ডেস্ক রিপোর্ট:
সুশাসন, উন্নয়ন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, পরিবেশ রক্ষা, ব্যবসার প্রসার, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দূর, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ, নারী উন্নয়ন নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসকদেরকে ২৩ টি নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এসব নির্দেশনা মানলে সারা দেশে সুষম উন্নয়ন হবে বলে মনে করেন সরকার প্রধান।
মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জেলা প্রশাসক সম্মেলন উদ্বোধনের আগে দেয়া বক্তব্য এসব নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। এর বাইরেও নিজ নিজ জেলার সমস্যা বিবেচনা করে সমাধানের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি জনগণের সেবার মনোভাব নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানান।
বন্যায় নদী ভাঙায় গৃহহারাদের তালিকা করে তাদের বাড়ি করে দিতেও নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, বাংলাদেশে একটি মানুষও গৃহহারা থাকবে না। সরকারের খাস জমি আছে, আশ্রয়ণসহ বিভিন্ন প্রকল্প আছে। এসব প্রকল্পে এদের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিতে হবে।
সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের শাপলা হলে এই সম্মেলন শুরু হয়। তিন দিনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারা ১৮টি কার্য অধিবেশনে ডিসিদের সঙ্গে মতবিনিময় করে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেবেন। অনুষ্ঠানে মন্ত্রিসভার সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিব, বিভাগীয় কমিশনারসহ সংশ্লিষ্ট উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত আছেন।
তিন দিনের এই জেলা প্রশাসক সম্মেলন ২২টি অধিবেশনে সাজানো হয়েছে। এবারের সম্মেলনে ৩৪৯টি প্রস্তাব দিয়েছেন ডিসিরা। এর মধ্যে কার্য-অধিবেশন হবে ১৮টি। এই ১৮টি কার্য-অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ মোট অংশ নেবে ৫২টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ।
যেসব নির্দেশনা দিয়েছেন
১. সরকার সেবা গ্রহণে সাধারণ মানুষ যেন কোনোভাবে হয়রানি বা বঞ্চনার শিকার না হয়।
২. তৃণমূল পর্যায়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জনপ্রতিনিধিনের সঙ্গে একাত্ম হয়ে কাজ করতে হবে।
৩. গ্রামীণ অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করে নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। মানুষ যেন শহরমুখী না হয়, শহরে যেন মানুষের চাপ না বাড়ে, সে ব্যবস্থা করতে হবে।
৪. গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, সম্ভাবনাময় গ্রামীণ অবকাঠামো বিকাশ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনে উদ্যোগী হতে হবে।
৫. ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য কমাতে উন্নয়ন কর্মসূচি এমনভাবে গ্রহণ করতে হবে যাতে সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ উপকৃত হয়। বৈষম্য দূরীকরণে সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করতে হবে।
৬. জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা দূর করে সমাজ জীবনের সব ক্ষেত্রে শান্তি শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার লক্ষ্যে আরও সতর্কতার সঙ্গে এবং কঠোরভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
৭. জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস নির্মূলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষক, মসজিদের ইমাম, স্থানীয় মুরুব্বি, স্থানীয় ব্যবসায়ী, নারী সংগঠন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গ্রাম পুলিশ, এনজিও কর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষকে এক করে সম্পৃক্ত করতে হবে যাতে করে একটা জনসচেতনতা গড়ে উঠে।
৮. প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কল্যাণে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। প্রতিবন্ধী, বিধবা, মুক্তিযোদ্ধা, বয়স্ক ভাতা সঠিক মানুষের কাছে যেন পৌঁছায়, সে দিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।
৯. সাধারণ মানুষদের সুবিচার নিশ্চিত করতে গ্রাম আদালতকে আরও কার্যকর করতে হবে।
১০. জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছাতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়ন ও বিকাশে নেতৃত্ব দিতে হবে।
১১. শিক্ষার সর্বস্তরে নারী শিক্ষার হার বৃদ্ধি এবং ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদেরকে ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নিতে হবে।
১২. ভূমি প্রশাসন এবং ব্যবস্থাপনায় সচেতনতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি এবং সরকারি ভূমি রক্ষায় আরও সচেতন হতে হবে।
১৩. কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে সার, বীজ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ইত্যাদি সরবরাহ নির্বিঘ্ন করতে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা নিতে হবে। পরিবেশবান্ধন কৃষি ব্যবস্থাপনাকে জনপ্রিয় করতে উদ্যোগী হতে হবে।
১৪. ভেজাল খাদ্যদ্রব্য বাজারজাত প্রতিরোধে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টি করে এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ড কঠোর হস্তে দমন করতে হবে।
১৫. সপ্তম কর্মবার্ষিকী পরিকল্পনা এবং এসডিজি বাস্তবায়নে মেধা দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
১৬. প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিপর্যয় প্রসমনে সঠিক সময় সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। পরিবেশ রক্ষার জন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং এই সংক্রান্ত আইন ও বিধি বিধানের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
১৭. শিল্পাঞ্চলের শান্তি রক্ষা, পণ্য পরিবহন ও আমদানি-রপ্তানি নির্বিঘ্ন করা এবং পেশীশক্তি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাস নির্মুল করতে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
১৮. ভোক্তা অধিকারকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে। বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির যে কোনো অপচেষ্টা কঠোর হস্তে দমন করতে হবে।
১৯. নারী উন্নয়ন নীতির সুষ্ঠ বাস্তবায়ন করতে হবে। নারীর প্রতি সহনশীলতা নীপিড়ন ও বৈষম্যমূলক আচরণ বন্ধ এবং নারী ও শিশু পাচার রোধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
২০. শিশু, কিশোরদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের লক্ষ্যে শিক্ষা, ক্রীড়া, বিনোদন এবং সৃজনশীল এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। শিশু কিশোরদের মধ্যে ইতিহাসের চেতনা, জ্ঞানস্পৃহা ও বিজ্ঞান মনস্কতা জাগিয়ে তুলতে হবে।
২১. কঠোরভাবে মাদক ব্যবসা, মাদক চোরাচালান এবং এর অপব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
২২. ভূমি প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনায় সচেতনতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি করে সরকারি ভূমি রক্ষায় সজাগ হতে হবে।
২৩. পার্বত্য জেলাগুলোর উন্নয়ন তরান্বিত করার পাশাপাশি ভূপ্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করতে হবে। পর্যটন শিল্প, মাঝারি শিল্প এবং কুটির শিল্পের বিকাশে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করতে হবে।
এই ২৩ দফা নির্দেশনার বাইরেও জেলা প্রশাসকদেরকে সৃজনশীল চিন্তা ভাবনা করার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘এর বাইরেও আপনারা একেক জেলার দায়িত্বে আছেন। সেই সেই জেলার সমস্যাটা কী, সমাধানের উপায় কী এবং সম্ভাবনার সুযোগটা কী-এটাও আপনারা খুঁজে বের করতে পারবেন। এ বিষয়ে আপনাদের চিন্তাভাবনা থাকবে এটা আমরা আশা করি।’