উখিয়া নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৯/০৯/২০২২ ১২:২১ পিএম , আপডেট: ১৯/০৯/২০২২ ১২:২২ পিএম

তুমব্রু বাজারে সোমবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে এসএসসি পরীক্ষার্থী ইয়াসমিন আক্তারের সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার। সে জানায়, গোলা এসে পড়ার পর থেকে ভয়ে আছে। পরীক্ষা দেয়ার মতো মানসিক পরিস্থিতিও নেই। তারপরও পরিবারের চাওয়াতে পরীক্ষার কেন্দ্রে যাচ্ছে।

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে ইয়াসমিন আক্তার। তার বাড়ি তুমব্রু সীমান্তের উত্তরপাড়ায়। সেখানে সকাল থেকে মিয়ানমার বাহিনীর গোলাবর্ষণের শব্দ ভেসে আসছিল।

সেই শব্দ শুনতে শুনতে বাড়ি থেকে বের হয় ইয়াসমিন। বাজার পর্যন্ত আসার পরও থামেনি গোলার শব্দ।

সোমবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে নিউজবাংলার সঙ্গে তুমব্রু বাজারে কথা হয় ইয়াসমিনের। সে জানায়, গোলা এসে পড়ার পর থেকে ভয়ে আছে। পরীক্ষা দেয়ার মতো মানসিক পরিস্থিতিও নেই। তারপরও পরিবারের চাওয়াতে পরীক্ষার কেন্দ্রে যাচ্ছে।

সে আরও জানায়, বাড়ি থেকে তার কেন্দ্র ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের দূরত্ব চার কিলোমিটার। মিয়ানমার বাহিনীর মর্টার শেল ছোড়ার ঘটনায় সেই কেন্দ্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে ১০ কিলোমিটার দূরের কুতুপালং উচ্চ বিদ্যালয়ে। প্রথম দিকে কেউ কেউ পরিবহনের ব্যবস্থা করলেও আজ সেই গাড়ির দেখা নেই।

আরেক ছাত্রী জান্নাতুল ফেরদৌসের বাড়ি তুমব্রুর পশ্চিমপাড়ায়।

সে বলে, ‘সকাল থেকে কয়েক দফা গোলার শব্দ শুনেছি। এখনও চলছে। হেঁটে যাচ্ছিলাম গাড়ির স্টেশন পর্যন্ত। এর ভেতরেই দুই দফা গোলার শব্দ শুনলাম।’

জান্নাতুল আরও বলে, ‘গেল রাতেও গোলার শব্দ ভেসে এসেছে। ঘুমানোর কোনো সুযোগ নেই। মুহুর্মুহু গোলার শব্দ আসছে বাড়ির কাছে। মনে হচ্ছিল এই বুঝি পড়ছে।’

ইয়াসমিন ও জান্নাতুলের স্বরে কথা বলেছে ফাতেমা বেগমও। তার ভাষ্য, ‘এত দূরের কেন্দ্রে যাব কী করে, তা ভাবা হয়নি। প্রথম দিন লোকদেখানো বাসের ব্যবস্থা করলেও এখন তা আর দিল না। এখন লোকাল গাড়ির অপেক্ষায়। ঠিকমতো কেন্দ্রে পৌঁছাতে পারব কি না ভাবছি।’

তুমব্রু বাজারের দোকানদার মোহাম্মদ আতিক বলেন, ‘ভোর ৫টার পর থেকে এ পর্যন্ত ৯ বার ভারী গোলার শব্দ ভেসে এসেছে। মানুষ প্রতিদিন এসব শব্দ শুনতে শুনতে অভ্যস্ত। তাই তেমন সাড়া নেই, তবে স্কুলশিক্ষার্থী বা শিশুরা ভয় পায়।’

ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর আজিজ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘৩০০ পরিবারের প্রায় দেড় হাজার মানুষ সরানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাদের কোথায় রাখা হবে, সেই স্থান নির্ধারণে আজ ঘুমধুমে আসছেন বান্দরবান জেলা প্রশাসক ইয়াসমিন পারভিন।’

তিনি আরও বলেন, ‘সকালেও গোলার শব্দ ভেসে এসেছে। কোনোভাবে যাতে মিয়ানমারের কোনো নাগরিক আসতে না পারে, সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে।’

মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেলে সীমান্তের শূন্যরেখায় এক রোহিঙ্গা নিহতের পর টানা তিন দিন তুমব্রু সীমান্তে গোলার শব্দ শোনা যাচ্ছে।

প্রায় এক মাস ধরে নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তে উত্তেজনা চলছে। সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার থেকে মর্টার শেল, গোলাগুলিসহ নানা ভারী অস্ত্রের আওয়াজে এপারের ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু ও বাইশপারী এলাকার মানুষ দিন কাটাচ্ছে আতঙ্কে।

বেশ কয়েকবার মিয়ানমার রাখাইন রাজ্যের পাহাড় থেকে ছোড়া মর্টার শেল বাংলাদেশের ভূখণ্ডেও এসে পড়েছে।

সবশেষ শুক্রবার রাতে তুমব্রুর কোনারপাড়া সীমান্তে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ছোড়া মর্টার শেলে শূন্যরেখার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এক যুবক নিহত হন। আহত হয় রোহিঙ্গা শিশুসহ ৫ জন।

এর আগে একই দিন দুপুরে এই সীমান্তেই হেডম্যানপাড়ার ৩৫ নম্বর পিলারের ৩০০ মিটার মিয়ানমার সীমান্তের অভ্যন্তরে মাইন বিস্ফোরণে আহত হন বাংলাদেশি এক যুবক।

গত ২৮ আগস্ট তুমব্রু উত্তরপাড়ায় একটি অবিস্ফোরিত মর্টার শেল এসে পড়ে। সেদিনই সীমান্তে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার ও যুদ্ধবিমানকে চক্কর দিতে দেখা যায়।

এরপর ৩ সেপ্টেম্বর মিয়ানমারের দুটি যুদ্ধবিমান ও ফাইটিং হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া দুটি গোলা ঘুমধুম ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় পড়ে। সেগুলো অবিস্ফোরিত থাকায় হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এর তিন দিন পর ফের ওই সীমান্তে ভারী অস্ত্রের বিকট শব্দ ভেসে আসে। সুত্র: নিউজবাংলা

পাঠকের মতামত

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ও চোরাচালান ঠেকাতে বিজিবির বুলেটপ্রুফ গাড়িতে টহল

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি পয়েন্টে মরিয়া হয়ে সক্রিয় থাকা রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে আর চোরাচালান বন্ধে ...