রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) অধ্যাপক তাহের হত্যা মামলায় দুই আসামির ফাঁসি বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) রাত ১০টা ১ মিনিটে কার্যকর হবে। রাজশাহী কারাগারে এক সঙ্গেই দুজনের ফাঁসি কার্যকর করা হবে বলে জানা গেছে। কারা কর্তৃপক্ষ এই তথ্য জানিয়েছেন।
এর আগে মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) দুপুর পৌনে ১টার দিকে দুই আসামির পরিবারের পক্ষ থেকে ৩৫ জন সদস্য তাদের সঙ্গে শেষবার দেখা করেন। সাক্ষাতের বিষয়টি নিশ্চিত করে জাহাঙ্গীরের ছোট ভাই মিজানুর রহমান বলেন, রোববার কারা কর্তৃপক্ষ চিঠি দিয়েছিল। রিট পেন্ডিং থাকায় আমরা তখন দেখা করিনি। রিট নিষ্পত্তি হওয়ার পর মঙ্গলবার দুপুরে দেখা করেছি। আমাদের পরিবারের ৩৫ জন এসেছিলেন।
একই দিন দেখা করেছেন ড. মিয়া মহিউদ্দিনের পরিবারের সদস্যরাও। জানা গেছে, মঙ্গলবার দুপুরে কারাগারের ভেতরে রাজশাহী জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জন, ডিআইজি প্রিজন ও কারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ মিটিং করেছে। তবে এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তারা।
মঙ্গলবার সকালে তাহের হত্যায় চূড়ান্ত রায়ে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামি জাহাঙ্গীরের আটকের বৈধতা নিয়ে করা রিট খারিজের বিরুদ্ধে আবেদন খারিজ করে দিয়েছে আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
উল্লেখ্য, ২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকার ম্যানহোল থেকে উদ্ধার হয় অধ্যাপক তাহেরের মরদেহ। দুদিন পর, অর্থাৎ ৩ ফেব্রুয়ারি নিহতের ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ রাজশাহী মহানগরীর মতিহার থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলার পর অধ্যাপক তাহেরের করা জিডির সূত্র ধরে বিভাগের শিক্ষক মহিউদ্দিন ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামী ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী, কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীরসহ আটজনকে গ্রেফতার করা হয়। ৫ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতারদের মধ্যে তিনজন আদালতে জবানবন্দি দেন।
জবানবন্দিতে তারা বলেন, অধ্যাপক তাহের বিভাগের একাডেমিক কমিটির প্রধান ছিলেন। একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মহিউদ্দিন অধ্যাপক পদে পদোন্নতির জন্য কমিটির সুপারিশ চেয়ে আসছিলেন। কিন্তু গবেষণা জালিয়াতির কারণে অধ্যাপক তাহের তা দিতে অস্বীকার করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে মহিউদ্দিন তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
পরিকল্পনা অনুযায়ী বালিশ চাপা দিয়ে হত্যার পর বাড়ির ভেতরে থাকা চটের বস্তায় ভরে অধ্যাপক তাহেরের লাশ বাসার পেছনে নেওয়া হয়। লাশ গুমের জন্য জাহাঙ্গীরের ভাই নাজমুল আলম ও তার শ্যালক আবদুস সালামকে ডেকে আনা হয়। তাদের সহায়তায় বাসার পেছনের ম্যানহোলের ঢাকনা খুলে তাহেরের লাশ ফেলে দেওয়া হয়।
২০০৭ সালের ১৭ মার্চ শিবির নেতা মাহবুব আলম সালেহীসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। বিচার শেষে ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার আদালত চারজনকে ফাঁসি ও দুজনকে খালাস দেয়।
দণ্ডিত অন্যরা হলেন, জাহাঙ্গীরের ভাই নাজমুল ও তার শ্যালক সালাম। তবে ছাত্রশিবিরের নেতা সালেহী ও আজিমুদ্দিন মুন্সি বিচারে খালাস পান। পরে দণ্ডিতরা হাইকোর্টে আপিল করেন। হাইকোর্ট মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীরের রায় বহাল রাখলেও নাজমুল ও সালামের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। তাদের দণ্ড বৃদ্ধি চেয়ে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। শুনানি শেষে ২০২২ সালের ৫ এপ্রিল আপিল বিভাগ হাইকোর্ট বিভাগের রায়ই বহাল রাখে। এরপর আসামিদের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদনও খারিজ করে সুপ্রিম কোর্ট। এরপর বাকি থাকে কেবল রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন। কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রায় ছয় মাস আগে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেছিলেন আসামিরা। সে আবেদনও নাকচ করেন রাষ্ট্রপতি। গত ৫ জুলাই সেই চিঠি রাজশাহী কারাগারে পৌঁছায়।