আসিফ খান : মাহে রমজানের রোজা পালনকালে রাতের বিশেষ আমল হল তারাবিহ। রমজান মাসের অফুরন্ত রহমত ও মাগফিরাত লাভ এবং প্রতিশ্রুত ছওয়াব ও পুরস্কার পাওয়ার জন্য তারাবি নামাজের গুরুত্ব অপরিসীম। রমজান মাসে এশার চার রাকাত ফরজ ও দুই রাকাত সুন্নতের পর এবং বিতরের নামাজ আদায়ের পূর্বে দুই রাকাআত করে যে বিশ রাকাআত নামাজ পড়া হয়, তাকে সালাতুত্ তারাবিহ বা তারাবির নামাজ বলা হয়।
আরবি ‘তারাবিহ’ শব্দটির মূল ধাতু ‘রাহাতুন’, অর্থ আরাম বা বিশ্রাম করা। তারাবি নামাজ পড়াকালে প্রতি দুই রাকাত বা চার রাকাত পরপর বিশ্রাম করার জন্য একটু বসার নামই ‘তারাবি’। দীর্ঘ নামাজের কঠোর পরিশ্রম লাঘবের জন্য প্রতি দুই রাকাত, বিশেষ করে প্রতি চার রাকাত পর একটু বসে বিশ্রাম করে দোয়া ও তসবিহ পাঠ করতে হয় বলে এ নামাজকে ‘সালাতুত তারাবিহ’ বা তারাবি নামাজ বলা হয়। তারাবি নামাজের জামাতে পবিত্র কোরআন খতম করা হয়, তাই জামাতে তারাবি নামাজ পড়লে সওয়াব বেশি পাওয়া যায়। রমজান মাসে তারাবি নামাজের কিয়াম হলো আল্লাহর রাস্তায় আরামকে হারাম করে কঠোর পরিশ্রম করার শপথ অনুষ্ঠান।
তারাবিহ আদায় করলে রোজাদারের মননে এক অপূর্ব প্রফুল্লতা ও প্রশান্তি নেমে আসে। হাদীস শরীফে তারাবিহ নামাজের গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। বিশিষ্ট সাহাবি হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত- ‘তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহকে (সা.) বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি রমজানে ঈমানের সাথে সওয়াব লাভের আশায় তারাবিহ নামাজ আদায় করবে তাঁর পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হবে। -(বোখারি ও মুসলিম)
রমজান মাসের জন্য নির্দিষ্ট তারাবিহ নামাজ জামাতে পড়া ও সম্পূর্ণ কোরআন শরিফ একবার খতম করা সুন্নতে মোয়াক্কাদা। রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে তারাবিহ নামাজ পড়েছেন এবং সাহাবায়ে কিরামকে পড়ার জন্য আদেশ দিয়েছেন। তারাবি নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা ও কোরআন শরিফ খতম করা অধিক সওয়াবের কাজ। রাসুলুল্লাহ (সা.) তারাবিহ নামাজের জন্য রাতের কোনো বিশেষ সময়কে নির্দিষ্ট করে দেননি। তবে তারাবিহ নামাজ অবশ্যই এশার নামাজের পর থেকে সুবহে সাদিকের পূর্ববর্তী সময়ের মধ্যে আদায় করতে হবে।
মূলত আগে মসজিদুন নববিতে একাধিক জামাআতে একই সময়ে তারাবিহ নামাজ সাহাবায়ে কেরাম আদায় করতেন, কেউ কেউ একাকীও পড়তেন। নামাজে কোরআন মজিদ তিলাওয়াত সশব্দ হওয়াতে অনেকের কোরআন পাঠের আওয়াজ উত্থিত হতো।
হজরত ওমর (রা.) সাহাবিদের খণ্ড খণ্ড জামাতে ও একাকী তারাবিহ নামাজ পড়তে দেখে জামাতে তারাবি পড়ার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন। তখন তিনি একজন ইমামের নেতৃত্বে জামাতে তারাবিহ নামাজ পড়ার রীতি চালু করেন। হযরত উসমান (রা), হযরত আলী (রা), হযরত তালহা (রা), হযরত যুবায়ের (রা), হযরত আবদুর রহমান ইবনে আউফসহ (রা) সে সময়ে সব সাহাবায়ে কেরাম এই ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
তারাবিহ নামাজের অশেষ ফজিলত রয়েছে। রাসূল (সাঃ) বলেন, ‘(হে আমার উম্মতগন), তোমরা জেনে রেখ আল্লাহ তোমাদের ওপর রমজানের রোজা ফরজ করেছেন এবং উহার রাত্রে তারাবিহের নামাজ সুন্নাত করেছেন। অতএব, যে ব্যক্তি খালেস নিয়তে ঈমানের সাথে কেবল সওয়াবের আশায় এ মাসে দিনের বেলায় রোজা রাখবে এবং রাতে তারাবিহের নামাজ পড়বে তার বিগত সব সগিরা গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।’
রমজানের রোজা, তারাবি নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত ও অন্যান্য ইবাদতের দরুন আল্লাহ তাআলা রোজাদার ব্যক্তির আগের সব গুনাহ মাফ করে দেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইমান ও আত্মবিশ্লেষণের সঙ্গে পুণ্য লাভের আশায় রোজা রাখেন, তারাবি নামাজ পড়েন এবং কদরের রাতে জাগ্রত থেকে আল্লাহর ইবাদত করেন, তাঁর জীবনের পূর্বের সব গুনাহ মাফ করা হবে।’ (বোখারি ও মুসলিম)।
আমাদের সবার উচিৎ রমজানে তারাবিহ নামাজ পড়া এবং জামাতে নামাজ পড়াকালে প্রতিটি মুহূর্ত পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত শ্রবণ ও আল্লাহকে স্মরণ করা। এছাড়া অতীত জীবনের গুনাহ্র জন্য স্রষ্টার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। মহান আল্লাহ আমাদের তারাবিহ নামাজ আদায় এবং পবিত্র রমজান মাসের সব ফজিলত ও বরকত দান করুন। -আমিন।