তুমব্রু সীমান্তের ওপারে ২ বিদ্রোহী গ্রুপের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ চলেছে সোমবার ৭ ঘন্টা ব্যাপী। যা থেকে গুলির খোসা এসে পড়লো এপারের কয়েকটি গ্রামে। সে সময় এ সব গ্রামের লোকজন আশ্রয় নেন নিরাপদ আশ্রয়ে। আর এসে পড়া গোলার খোসা এখন পথে পথে। যাতে আতংকে কৃষক, ছাত্র, শিক্ষক থেকে সকলে।
ঘটনাটি ঘটেছে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু, কোনার পাড়া, মধ্যমপাড়া, উত্তরপাড়া, হেডম্যান পাড়া ও বাইশফাঁড়ি এলাকায়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী তুমব্রু মধ্যমপাড়ার সরওয়ার কামাল, হেডম্যান পাড়ার পাইনছা প্রু তংচঙ্গা ও আলী আকবর জানান, তারা এখন বড় অসহায়। সোমবার সকাল ৬ টা থেকে ৭ ঘন্টা ব্যাপী গোলাগুলি। তাও তাদের কানের উপর তবে মিয়ানমার অংশে।
তারা জেনেছেন, মিয়ানমার দু’বিদ্রোহী গ্রুপ আরকান আর্মি ও আরএসও’র মধ্যে চলেছে তুমুল আধিপত্যের এ যুদ্ধ। তারা সীমান্তের চৌকি দখলের প্রতিযোগীতায় মেতেছে। সে গোলাগুলি থেকে বেশ গুলি এসে পড়ে তাদের বাড়ি-ঘরে-উঠানে-মাঠে-ঘাটে ।
সরওয়ার কামাল জানান, সোমবার সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে গোলাগুলির সময় তার বাড়িতে এসে পড়ে ২ টি একে-৪৭ রাইফেলের গুলি। প্রথম গুলি এসে পড়ার ২ মিনিটের মাথায় এসে পড়ে আরেকটি গুলি। চরম আতংকে ছেলে সন্তান নিয়ে কোন মতে নিরাপদ আশ্রয়ে অবস্থান করেন তিনি সারা দিন অন্যত্র ।
হেডম্যান পাড়ার পাইনছা প্রু তংচঙ্গাও অনুরুপ কথা বলেন এ প্রতিবেদকের কাছে। তার গ্রামের কয়েক জন পুরুষ ছাড়া সবাই নিরাপদে চলে গেছে সারা দিন, সন্ধ্যায় আবার ফিরে এসেছে বাড়িতে। এভাবে অনেকেই এ পথ অবলম্বন করেন তারা। তার ধারণা, প্রাণে বাঁচতেই তাদের এ সিদ্ধান্ত বলে জানান তিনি।
স্কুল শিক্ষক ছৈয়দুর রহমান হীরা জানান, তিনি সীমান্তের একটি স্কুলের শিক্ষক। তার স্কুল এলাকায় সারা দিন গোলাগুলির আওয়াজ। ভয়ে শিশুরা তটস্থ। বৃষ্টির মতো গোলাগুলি। ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা স্কুলে আসে। এভাবে আর কত দিন চলবে? তিনি এসবের প্রতিকার চান।
সীমান্তের একাধিক বাসিন্দা জানান, ৩৪ থেকে ৩৬ নম্বর সীমান্ত পিলার এলাকা দিয়ে সোমবার ২২ জানুয়ারি ভোর ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পযর্ন্ত ৭ঘন্টা পযর্ন্ত মিয়ানমারের সামান্য ভিতর থেকে হাজার হাজার রাউন্ড গোলাগুলির শব্দ এসে কাঁপিয়ে তুলে দুই সীমান্ত পিলার এলাকা। এতে সব কিছুতে অসুবিধা হচ্ছে। তারা বলেন মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় কোথাও এ ঘটনা তৎক্ষনাৎ জানানো ও সম্ভব হয় না। সমস্যার যাতাকলে তারা এখন দারুণ কষ্টে রয়েছেন।
ঘুমধুমের তুমব্রু গ্রামের সমাজ সচেতন ব্যক্তি মাহমুদুল হাসান জানান, ঐ এলাকার মানুষের ঘুম ভেঙেছে মিয়ানমার অভ্যেন্তরের চলা গোলাগুলির তুমুল শব্দে।তার ধারণা উক্ত গোলাগুলি সংগঠিত হয়েছে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে থাকা দুই বিদ্রোহী গ্রুপের মাঝে।
ঘুমধুম ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ আলম বলেন, উক্ত গোলাগুলির প্রবল আওয়াজে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন সীমান্তের কাছাকাছি থাকা চাকমা পাড়ার লোকজন। তিনি জানান, চাকমা পল্লীতে গোলাগুলির শব্দে আতঙ্কিত হয়ে অনেকেই তাদেরপাড়া ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয় চলে যান।
তিনি আরো জানান এলাকার লোকজন মারফতে শুনেছেন মিয়ানমার অভ্যন্তর থেকে গোলাগুলির অনেকগুলো বিস্ফোরিত গুলি চাকমা পাড়ার ঘরের চালের উপরে উঠানে এবং চাষ কৃত জমিতে এসে পড়েছে বলে জানতে পেরেছেন। এভাবে একাধিক সীমান্তে বসবাসকারী অধিবাসির বক্তব্য অভিন্ন।
এ বিষয়ে এ সীমান্তে দায়িত্বরত ৩৪ বিজিবির অধিনায়ক লে: কর্ণেল সাইফুল ইসলাম চৌধুরী ও ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও মোবাইর নেটওয়ার্ক না থাকায় তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয় নি।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, তিনি গোলাগুলির খবর শুনে বিকেলে ঘটনাস্থলে গেছেন। মিয়ানমার অংশ থেকে শত শত গুলি তার ইউনিয়নে এসে পড়েছে। যাতে অনেকে বাড়ি ছেড়ে নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছিল । তবে সন্ধ্যার দিকে পুণরায় স্ব- স্ব বাড়ি ফিরেছে।
বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, গোলাগুলিসহ অন্যান্য খবর শুনেছি। উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর নিতে বলা হয়েছে । বিজিবি সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছে।
পাঠকের মতামত