দেশের সবচেয়ে দীর্ঘ রানওয়ে হতে যাচ্ছে কক্সবাজার বিমানবন্দরে। রানওয়ে সম্প্রসারণের কাজ প্রায় ৯৫ শতাংশ শেষ। সমুদ্রগর্ভে দৃশ্যমান হয়ে উঠছে রানওয়ে। আগামী ডিসেম্বরে সাগরের নীল জল ছুঁয়ে রানওয়েতে নামবে উড়োজাহাজ।
তবে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ঘোষণায় পড়েছে বাধা। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘কক্সবাজার বিমানবন্দরের দ্বিতীয় লেয়ারের কার্পেটিংয়ের কাজ বাকি আছে এখনো। তবে সমুদ্রবক্ষে রানওয়ে সম্প্রসারণের কাজ শেষ। বর্ষা মৌসুম শেষে শীত এলে কার্পেটিং কাজ করা হবে।
ডিসেম্বরের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হবে। ’ তিনি আরও বলেন, ‘তবে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ঘোষণা করতে দেরি হবে, এ ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা আছে। বিমানবন্দর এলাকার ভিতরে এখনো বেশ কিছু স্থাপনা রয়েছে যেগুলো সরাতে হবে। বেশকিছু জায়গা বেদখল রয়েছে।
এগুলো সমাধান না করে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ঘোষণা করা সম্ভব নয়। এজন্য স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা প্রয়োজন। যত দ্রুত এসব সমাধান করা যাবে তত দ্রুত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ঘোষণা করা সম্ভব। ’ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজার বিমানবন্দরের ৯ হাজার ফুটের এই রানওয়েকে ১০ হাজার ৭০০ ফুটে উন্নীত করা হচ্ছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৭০০ ফুট থাকছে সমুদ্রবক্ষে।
সমুদ্রের বুক ছুঁয়ে এই রানওয়েতে ওঠানামা করবে উড়োজাহাজ। এরই মধ্যে সাগরগর্ভে দৃশ্যমান সুদীর্ঘ রানওয়ে। রানওয়ে সম্প্রসারণের অগ্রগতি ৯৫ শতাংশ। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এ প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শেষ হবে। রানওয়ে পরিষেবা চালু হলে বোয়িং ৭৭৭ এবং বোয়িং ৭৪৭-এর মতো বড় উড়োজাহাজগুলো কক্সবাজার বিমানবন্দরে অবতরণ করতে সক্ষম হবে বলে জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কর্মকর্তারা। পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সম্প্রসারণ কাজ শেষ হলে দেশের সর্ববৃহৎ রানওয়ে পরিণত হবে কক্সবাজার বিমানবন্দর। ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ও আকাশপথে যোগাযোগের উন্নতির পাশাপাশি পর্যটনশিল্পে আমূল পরিবর্তন ঘটবে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, কক্সবাজার বিমানবন্দরে রানওয়ে সম্প্রসারণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৭০৯ কোটি ৬০ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। তবে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় আরও এক বছর বাড়িয়ে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত হয়েছে। ব্যয় বাড়ানো হয়েছে ১ হাজার ৭৯৪ কোটি ৩০ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত এপ্রিল পর্যন্ত সম্পূর্ণ প্রকল্পের অগ্রগতি ৮০ দশমিক ৪৩ শতাংশ। চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত ঠিকাদারি কাজের বাস্তব অগ্রগতি ৮২ দশমিক ৯৫ শতাংশ। কক্সবাজার বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. ইউনুস ভূঁইয়া বলেন, প্রকল্পের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। আশা করছি, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। আর এটি পুরোপুরি হয়ে গেলে দেশের সর্ববৃহৎ রানওয়ে হিসেবে কক্সবাজারকে বহির্বিশ্বে পরিচিত করে তুলবে। এ ছাড়া আগামী ২০ বছরের মাস্টারপ্ল্যান হিসাব করলে বদলে যাবে কক্সবাজার বিমানবন্দর। কক্সবাজার বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক গোলাম মোর্তজা হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা উড়োজাহাজের শিডিউল বৃদ্ধি করেছি। বর্তমানে কক্সবাজার বিমানবন্দরে প্রতিদিন গড়ে ২৫-৩০টি যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ ও ছয় থেকে আটটি কার্গো উড়োজাহাজ ওঠানামা করছে। রাতে উড়োজাহাজ ওঠানামার জন্যও বিমানবন্দর প্রায় প্রস্তুত রয়েছে। সমুদ্রগর্ভে আরও লাইটিং সিস্টেম স্থাপনের কাজ চলছে। ’ ১৯৫৬ সালে একটি অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর হিসেবে যাত্রা শুরু করে কক্সবাজার বিমানবন্দর। চারটি এয়ারলাইনস এখন এ বিমানবন্দরে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালনা করে; যেটি কক্সবাজার শহর থেকে দেড় কিলোমিটার এবং ঢাকা থেকে ৩৯৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। প্রথম পর্যায়ে রানওয়েটি ৬ হাজার ৭৭৫ ফুট থেকে ৯ হাজার ফুট এবং ১২০ ফুট থেকে ২০০ ফুট প্রশস্ত করা হয়েছিল। ২০১৯ সালে সরকার ১ হাজার ৫৬৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেয়। যার লক্ষ্য ছিল বিমানবন্দরটিকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা এবং বিদেশি পর্যটকদের জন্য বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতে নির্ঝঞ্ঝাট ভ্রমণের সুযোগ করে দেওয়া।