কুমিল্লা প্রতিনিধি: কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনুর মায়না তদন্ত পুলিশের কাছে জমা দিয়েছে দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ড। তদন্তে কি প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে তা সরাসরি না জানালেও কৌশলে তুন ধর্ষিত হয়েছে কি না ‘আপনারাই বুঝে নেন’ বলেছেন বোর্ড প্রধান অধ্যাপক কামদা প্রসাদ সাহা।
তিনি জানান, মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিশ্চিত হতে পুলিশের আরও অধিক তদন্ত করতে হবে। তনুর লাশের দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন আজ রোববার সিআইডির কাছে জমা দেওয়ার পর দুপুরের দিকে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এই মন্তব্য করেন কামদা প্রসাদ সাহা।
তনুর মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে মেডিকেল বোর্ডের প্রধান বলেন, যেহেতু দাফনের ১০ দিন পর কবর থেকে পচা-গলা লাশ তুলে দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত করা হয়েছে, সেহেতু পারিপার্শ্বিক নানা অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে পুলিশের আরও অধিক তদন্তের মাধ্যমে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হতে হবে।
কামদা প্রসাদ সাহা বলেন, মৃত্যুর আগে তনুর ‘সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্স’ হয়েছে।
এই কথার অর্থ তনুকে হত্যার আগে ধর্ষণ করা হয়েছে কি না—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে কামদা প্রসাদ সাহা বলেন, ‘আপনারাই বুঝে নেন।’
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের দুইজন অফিস সহকারী আজ রোববার বেলা ১১টায় সিআইডি কার্যালয়ে গিয়ে ওই প্রতিবেদন দিয়ে আসেন। তাদের কাছ থেকে প্রতিবেদনটি বুঝে নেন এ এসআই মোশাররফ।
গত ২০ মার্চ খুনের পর প্রথম ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে চিকিৎসকরা বলেছিলেন, তনুকে হত্যার আগে ধর্ষণের কোনো প্রমাণ তারা পাননি। কিন্তু ডিএনএ পরীক্ষার পর সিআইডির পক্ষ থেকে জানানো হয়, খুনিরা তনুকে ধর্ষণও করেছিল; তার ডিএনএ নমুনা তারা পেয়েছেন।
আলোচিত এই খুনের প্রথম ময়নাতদন্ত নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পর আদালতের নির্দেশে ৩০ মার্চ দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত করেন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকরা।
ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক দলের সদস্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান কামদা প্রসাদ বলে আসছিলেন, সিআইডির ডিএনএ টেস্টের প্রতিবেদন পেলেই তারা প্রতিবেদন দিতে পারবেন। এ নিয়ে কিছুদিন টানাপড়েনও চলে। চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে তনুর দাঁত ও লালা পরীক্ষার প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছিল মামলার তদন্তকারী সংস্থা সিআইডির কাছে। তখন সিআইডি বলেছিল, এগুলোর আলাদা কোনো প্রতিবেদন তারা করেনি।
এই প্রেক্ষাপটে কুমিল্লার অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম জয়নাব বেগম পূর্ণাঙ্গ ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন চিকিৎসকদের সরবরাহের নির্দেশ দেন। চিকিৎসকার ওই প্রতিবেদন হাতে পান গত ৭ জুন।
গত ২০ মার্চ রাতে কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতরে নিজেদের কোয়ার্টার থেকে অন্য কোয়ার্টারে ছাত্র পড়াতে গিয়ে খুন হন। ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী তনুর লাশ উদ্ধারের সময় পুলিশ ধর্ষণের সন্দেহের কথা জানালেও প্রথম ময়নাতদন্তের পর চিকিৎসকরা ধর্ষণের প্রমাণ না পাওয়ার কথা জানান। এ নিয়ে সারাদেশে ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে আদালতের নির্দেশে দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত হয়।
আর সেনানিবাসের ভেতরে তনুর লাশ যেখানে পাওয়া গিয়েছিল, সেখান থেকে আলামত সংগ্রহ করে তার পরীক্ষা চালায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি।
পাঠকের মতামত