বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দিতে বাংলাদেশে আসা মালয়েশিয়ার জনপ্রিয় দাঈ এবিট লিউ বস্তিবাসীদের সঙ্গে সময় কাটিয়েছেন। বস্তিবাসীর সঙ্গে কথা বলা ছাড়াও তিনি তাদের মাঝে খাবার দিয়েছেন।
শুক্রবার (২০ জানুয়ারি) সকালে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ১৭টি ছবি পোস্ট করেছেন এই দাঈ। সেখানে টঙ্গী রেললাইনে পাশে থাকা বস্তিবাসীর মাঝে তাকে খাবার বিতরণ করতে দেখা গেছে। পোস্টে তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘রেলবস্তির মানুষের জীবন থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।’
ফেসবুকে দেওয়া তার ছবিগুলোতে বস্তির নারীদের সঙ্গে ছোট ছোট কয়েকজন শিশুকে লাইনে দাঁড়িয়ে এবিট লিউয়ের পরিবেশন করা খিচুড়ি নিতে দেখা যায়। নিজ হাতে বস্তিবাসীর মাঝে খাবার তুলে দিচ্ছেন এবিট লিউ। এছাড়া শিশুর মুখে খাবারও তুলে দেখা যায় তাকে।
ফেসবুক পোস্টে এবিট লিউ আরও লিখেছেন, ‘যারা রেললাইনের ধারে বস্তিতে বাস করে তাদের জন্য খুবই খারাপ লাগে। আমরা তাদেরকে খাবার সরবরাহ করছি। তারা খাবার আনতে ছুটছে। আসলে এই মানুষগুলো গরম খাবার ও চিকিৎসেবা নিতে পছন্দ করেন। এই মানুষের মিছিলে একটি অনাথ শিশুও ছিল। সত্যি বলতে কী এখানকার জীবনটা বড়ই অদ্ভুদ ও আশ্চর্যজনক। এই বস্তিবাসীর জীবন থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। এখানে সব ধরনের মানুষই আছে। তারা খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ।
গত বুধবার রাত ১২টার পর বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে শরিক হতে ঢাকায় আসেন মালয়েশিয়ার এই দাঈ। সেই ছবিও তিনি নিজের ফেসবুক পেজে শেয়ার করেন। ছবিতে তাঁকে রিকশায় ঘুরতে দেখা গেছে। ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, আই লাভ বাংলাদেশ।’
এর আগে বিমানে ওঠে তিনি সবার দোয়া চেয়ে লিখেন, ‘আমার জন্য দোয়া করবেন যেন আমি ঢাকা যেতে পারি।’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খুব জনপ্রিয় এই দাঈ একজন নও-মুসলিম। ১২ বছর বয়সে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। শিক্ষা জীবন শেষ করে তিনি ইসলামের দাওয়াতের পথে বেরিয়ে পড়েন এবং যেখানেই সুযোগ পান, সেখানেই দ্বীন প্রচারে নিজেকে বিলীন করে দেন। ছোট-বড় কিংবা ভালো-খারাপ যে কারো কাছে, যেখানে সেখানে ইসলাম ধর্ম প্রচারে তিনি তৎপর থাকেন।
4সম্প্রতি তাঁর এক ভিডিও ভাইরাল হয়। দ্বীনের দাওয়াত দেওয়ার জন্য মালয়েশিয়ার এক পতিতালয়ে চলে যান তিনি। একজন হুজুরকে পতিতালয়ে দেখে সবাই হতবাক হয়ে যান। তিনি পতিতালয়ে কেন, এই চিন্তায় ডুবে যান উপস্থিত সবাই। মূলত যারা অর্থের বিনিময়ে নিজের ইজ্জত বিলীন করে দেন তাদের সৎপথ দেখানোর জন্য তিনি পতিতালয় প্রবেশ করেন। সেই ভিডিওতে দেখা গেছে, পতিতালয়ের মহিলারা এবিট লিউর দাওয়াতের এক পর্যায়ে কান্না শুরু করে দেন। ইসলামের ছায়ায় আশ্রয় নিয়ে তারা পর্দায় নিজেদের আবৃত করে নেন।
আরেকটি ভাইরাল ভিডিওতে দেখা গেছে, বাজে কাজে জড়িত ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ কিছু তরুণের কাছে যান এবিট লিউ। তাদেরকে ইসলামের বাণী শোনান। তারা এক পর্যায়ে হুজুরের আলোচনায় প্রভাবিত হয়ে পড়েন। তারা নিজেদের ভুল বুঝে কান্না শুরু করলে হুজুর তাদের বুকে জড়িয়ে নেন। এভাবে এবিট লিউ ইসলামের দাওয়াত দিতে থাকেন। তাঁর এরকম বহু ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চোখে পড়ে।
মালয়েশিয়ার সাধারণ মানুষের কাছে এবিট লিউ ‘মানবতার ফেরিওয়ালা’ নামে পরিচিত। কারণ কারও বিপদে-আপদের খবর শুনলেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে ছুটে চলেন তিনি। এবিট লিউ মূলত একজন মালয়েশিয়ান চাইনিজ মুসলিম।
তিনি মালয়েশিয়ার একজন ইসলামি উদ্যোক্তা এবং ধর্ম প্রচারক। তার পুরো নাম-এবিট ইরাওয়ান বিন ইব্রাহিম লিউ। ১৯৮৪ সালের ২১ ডিসেম্বর মালয়েশিয়ার পাহাং রাজ্যে তিনি জন্মগ্রহণ করেছেন। তার পিতার নাম মুয়াডজম শাহে লিউ ইউ পাউ। ১১ জন ভাই-বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়।
তিনি স্কুল (সেকোলাহ) কেবাংসান বুকিত রিদান, সেকোলাহ মেননগাহ কেবাংসান মুয়াডজম শাহ, পাহাং সেকোলাহ মেননগাহ টেকনিক জহুর বারু এবং সেকোলা মেননগাহ কেবাংসান আবদুল রহমান তালিব, পাহাং থেকে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন এবং ইউনিভার্সিটি পুত্রা মালয়েশিয়া থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
এবিট লিউ দাতু ডা. হাজী মোহাম্মদ ফাদজিল্লাহ কামসাহ এবং অধ্যাপক হানিম তাহিরের পরিচালনায় এক্সেল প্রশিক্ষণের মোটিভেশনাল স্পিকার। তিনি সকলের প্রেরণাদানকারী, ইসলাম আগামা, ইসলাম ইতু ইন্দাহ, উসরাহ নুরানি এবং আইকেআইএম এবং সিনার রেডিওর নিয়মিত বক্তা।
২০১৫ সালে তিনি ‘মওলিদুর রসুল’ জাতীয় পুরস্কার এবং ২০২০ সালের ১৫ আগস্ট জাতীয় যুব দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে সমাজ বিনির্মাণে এবং মহামারি করোনার সময়ে মানব কল্যাণে বিশেষ অবদান রাখায় জাতীয় যুব দিবসের বিশেষ সম্মানে ভূষিত করেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী তানশ্রী মুহিউদ্দিন ইয়াসিন।
এছাড়াও মানব কল্যাণে অবদান রাখায় সরকার কর্তৃক বিভিন্ন সময় তিনি একাধিক পুরস্কার পেয়েছেন।