাংলাদেশ গড়তে ইসলামের বিকল্প নেই

গত ৫ আগস্টের বিপ্লবের মাধ্যমে আমরা যে নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি, সেই নতুন বাংলাদেশের মানুষ নতুন ...

পর্যটকে মুখরিত ইনানী সৈকত

একদিকে পর্যটন মৌসুম, অন্যদিকে মহান বিজয়ের মাস। তাই পর্যটক বেড়েছে কক্সবাজার, ইনানী ও পাটোয়ারটেক সৈকতে। ...

কক্সবাজারে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ২০২৪ উপলক্ষে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বক্তারা কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর তাগিদ

নারী সহায়ক কর্মপরিবেশ তৈরি করে কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এর পাশাপাশি বৈষম্যহীন ...