কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণকাজ শুরুর পর ট্যুরিস্ট কার প্রকল্প হাতে নেয় রেলওয়ে। প্রতিটি কোচ (কার) প্রায় ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে আমদানির জন্য রেলওয়ে একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবও (ডিপিপি) প্রণয়ন করে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে নির্দেশনা অনুযায়ী তৈরি করা হয় প্রাথমিক উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (পিডিপিপি)। তবে ৫৪টি বিশেষায়িত কোচ আমদানিতে অযৌক্তিক ব্যয় প্রাক্কলন এবং প্রকল্পের আকার বড় হওয়ায় তৃতীয় পক্ষের পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সমীক্ষার নির্দেশ দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।
প্রকল্পের শুরুতে অস্বাভাবিক ব্যয় ও ব্রড গেজের পরিবর্তে মিটার গেজ (এমজি) ট্যুরিস্ট কার আমদানির বিষয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হয় রেলওয়ে। ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল সংযোগের ক্ষেত্রে টঙ্গী-আখাউড়া, লাকসাম-চিকনি আস্তানা ও চট্টগ্রাম-দোহাজারী পর্যন্ত বিদ্যমান এসব খণ্ডিত রেলপথ মিটার গেজ হওয়ায় ব্রড গেজের পরিবর্তে মিটার গেজ ট্যুরিস্ট কার আমদানির পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে দাবি করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। তাছাড়া ট্যুরিস্ট কার বিশেষায়িত কোচ হওয়ায় তুলনামূলক দাম বেশি হয়েছে বলে ব্যাখ্যা দেয়া হলেও বিষয়টি নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারেনি পরিকল্পনা কমিশন। সর্বশেষ প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ২৫ কোটি টাকা হওয়ায় তৃতীয় পক্ষ পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের মাধ্যমে নতুন করে ডিপিপি প্রণয়ন করতে হচ্ছে রেলওয়েকে।
জানা গিয়েছে, কক্সবাজারগামী পর্যটকদের যাতায়াতের জন্য ট্যুরিস্ট ট্রেন পরিচালনার লক্ষ্যে ৫৪টি মিটার গেজ যাত্রীবাহী গাড়ি সংগ্রহের জন্য তৈরি পিডিপিপিতে প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে মোট ৫ কোটি ৭৩ লাখ ডলার। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় হবে ১ কোটি ৪৮ লাখ ডলার এবং প্রকল্প সাহায্য ধরা হয়েছে ৪ কোটি ২৪ লাখ ডলার। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২২ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ৩০ জুন। কিন্তু রেলওয়ের প্রস্তাবিত পিডিপিপি বাতিল হওয়ায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
এ-সংশ্লিষ্ট এক বৈঠকের তথ্যমতে, সারা দেশের সব রেলপথ সরকার ব্রড গেজে রূপান্তরের কার্যক্রম হাতে নিলেও মিটার গেজ ট্যুরিস্ট কার আমদানির বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনকে ব্যাখ্যা দেয়া হয়। রেলওয়ের দাবি, ঢাকা-কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ শতভাগ ব্রড গেজে রূপান্তর করা সময়সাপেক্ষ বিষয়। তাছাড়া রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে ব্রড গেজ কোচ মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণে প্রয়োজনীয় কোনো সুযোগ-সুবিধাসংবলিত কারখানা নেই।
জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান যন্ত্র প্রকৌশলী (সিএমই) মো. বোরহান উদ্দিন বণিক বার্তাকে বলেন, প্রকল্পের আকার ২৫ কোটি টাকার বেশি হলে সরকারি নিয়ম অনুসারে তৃতীয় পক্ষ সম্ভাব্যতা যাচাই করতে হয়। বিষয়টি রেলপথ মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। এরই মধ্যে সমীক্ষা যাচাইয়ের জন্য পরামর্শক নিয়োগের কাজ চলমান রয়েছে। সম্ভাব্যতা যাচাই হলে ডিপিপি প্রস্তুতের মাধ্যমে প্ল্যানিং কমিশনে পাঠানো হবে। সেক্ষেত্রে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানই প্রকল্পের ডিপিপি ও ব্যয় নির্ধারণ করে দেবে।
রেলওয়ের সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদনে শুরুতে ঢাকা ও কক্সবাজার থেকে প্রতিদিন দুই জোড়া ট্রেন পরিচালনার পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রকল্প ব্যয় বেড়ে যাওয়ার শঙ্কায় এক জোড়া ট্যুরিস্ট ট্রেনের রেক সংগ্রহের বিষয়টি প্রাধান্য পায়। এ হিসাবে প্রতিদিন সকাল ও বিকালে ঢাকা থেকে দুটি ট্রেন এবং একই সময়ে সকাল ও রাতে কক্সবাজার থেকে দুটি ট্রেন চলাচল করবে। ৫৪টি কোচের মধ্যে অত্যাবশ্যকীয় কোচগুলো ছাড়া ২০ শতাংশ কোচ স্পেয়ার হিসেবে যাত্রাপথের উভয় প্রান্তে মজুদ রাখা হবে।
প্রকল্পের অধীনে রয়েছে ছয়টি মিটার গেজ ট্যুরিস্ট কোচ (সিটি), ১৩টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্লিপার কার (ডব্লিউজেসি), ২২টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত চেয়ার কার (ডব্লিউজেসিসি), সাতটি পাওয়ার কার (ডব্লিউপিসি) এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ডাইনিং কার ও গার্ড ব্রেক (ডব্লিউজেডিআর)। এর মধ্যে শুধু কোচের দাম ধরা হয়েছে ২৫৫ কোটি ১৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতিটি কোচের ক্রয়মূল্য ধরা হয়েছে গড়ে ৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। প্রকল্পের বাকি টাকা আমদানি প্রক্রিয়াসহ আনুষঙ্গিক কাজে ব্যয় করা হবে। এ হিসাবে কোচ আমদানি-বহির্ভূত প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১০১ কোটি টাকা। তবে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পর এসব ট্যুরিস্ট কার সংগ্রহের প্রাক্কলিত ব্যয় বাড়িয়ে ৪৮৮ দশমিক শূন্য ৭ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গিয়েছে, বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার দূরত্ব আরো কমিয়ে আনতে রেলপথে প্রায় বিরতিহীন ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এসব ট্রেনে পর্যটক হিসেবে চলাচলরত যাত্রীদের সুবিধার্থে ট্যুরিস্ট কার সংযোজন করা হবে। ট্যুরিস্ট কারে ১০-১২ জন যাত্রী ভ্রমণ করতে পারবে। সুত্র: বনিকবার্তা