নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে হয়রানি না করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেন, নির্বাচনের মাঠে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপারদের (এসপি) দলীয় কর্মী হিসেবে নয়, সরকারি কর্মচারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। এবার নির্বাচন কমিশন (ইসি) শক্ত অবস্থানে থাকবে। ডিসি-এসপিদের সঙ্গে বৈঠকে কমিশন এ বার্তা দিয়েছে।
শনিবার (৮ অক্টোবর) জেলা পরিষদ ও অন্যান্য নির্বাচন নিয়ে ৬৪ জেলার ডিসি ও এসপির সঙ্গে বৈঠকে এমন নির্দেশনা দেয় কমিশন। বৈঠকে উঠে আসে জাতীয় নির্বাচনের কথাও। প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষ থেকে কিছু পরামর্শসহ সার্বিক সহায়তার আশ্বাস দেয়া হয়। বৈঠক শেষে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল ও জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব সাংবাদিকদের এ বিষয়ে ব্রিফ করেন।
সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাই। সেই সঙ্গে তাদের (ডিসি-এসপি) গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দিয়েছি, দলনিরপেক্ষ হয়ে কাজ করতে হবে। আমরা আশা করি নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকলে নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না।’
কর্মকর্তাদের দেয়া নির্দেশনার কথা তুলে ধরে সিইসি বলেন, ‘আপনারা আচরণে এমন কিছু করবেন না, যাতে সাধারণ জনগণ মনে করতে পারে আপনারা পক্ষপাতদুষ্ট। আপনারা দলনিরপেক্ষ নন। আপনাদের অবশ্যই দলনিরপেক্ষ হয়ে কাজ করতে হবে। গণকর্মচারী হিসেবে আপনাদের সরকার ও রাজনৈতিক দলের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে হবে। কর্মে কখনো নিজেদের দলীয় কর্মী ভাববেন না বা মনে করবেন না। আপনাদের আচরণে এমন কিছু যেন প্রতিফলিত না হয় যেন জনগণ মনে করে আপনারা কোনো দলের পক্ষ হয়ে কাজ করছেন।’
হাবিবুল আউয়াল জানান, বৈঠকে ডিসি-এসপিরা কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। তারা বলেছেন, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) বিষয়ে প্রচুর ‘ভোটার এডুকেশন’ দরকার। অনেকে প্রযুক্তি ভয় পান। এ কারণে অনেকে ইভিএম নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালানোর পরামর্শ দিয়েছেন। এ ছাড়া বেশিসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী মোতায়েনের স্বার্থে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা কমিয়ে বুথ (ভোটকক্ষ) বাড়িয়ে দেয়ার বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে প্রস্তাব এসেছে। নির্বাচন কমিশন মাঠ প্রশাসনের এই প্রস্তাব বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছে।
সিইসি বলেন, সংসদ নির্বাচন নিয়ে পক্ষ-বিপক্ষ অবস্থানের কারণে বিভাজন রয়েছে। ইসি আশা করে রাজনৈতিক নেতৃত্ব তাদের সদিচ্ছা, প্রজ্ঞা দিয়ে রাজনৈতিক সমস্যাগুলোর সমাধান করবে। এটি কমিশনের কাজ নয়। রাজনৈতিক বিষয়ে ইসি অনুপ্রবেশ করতে পারে না। রাজনৈতিক সমস্যা রাজনীতিকদের সমাধান করতে হবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, জেলা ও পুলিশ প্রশাসন নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে চেষ্টা করে। সংসদীয় ব্যবস্থা এমন যে সরকার ও দল আলাদা করা অনেক সময় কষ্টকর। অনেক সময় অলক্ষে প্রভাব চলে আসতে পারে। তবে নির্বাচন কমিশন এবার শক্ত অবস্থানে থাকবে। আচরণবিধি মেনে গণকর্মচারী হিসেবে অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে হবে। দলীয় কর্মী হিসেবে নয়, সরকারি কর্মচারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। ইসি সেটা পর্যবেক্ষণ করবে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, নির্বাচনের সময় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও এর অধীন বাহিনীগুলো আছে, প্রয়োজনে সেনাবাহিনীরও প্রয়োজন হতে পারে। নির্বাচনের সঙ্গে যাদের সংশ্লিষ্টতা আছে তারা ইসির অধীন থাকবে। ইসির যেকোনো নির্দেশনা মানতে তারা বাধ্য থাকবে।