[caption id="attachment_3445" align="alignleft" width="532"] ড.মনওয়ার সাগরের সাথে খায়রুল আলম ।[/caption]
::একান্ত সাক্ষাৎকারে ড.মনওয়ার সাগর ::
সমকালীন বাংলা সাহিত্যকে যাঁরা অতুলনীয় উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তাদের মধ্যে ড.মনওয়ার সাগর এর নাম উচ্চারন করা যায়।তিনি একজন মুক্তচিন্তক, সমাজসচেতন, বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ।পড়াশোনার পরিধি ও প্রজ্ঞার কারণে তাঁর এক কিংবদন্তি ইমেজ গড়ে ওঠে।তিনি বি এস এস (অনার্স), এম বি এ, ইংরেজী সাহিত্যে এম এ, এল এল বি এবং সর্বশেষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড.জাহিদুল ইসলাম এর সুপারভিশনে ‘ গুড গভার্নেন্স,লিডারশীপ এন্ড ডেমোক্রেসি ইন বাংলাদেশ’ বিষয়ে পি এইচ ডি ডিগ্রী অর্জন করেছেন। সম্প্রতি তাঁর জীবন ও সাহিত্য নিয়ে বের হয়েছে ‘পঞ্চাশ ছুয়েছে মনওয়ার সাগর’। গ্রন্থটি ইতোমধ্যেই বেশ সমাদৃত হয়েছে।
বিভিন্ন লাইব্রেরীর পাঠকদের জন্য লাইব্রেরীর সংগ্রহ শালায় এই গ্রন্থ রাখা হয়েছে।এছাড়াও ঢাকার ‘পাঠক সমাবেশ’,চট্টগ্রামের ‘বাতি ঘর’ ‘অমর বই ঘর’সহ বাংলাদেশের বড় বড় বই এর বিপনিতেও পাওয়া যায়।উত্তর আধুনিক কালের লেখকদের মধ্যে যিনি শব্দচয়নে, জীবনবোধে, শব্দালংকারের নান্দনিকতায়, বর্ণনায় অসামান্য আর ধ্রুপদী, তাদের মধ্যেও ড.মনওয়ার সাগর এর নাম উচ্চারন করা যায়। তাঁর বড়ত্ব তাঁর নিজস্ব বাকরীতি প্রবর্তনে এবং অদ্ভুত সুন্দর চিত্রকল্প নির্মানে। তাঁর কবিতায় উপমার যেই নান্দনিক ব্যবহার করেছেন, তা বাংলা কবিতার জগতকে দিয়েছে নতুন মাত্রা। দেশজ চেতনা, লোককাহিনী আর ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর সৌন্দর্যে আপ্লুত মনওয়ার সাগর একজন মিথলজিক্যাল রোমান্টিক কবি। তাঁর প্রবন্ধে ফুটিয়ে তুলেছেন স্রষ্টার বিশ্বাসে আলোকিত চেতনার আবেগ। স্রষ্টার সৌন্দর্যের পিয়াসী তিনি;তাঁর বিভিন্ন সাক্ষাৎকারেও এ সত্যটি ফুটে উঠেছে।
তাঁর ‘চন্দ্রা উপাখ্যান’ বইটি আলোর মুখ দেখার পরপরই লেখক সমাজে তাঁর আসন সুদৃঢ় হয় প্রধানত দুটি কারণে; এর একটি হচ্ছে নব্বই দশকের সমাজ ও কালচেতনার লক্ষণ এতে স্পষ্ট, যেখানে মাটি, মানুষ নিসর্গ আর মুক্তিযুদ্ধকে একাকার করে দেখার প্রবণতা বড় হয়ে উঠেছে, সাম্প্রদায়িক চিত্র বাস্তবতার নিরিখে তুলে ধরা হয়েছে।আর একটি হচ্ছে বিষয় ও প্রকরণের সরলতা। মূলত আশির দশকের শুভলগ্নেই স্বতন্ত্র মেজাজ আর রুচি নিয়ে উপস্থিত হন মনওয়ার সাগর; অত্যন্ত পরিশীলিত তাঁর প্রকাশভঙ্গি। আশির সাহিত্যগুণ ও বৈশিষ্ট্য তাঁকে এগিয়ে নিয়ে গেছে নব্বই দশক থেকে আজ অবধি। তবে এ সময়ে তাঁর কবিতায় চরিত্রের রূপান্তরও ঘটে সময়ের সঙ্গে তাল রেখে।
বলা যায়, সময়কে ধারণ করার এক ঈর্ষণীয় ক্ষমতা রয়েছে তাঁর। দীর্ঘ প্রায় দুই দশকের ওপর তিনি কবিতা,উপন্যাস,প্রবন্ধ,নিবন্ধ লিখেছেন, চলমান সময়ের সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রেখে লেখার ভঙ্গি বদলেছেন, বলার বিষয়ে এনেছেন নতুন আদল, কবিতার শরীর থেকে বিষয়কে আড়াল করার চেষ্টা করেছেন। উপন্যাস লেখার আগে মনের নান্দনিক কল্পজগতে মূল চরিত্রের ছবি এঁকেছেন প্রতীক আর চিত্রকল্পের মিশেল দিয়ে। সেখানেও দেখি মাত্রা ,ছন্দ, রংয়ের তরতাজা খেলা; লাল, নীল, সবুজ, হলুদের বিচিত্র আয়োজন। পাঠক একবার সেই রংয়ের স্বাদ নিতে পারলে তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয় না, নানান অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে শুধু এগিয়ে যাওয়ার পালা।এভাবেই মনওয়ার সাগর ক্রমশঃ এগিয়ে গেছেন ,সাহিত্যে আশ্চর্য এক মুগ্ধতা তৈরি করেছেন।
ফোন করে সময় নিয়েছি শুক্রবার সাক্ষাৎকারের, শুরু হয় উন্মুখ অপেক্ষার পালা।খুব ব্যাস্ত থাকেন তিনি,অফিস,সাহিত্য কর্ম,সংসার,সামাজিকতা,সমাজ সেবা সব কিছুকেই রাজসিক ব্যক্তিত্ব নিয়ে শুদ্ধচারী মানুষের মত সামাল দেন তিনি।অবশেষে তাঁর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দক্ষিণ ক্যাম্পাসে গিয়ে হাজির হলাম।কলিং বেলে টুং টাং শব্দ হতেই দরজা খুলে দিলেন তাঁর স্ত্রী শামীমা আক্তার জেনী।হাসিমুখে কেমন আছো জিজ্ঞেস করেই ড্রইং রুমে নিয়ে বসালেন।অসাধারন প্রাণবন্ত এ মহিয়সি নারী আমাদের অল্পসময়েই স্নেহস্বরে মুগ্ধ করলেন।বিনম্র শ্রদ্ধা রইল মহিয়সি এ রমণীর জন্য।দু মিনিট পরেই এলেন ড.মনওয়ার সাগর।মুখণ্ডলে দাড়ি, উজ্জল বর্ণের ব্যাক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষ তিনি।
প্রথমেই জানতে চেয়েছিলাম কেমন আছেন?
উত্তর একটাই –ভালোই,চলছে দিন চলার মত।
খায়রুলঃ –কেন লিখছেন?
উত্তর একটাই অন্তর্গত প্রশান্তির জন্য।
খায়রুলঃ আত্মজীবনী লিখেছেন?
মনওয়ার সাগরঃ হা হা হা,সে সময় হয়নি এখনো।কোথায় যেন পড়েছি, রবীন্দ্রনাথ শরৎচন্দ্রকে একবার বলেছিলেন একখানা আত্মজীবনী লিখতে। শরৎচন্দ্র পরে বাইরে নাকি বলেছিলেন, জানলে জীবন অন্যভাবে কাটাতেন তিনি।
আসলে জীবন কখনোই অন্যভাবে কাটানো যায় না। সৎ চিন্তা, সৎ কর্ম, সৎ গ্রন্থ পাঠ, সৎ জীবন এসব উপদেশ মাত্র কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন।ভবিষ্যত কিভাবে কাটবে সেটা আগে থেকে বলা যায়না,যেমন ধরো এমন নির্জন রাস্তায় হাঁটছি আমি, যে রকম নির্জনতায় কখনও হাঁটতে চায়নি! এমন কুয়াশার মধ্যে কখনও কখনও হারিয়ে গেছি, অল্প কিছু সময় আগেও হয়তো সে বিষয়টা জানতাম না। সেই কুয়াশার স্বরূপ সম্পর্কেও আমার কোনো পূর্বধারণা ছিল না।
গার্সিয়া মার্কেস তার লিভিং টু টেল দি টেইল গ্রন্থের উৎসর্গ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, একজন মানুষ বেঁচে ছিল, তা তার জীবনী।সে বিবেচনায় আমার সাহিত্য কর্ম যদি বেঁচে থাকে তবে সেটাই হবে আমার আত্মজীবনী। কিন্তু আমি মনে করি জীবনকে সে যেভাবে স্মরণ করে এবং যেভাবে সে অনুপুঙ্খ করার জন্য স্মরণ করে, তাই তার জীবনী।
খায়রুলঃ এবারতো পঞ্চাশ ছুঁয়েছেন,কেমন বাংলাদেশ আপনি দেখতে চান?
মনওয়ার সাগরঃএকটি সুখী,সমৃদ্ধ সার্বভৌম, শান্তিময়,অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ দেখতে চাই
খায়রুলঃ গল্প, কবিতা,উপন্যাস,প্রবন্ধ-নিবন্ধ,কলাম, আত্মজৈবনিক—কোন শাখায় লিখতে আপনি বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, কেন?
মনওয়ার সাগরঃ আসলে সব শাখাতেই আমার বিচরন,শুরুটা ছিল কবিতা দিয়ে,এরপর লিখি উপন্যাস,অবশেষে আত্মজৈবনিক উপন্যাসও লিখি,এখন প্রবন্ধ লিখছি বেশ,তবে শেষ পর্যন্ত কথাসাহিত্যে স্থির থাকার ইচ্ছা আছে।দেখা যাক কী হয়।
খায়রুলঃলেখক হওয়ার ক্ষেত্রে আস্তিকতা বা নাস্তিকতা কতটা জরুরি?
মনওয়ার সাগরঃআমি বিশ্বাসী মানুষ,আল্লাহ ও আল্লাহর নবীকে বিশ্বাস করি।কথায় বলে বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর।
খায়রুলঃ সাহিত্য ছাড়াও জীবনের বিভিন্ন শাখায় আপনার বিচরন। তাই আজ সাহিত্যের বাইরে কিছু প্রশ্ন করতে চাই,আপনার আপত্তি আছে স্যার?
মনওয়ার সাগরঃ আমি মূলত সাহিত্যের মানুষ,তবে একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে অন্য শাখায়যে বিচরণ নেই তা বলবোনা,তুমি প্রশ্ন করতে পার।
খায়রুলঃ আপনি তো আইন বিষয় নিয়েও পড়াশুনা করেছেন,যদি প্রশ্ন করি দেশের মানুষ আইন মানছেনা কেন,তবে উত্তর কি দেবেন?
মনওয়ার সাগরঃ আমাদের দেশে আইন প্রণয়ন যতটা না নাগরিকের মৌলিক অধিকার বিকাশের উদ্দেশ্যে করা হয়, তার চেয়েও বেশি হয় জনসাধারননে নিয়ন্ত্রণের জন্য,বিশেষ করে বিরোধী মতকে। ফলে নাগরিকদের মধ্যেও আইন মেনে চলার সংস্কৃতি সেভাবে বিকাশ ঘটছে না। নব্বই-পরবর্তী নির্বাচনিক স্বৈরতন্ত্র চালু থাকার কারণে নাগরিকের মত প্রকাশের অধিকার ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়েছে, যা মূলত বিভিন্নভাবে স্বৈরতন্ত্র বিকাশের সহায়ক হয়েছে। আমাদের নিবর্তনমূলক আইনের বিপরীতে একমাত্র রক্ষাকবচ হলো সংবিধান। কিন্তু সম্প্রচার নীতিমালায় খুব কৌশলে এমন সব ব্যাখ্যা হাজির করা হয়েছে, যার মাধ্যমে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা প্রতিপালনের ব্যর্থ চেষ্টা পরিলক্ষিত হয়। আমাদের অবস্থা এখন পুলিশের হাতে মার খেয়ে পুলিশের কাছে নিরাপত্তা চাওয়ার মতো।
খায়রুলঃ আইনের ছাত্র হিসেবে জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কি?
মনওয়ার সাগরঃ ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দুকূল রক্ষা করা হয়েছে।ইতিবাচক দিক হলো ৬.১.১-এ একটি স্বাধীন সম্প্রচার কমিশন গঠনের কথা বলা হয়েছে।নেতিবাচক অনেক দিক রয়েছে ,সব বিশ্লেষন করা এ মুহুর্ত্বে সম্ভব নয়।তবে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে –
সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদ আমাদের চিন্তা, বিবেক ও বাক স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দিয়েছে। সম্প্রচার নীতিমালার বিভিন্ন অনুচ্ছেদে এর হুবহু প্রয়োগ দেখা যায়। ৩৯ অনুচ্ছেদ থেকে দেখা যায়, বাক স্বাধীনতা কোনো অবারিত স্বাধীনতা নয়, এখানে কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে আইন দ্বারা যুক্তিসঙ্গত বাধা-নিষেধ আরোপের সুযোগ রাখা হয়েছে। এখন প্রশ্ন হলো, এই যুক্তিসঙ্গত বাধা-নিষেধ কে নির্ধারণ করবে? যখন যে সরকার ক্ষমতায় থাকবে, সেই সরকারের কাছে যা যুক্তিসঙ্গত মনে হবে, সেইমতে বাধা-নিষেধ আরোপ করা হবে। এখানেই ক্ষমতার অপব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে এবং এই সুযোগে নতুন নতুন নিবর্তনমূলক আইন প্রণয়নের পথ তৈরি হয়েছে। সম্প্রচার নীতিমালায় যেসব বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা আদৌ যুক্তিসঙ্গত কিনা, সে প্রশ্ন থেকেই যায়। তাছাড়া রাষ্ট্রের নিরাপত্তা সব সময়ই নিবর্তনমূলক আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে একটি মোক্ষম হাতিয়ার।
নীতিমালার তৃতীয় অধ্যায়ে সংবাদ ও তথ্যমূলক অনুষ্ঠান সম্পর্কে বলা হয়েছে। অনুচ্ছেদ ৩.২.১ অনুসারে অনুষ্ঠানে সরাসরি বা বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে কোনোভাবেই দেশবিরোধী ও জনস্বার্থবিরোধী বক্তব্য প্রচার করা যাবে না। কিন্তু নীতিমালার কোথাও কোন বক্তব্যকে দেশবিরোধী বা জনস্বার্থবিরোধী বলা হবে তা ব্যাখ্যা করা হয়নি।
অনুচ্ছেদ ৩.৬.৭-এ বলা হয়েছে, দেশী ও বিদেশী ছবি/অনুষ্ঠানে অশ্লীল দৃশ্য, হিংসাত্মক, সন্ত্রাসমূলক এবং দেশীয় সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের পরিপন্থী কোনো অনুষ্ঠান প্রচার করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। এটি একটি দ্বৈত নীতি। দেশে ক্যাবল চ্যানেলের মাধ্যমে অসংখ্য বিদেশী চ্যানেল সরাসরি অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে। সেগুলো দেশীয় আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। অথচ একই ছবি বা তথ্য সম্প্রচার করলে দেশী চ্যানেলগুলো আইনভঙ্গের আওতায় পড়বে। তাছাড়া কোন দৃশ্যকে অশ্লীল বলা হবে তা সুনির্দিষ্ট করে বলা হয়নি। ফলে কোনো চ্যানেলের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে চাইলে এই একটি অনুচ্ছেদই যথেষ্ট।
খায়রুলঃ ডিজিটাল বাংলাদেশ বা প্রযুক্তির উন্নয়ন সম্পর্কে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন।
মনওয়ার সাগরঃ জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা এবং পেশাদার বিবেচনার সাথে বৃহত্তর জনমতের ঘনিষ্ট যোগাযোগ নিশ্চিত করা যে কোন উন্নয়নকামী সমাজের উদ্দেশ্য। সে বিবেচনায় বাংলাদেশে আওয়ামী-লীগ সরকারের সময়ে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন চোখে পড়ার মত, কিন্তু প্রযুক্তি মানুষের কল্যানে কতটা কার্যকর হবে তা সমাজের ভূমিকার উপর বহুলাংশে নির্ভর করে। যত্নবান না হলে প্রযুক্তি মানুষের কল্যাণ সাধন না করে ক্ষতির কারনও হতে পারে। ফলে জ্ঞানচর্চায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিবর্গের কঠোর পরিশ্রমের সুফল সমাজের কাছে পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে বৃহত্তর পরিসরে প্রযুক্তিকে মূল্যায়ন করার প্রয়োজন পড়ে। একই সাথে জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা যাতে করে সমাজ থেকে অনুপ্রেরণা গ্রহণ করতে পারে সেটাও নিশ্চিত হওয়া দরকার।
খায়রুলঃ আপনাদের সময়তো ছাত্র সংসদ ছিল,ডাকসু চাকসু নির্বাচনকে ঘিরে ছাত্র রাজনীতি জমজমাট ছিল, এখন তা নেই,বিষয়টিকে কিভাবে দেখছেন?
তুমি আমার ছাত্র জীবনের আবেগটাকে নেড়ে দিলে।এবারতো কথা অনেক বেড়ে যাবে। একসময় ছাত্র রাজনীতির সাথে আমারও ওতপ্রোত বন্ধন ছিল,আমাদের সময়ের রাজনীতিতে মেধা ও মননের চর্চা ছিল,যা এখন নেই।
এর মূল কারন ছাত্র সংসদ নির্বাচন না থাকা। ছাত্র সংসদগুলোকে বিরাজনীতিকরণ চিন্তা থেকেই মূলত ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ। কেননা ছাত্র সংসদ থাকলেই ছাত্রদের অধিকার ও সুযোগ – সুবিধার প্রশ্নকে ভিত্তি করে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ,ব্যবস্থা ইত্যাদি প্রসঙ্গ আসবেই। ফলে শাসকগোষ্ঠীর একাংশের ভয় এখানেই।
বর্তমানে ছাত্র রাজনীতি প্রধান দুইটি রাজনৈতিক দলে ক্ষমতায় অধিষ্ঠানের হাতিয়ার হিসেবে বিবেচনার পাশাপাশি অর্থনৈতিক ও কায়েমী স্বার্থ আদায়ের উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। টেন্ডারবাজি, ক্যাডার বাহিনীর মাধ্যমে চাঁদাবাজি হাইজ্যাক সহ বিভিন্ন অপরাধ মূলক কাজের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করা সম্ভব হচ্ছে।ছাত্র সংসদ থাকলে এসব হতোনা।
আমি ব্যাক্তিগতভাবে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের পক্ষে। কারন নির্বাচিত ছাত্র সংসদের কিছু দায়বদ্ধতা থাকে,ক্রিয়েটিবিটি থাকে। যেমন ধরো-অধ্যাদেশ অনুযায়ী ডাকসু ৪ টি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য আছে। যেমন ধরো-শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা ত্বরান্বিত করা, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে একাডেমিক ও একাডেমির বাইরের বিষয়ে সর্বোচ্চ সুবিধা অজর্ন করা; নেতৃত্ব বিকাশে এবং সত্যিকারের নাগরিক হিসেবে শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করা; বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং দেশ বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সধ্যে সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের সুযোগ ত্বরান্বিত করা।
এই চারটি উদ্দেশ্য ছাড়াও ডাকসুর কার্যাবলিতে আছে বছরে কমপক্ষে একটি জার্নাল বের করা। বুলেটিন, পত্রিকা, ম্যাগাজিন প্রকাশ করা। নিয়মিত বিতর্কের আয়োজন করা, সাধারণ এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে বক্তৃতার আয়োজন করে ছাত্র জমায়েত করা। সদস্যদের মধ্যে বিতর্ক, বক্তৃতা, আবৃত্তি, রচনা লিখন, খেলাধুলার প্রতিযোগিতার আয়োজন করা ছাড়াও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েরর শিক্ষার্থীদের এসব প্রতিযোগিতার আহ্বান করা, শিক্ষা বিষয়ক কনফারেন্সের আয়োজন করা, সমাজসেবামূলক কাজের স্পৃহা বজায় রাখাসহ নানাবিধ সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের আয়োজন করা। কিন্তু ডাকসু বন্ধ থাকায় এসব কর্মকাণ্ড থেমে আছে। এখন আর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মেধাভিত্তিক রাজনীতি চর্চা হয়না।
এছাড়াও ডাকসু নির্বাচন বন্ধ থাকার কারণে সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষমতা কাঠামোর সর্বোচ্চ উপরে হলো সিনেট। বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতি নির্ধারণ, আইন বাতিল ও সংশোধনের এখতিয়ার রয়েছে সিনেটের। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুয়ায়ী সিনেট নির্বাচিত ডাকসু থেকে ৫ জন ছাত্র প্রতিনিধি থাকার কথা। কিন্তু তা নেই প্রায় ২৬ বছর ধরে। আছে শুধু উপচার্য ও উপ-উপচার্য, কোষাধ্যক্ষ, সরকার কর্তৃক মনোনীত কর্মকর্তা, স্পিকার, মনোনীত সংসদ সদস্য, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রমুখ। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষমতার দ্বিতীয় নম্বরেও থাকা সিন্ডিকেটে কোন ছাত্র প্রতিনিধি থাকার নিয়ম সেই। সুতরাং বিশ্ববিদ্যালয় চলছে শুধু শিক্ষক এবং সরকারি কিছু আমলাদের দ্বারা। মানে পুরোটাই একরোখা এবং অগণতান্ত্রিক সিনেট-সিন্ডিকেট দিয়েই চলছে বিশ্ববিদ্যালয়।
আগে দেখতাম ছাত্র সংসদের উদ্যোগে হলগুলোতে সাহিত্য গান, কবিতা, আবৃত্তি, নাটক, অভিনয়, ছবি আকাঁ, আষাড়ে গল্প বলা, বির্তক, কাব্য সন্ধ্যা, বিভিন্ন কবি সাহিত্যক লেখকদের বিভিন্ন বার্ষিকী পালন প্রভৃতির আয়োজন করা হত।এখন আর এসব নেই।মেধাভিত্তিক রাজনীতি চর্চাও নেই।বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বর্তমানে যে ছাত্ররাজনীতি চলছে একে রাজনীতি বলা যায় না। এটা সরকারের অন্ধ আনুগত্য। সিট দখল টেন্ডারবাজি মারামারি, খুন ইত্যাদি এখন ছাত্ররাজনীতির নামে করা হচেছ। আর সাধারণ ছাত্র, সত্যিকার ছাত্র;মেধাবী ছাত্ররা–রাজনীতি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।তাই তাই সমস্ত সমস্যা সমাধানের জন্য ডাকসু,চাকসু,রাকসু নির্বাচন খুবই জরুরি।
খায়রুলঃ শুনেছি বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পক্ষের প্রথম গোপন সংগঠন যা ‘নিউক্লিয়াস’ই স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ’ নামে অভিহিত।এ সংগঠন সম্পর্কে কিছু বলবেন?
মনওয়ার সাগরঃ আমরতো তখন জন্মও হয়নি। তবে,হ্যা যখন ছাত্র রাজনীতি করতাম তখন এ সংগঠন সম্পর্কে অল্প-বিস্তর জেনেছি।
১৯৬২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল আলম খান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর নেতা কাজী আরেফ আহমেদ ও ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক এই তিন ছাত্রলীগ নেতার উদ্যোগে গঠিত হয় স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পক্ষের প্রথম গোপন সংগঠন যা ‘নিউক্লিয়াস’ নামে পরিচিত। আবার এই ‘নিউক্লিয়াস’ই স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ’ নামে অভিহিত। প্রকাশ্যে এই নিউক্লিয়াসের কোনো কর্মকাণ্ড ছিল না ঠিকই; কিন্তু অত্যন্ত গোপনে তারা অভিষ্ঠ লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য কাজ শুরু করেন।
১৯৬৪ সালের জুলাই মাসে তিন সদস্য বিশিষ্ট স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ বা নিউক্লিয়াসের হাইকমান্ড গঠন করা হয়। তিন সদস্য হচ্ছেন ০১) সিরাজুল আলম খান ০২) আব্দুর রাজ্জাক ও ০৩) কাজী আরেফ আহমেদ। তাঁরা নিজেদের মধ্যে দায়িত্ব ভাগ করে নেন। সিরাজুল আলম খান ছিলেন স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ এর যাবতীয় কর্মকাণ্ডের প্রণেতা ও তত্ত্বাবধায়ক। তিনি নিঃসন্দেহে একজন সেরা সংগঠক। আব্দুর রাজ্জাকের ভূমিকা ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও আওয়ামী লীগের মধ্যে স্বাধীনতার পক্ষের মতামত গড়ে তোলা। আব্দুর রাজ্জাক শুরু থেকে বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদের কাজের অগ্রগতির কথা অবহিত করতেন। এবং কাজী আরেফ আহমেদ ছাত্র ফ্রন্টের দায়িত্ব নেন। অর্থাৎ ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে গোপনে স্বাধীন বাংলাদেশের পক্ষে কাজ করা। পরবর্তীকালে এই তিন নেতার বাইরে আরো দুজনকে ‘নিউক্লিয়াস’-এ অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তাঁদের একজন হলেন ছাত্রলীগ নেতা আবুল কালাম আজাদ (১৯৬৩) ও অপরজন চট্টগ্রাম ছাত্রলীগ নেতা এম এ মান্নান (১৯৬৫)।
‘নিউক্লিয়াস‘-এর সদস্য সংগ্রহ করা হতো মূলত ছাত্রলীগ থেকে। সমর্থক-শুভানুধ্যায়ী সংগ্রহ করা হতো বাইরে থেকে। স্বাধীনতার লক্ষ্য অর্জনের জন্য আদর্শবাদী কর্মী গড়ে তুলতে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ বা নিউক্লিয়াসে সৎ , চরিত্রবান, নিষ্কলুষ, নিবেদিতপ্রাণ কর্মীদের সদস্য করা হত। মিথ্যা বলা, সংগঠনের গোপন কথা ফাঁস করা, নৈতিকতা বিরোধী কাজকরা, নিয়ম শৃঙ্খলা ভঙ্গ করা ও বিশ্বাস ঘাতকতার শাস্তি ছিল মৃত্যুদণ্ড। এই সংগঠনে ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামের অগ্নিযুগের দুই সন্ত্রাসবাদী সংগঠন অনুশীলন ও যুগান্তরের প্রভাব অনেক বেশী ছিল। ‘নিউক্লিয়াস’ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের অভ্যন্তরে থেকে গাইডিং ফোর্স হিসেবে কাজ করতো এবং নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে কার্যকরী ভূমিকা অবলম্বন করতো। প্রকাশ্যে এই সংগঠনটিকে বোঝা যেত না। বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন, রাজনৈতিক দল, ক্রীড়া-খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর আড়ালে থেকে এ সংগঠনের নেতাকর্মীরা কাজ করতেন। ছাত্র-শ্রমিক-জনতার প্রতিটি আন্দোলনে স্বাধীনতার পক্ষে জনমত গড়ে তোলাই ছিল সংগঠনটির সার্বক্ষণিক কাজ। আর এই কারণেই পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষে এই গোপন সংগঠনের কার্যক্রম বা অস্তিত্ব জানা সম্ভব হয়নি।
স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে কবি গুরু রবীন্দ্র নাথা ঠাকুরের ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ নির্ধারণ করে নিউক্লিয়াস।
খায়রুলঃ বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক ব্যাবস্থা সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কি?
মনওয়ার সাগরঃ আমি অর্থনীতির ছাত্র নয়,তবে অর্থনীতি পড়েছি,অনার্সে পলিটিক্যাল ইকোনিমি পড়েছি,এম বি এ তে ম্যানাজারিয়াল ইকোনমি পড়েছি,বিভিন্ন জার্নালে,জাতীয় পত্রিকায় অর্থনীতির পাতাসমূহ পড়তাম।অর্থনীতি সম্পর্কে আমার অল্পস্বল্প ধারনা থেকে কিছুটা বলতে পারি।
ভারতের অর্থনীতি সম্বন্ধে জোয়ান রবিনসনের একটি উক্তি মনে পড়ছে। জোয়ান রবিনসন বলতেন “Whatever you say about India the opposite is equally true”। বাংলাদেশের অর্থনীতি সম্বন্ধেও বলা যায় বৈপরিত্যে ভরা,কোনো ধরনের অর্থনীতির তত্ত্বের সাথেই খাপ খায়না। আমার মতে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন একটি প্রহেলিকা। প্রহেলিকা আমি বলছি এই জন্যে, যে বিগত চার দশকে আমাদের মাথাপিছু আয় প্রকৃত হিসাবে দ্বিগুণের বেশি হয়ে গেছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির ইতিহাসে এই ধরনের অর্থনৈতিক অগ্রগতি এর আগে কখনো অর্জিত হয়নি। বাংলাদেশে মানব উন্নয়ন সূচকের দিক দিয়ে আমরা অনেক অগ্রগতি অর্জন করেছি, শিক্ষার ব্যপারে আমরা অগ্রগতি অর্জন করেছি, এগুলো সবই অত্যন্ত ইতিবাচক অর্জন। কিন্তু একই সঙ্গে বাংলাদেশের যে সুশাসন ব্যবস্থা তাতে অতি দ্রুত অবনতি হয়েছে। সুশাসন ব্যাবস্থার এই অবনতি সমস্ত অর্জনকে ম্লান করে করে দিয়েছে।এটা আমরা যেকোন সূচকের ভিত্তিতেই নির্ণয় করতে যাইনা কেন আমরা দেখতে পাই, বাংলাদেশের সুশাসনের অভাব রয়েছে। বাংলাদেশে সামগ্রিক ভাবে আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রে অগ্রগতি হয়নি।কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। এই যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সামান্য অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে, সেটাই কিন্তু আমাদের অর্থনীতিকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে।
খায়রুলঃপূঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যাবস্থার যে প্রতিযোগিতা চলছে তা কতোটা শুভকর বলে মনে করেন?
আমি মনে করি পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার যে অশুভ প্রতিযোগিতা তা মোটেই শুভকর নয়,কারন এটি গণতন্ত্রের মূল স্পিরিটকে নষ্ট করে দেয়, এ ব্যবস্থা আমাদের সমাজ ও অন্যান্য সামাজিক ও পারিবারিক কাঠামো দুর্বল করে দিয়ে সংস্কৃতির ভিতর থেকে যে আমূল পরিবর্তন ঘটাচ্ছে; এর প্রভাব পড়েছে আমাদের রাজনীতিতে, সংস্কৃতিতে, চিন্তা-চেতনায়, সামগ্রিক জীবন বোধে। সংস্কৃতির পরিবর্তনের প্রভাব রাজনীতির উপরে পড়ে। রাজনীতি নিজেই সংস্কৃতির একটি অংশ।সংস্কৃতিকে আমি দুভাবে দেখছি। আমার মতে কখনো সংস্কৃতি অর্থে জীবনের, চিন্তার বা মনের কর্ষণ আবার কখনো জীবনের, চিন্তার বা মনের সৃজন অর্থে সংস্কারকেই বুঝি।
খায়রুলঃ আপনার জীবনে এমন কোনো স্বপ্ন বা আকাঙ্ক্ষা আছে কী, যেটা এখনও পূর্ণ হয়নি?
মনওয়ার সাগরঃ
পূর্ণতা এবং অপূর্ণতার মধ্যেই মানুষের বসবাস।কয়জন মানুষের স্বপ্ন পূরণ হয় বলো?আমি সব সময় একধরনের অতৃপ্তির মধ্যেই থাকি,এখনও আছি।প্রথম জীবনে স্বপ্ন ছিল পেশায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হবো,সে পথে আর এগুতে পারলাম না, এরপর স্বপ্ন দেখেছিলাম সাংবাদিক হবো,কিছুদূর এগুলাম,আর হলোনা।এখন ভাবছি লেখা লেখি নিয়েই থাকবো।
খায়রুলঃ আপনার অনেক সময় নষ্ট করলাম,আমাদের জন্য দোয়া করবেন।
মনওয়ার সাগরঃ পূর্ণতা সেটা না বলে এটাওতো বলতে পারো আমার জন্য তুমিও অনেক সময় ব্যয় করেছো।দোয়া আমার সবার জন্য,সবাই আলোকিত মানুষ হোক সেটাই দোয়া করি।এ দেশের মানুষগুলো আলোকিত হলে বাংলাদেশও আলোকিত হবে।জাতির মানুষগুলো বড় হলেইতো বাংলাদেশও সমৃদ্ধ হবে।
পরিশেষে বলবো ড.মনওয়ার সাগর কঠোর বাস্তবতাকে সহজ ও শোভন করে তুলে জনমানুষের কাছে থাকতে ভালোবাসেন, গল্প- কবিতার ভাষায় জীবনের মারাত্মক প্রহেলিকার কথা বলেন, প্রেমের কথা বলেন, মৃত্যুর কথা বলেন, আবার এমন সব সমস্যার কথা বলেন, যার সমাধান তাঁকেই করতে হয়।
পেছনে তাকালেই স্মৃতির ভেতর নড়ে ওঠে তাঁর নষ্টালিজিয়া।মনওয়ার সাগর এর দর্পণে উঁকি মারে অন্য এক মনওয়ার সাগর।মানবিক আবেগমথিত সামাজিক ও স্বদেশপ্রিয় শব্দ কারিগর এর জন্য শুভ কামনা রইল।
উক্ত সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন, খায়রুল আলম ।
এডুনিউজ সিটিজি ডটকম