সায়ীদ আলমগীর,জাগো নিউজ
মঙ্গলবারের (৩১ ডিসেম্বর) সূর্য পশ্চিমাকাশে ডুবে গেলেই প্রতীক্ষা শুরু হবে নতুন বছরের সূর্যোদয়ের। আর সূর্যডুবার এ রাতেই পৃথিবীর হালখাতা থেকে স্মৃতি হবে ২০২৪। বুধবারের সূর্যের সঙ্গে শুরু হবে ২০২৫ সালের পথচলা। ৩৬৫ দিনের সফলতা-ব্যর্থতার হিসাব পেছনে ফেলে সুন্দর আগামীর প্রত্যাশায় ৩১ ডিসেম্বর রাতে ২০২৫ কে স্বাগত জানিয়ে পালন করা হবে থার্টি ফার্স্ট নাইট।
বিগত দেড়যুগ ধরে প্রতিবছর থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষ্যে পর্যটন নগরী কক্সবাজার লোকারণ্য হয়ে ওঠে। তবে, ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা ঢল এবং করোনা মহামারি থেকে গত অর্ধযুগেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে প্রকাশ্যে থার্টি ফার্স্ট উদযাপন। তবুও থার্টি ফার্স্ট এবং বছরের শেষ সূর্যাস্ত দেখতে কক্সবাজার সৈকত এবং আশপাশের পর্যটন এলাকায় কয়েক লাখ মানুষের সমাগম হয়। এবারও তেমনটি প্রত্যাশা পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও প্রশাসনের।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (পর্যটন সেল) মো. তানভীর হোসেন বলেন, সার্বিক আইনশৃঙ্খলা বিবেচনায় এবারও বিচে বা অন্য কোনো খোলা স্থানে অনুষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) জেলা প্রশাসনের থার্টি ফার্স্ট সংক্রান্ত মিটিংয়ে এ সিদ্ধান্ত হয়। তবে, পর্যটকরা চাইলে নিজেদের মতো করে নতুন বছর উদযাপনে মাঝরাত পর্যন্ত বিচে ঘুরতে পারবেন। এসময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বেশ কয়েকটি টিম মাঠে থাকবে। ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে শহরের অভ্যন্তরে যানজট কমাতেও।
কক্সবাজার নাগরিক ফোরামের সভাপতি আ ন ম হেলাল উদ্দিন বলেন, একবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনে বেসরকারি টেলিভিশন কিংবা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি সৈকতে উন্মুক্ত আয়োজন করতো। তারকা হোটেলগুলো করতো ইনডোর অনুষ্ঠান। যেখানে বহিরাগতরাও অংশ নিতে পারতেন। কিন্তু ২০১৭ সালে একসঙ্গে প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গার আগমন ঘটে। পূর্ব থেকে অবস্থান করা আরও তিন লাখ রোহিঙ্গা নিয়ে উখিয়া-টেকনাফে ৩৩টি ক্যাম্পে এখন রোহিঙ্গার অবস্থান প্রায় ১২ লাখ। ফলে নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় ২০১৭ সাল থেকে থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনে সৈকতে উন্মুক্ত বা বাউন্ডারিভুক্ত অনুষ্ঠান বন্ধ হয়। আর ২০১৯ সালে করোনা মহামারির পর পুরো পর্যটন নগরীই বন্ধ হয়ে যায়। সেই থেকে থার্টি ফার্স্ট নাইটের জমজমাট আয়োজন আর হচ্ছে না কক্সবাজারে।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট ক্লাবের সভাপতি মো. রেজাউল করিম বলেন, এবার থার্টি ফার্স্টে উন্মুক্ত কোনো আয়োজন নেই। তবে তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইজ, সায়মন বিচ রিসোর্ট, রামাদা, মারমেইডসহ আরও কয়েকটি হোটেল ইনহাউজ গেস্টদের জন্য আয়োজন করছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। কিন্তু এবারও বাইরের কোনো অতিথিকে এসব উপভোগের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। তাই এবারের থার্টি ফার্স্ট নাইট বা নতুন বর্ষবরণকেও ‘প্রাণহীন’ বলে উল্লেখ করছেন পর্যটকরা।
ট্যুরস অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজারের (টুয়াক) সভাপতি তোফায়েল আহমেদ বলেন, থার্টি ফার্স্ট নাইট উৎসবের আগেই বড়দিন ও শীতকালীন ছুটি উপলক্ষে পর্যটকে ভরে গেছে কক্সবাজার। পর্যটকরা ভিড় জমাচ্ছেন সমুদ্র সৈকত, ইনানী, হিমছড়ি, রামুর বৌদ্ধপল্লী, চকরিয়ার ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, মহেশখালীর আদিনাথসহ পুরো কক্সবাজারের পর্যটন স্পটে। আর সরকারের নিয়ম মেনে সেন্টমার্টিন যাচ্ছেন দুহাজার পর্যটক। বিগত সময়ে অনেক ভ্রমণপিপাসু সেন্টমার্টিনে অবস্থান করে নতুন বছরকে বরণ করতো।
তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইস লিমিটেডের বিপণন ব্যবস্থাপক ইমতিয়াজ নূর সোমেল বলেন, থার্টি ফার্স্টকে পর্যটকদের কাছে উপভোগ্য করতে বর্ষবরণে আমরা ইনডোর আয়োজন করি। এবারও বলরুমে ইনহাউজ গেস্টদের জন্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা হবে। বড়দিন উপলক্ষে ক্রিসমাস ব্যুফে ডিনার এবং থার্টি ফার্স্ট নাইটে সাশ্রয়ী মূল্যে রাখা হয়েছে গালা ব্যুফে ডিনার। কক্সবাজারে শিশুদের বিনোদন ও রাতে উপভোগ্য কিছু না থাকায় দু’একদিন পর পর্যটকদের ফিরে যেতে হয়, এমন অভিযোগ সবসময় শুনতে হয়।
কক্সবাজার হোটেল-গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, মৌসুমের এসময়ে বেরাতে সবাই কক্সবাজারকেই প্রাধান্যে রাখে। আর কক্সবাজার আসা পর্যটকদের সিংহভাগ এক-দুদিনের ট্যুরে সেন্টমার্টিন যেতেন। কিন্তু এবছর পর্যটক নির্দিষ্ট পরিমাণ করে দেওয়ায় আগের সুযোগ আর নেই। এরপরও ইংরেজি নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে পর্যটক-দর্শনার্থী মিলে কয়েক লাখ মানুষের মিলনমেলা হবে বলে আশা করা যায়। ইতোমধ্যে অনেক হোটেল ৮০-৮৫ শতাংশ বুকিং হয়েছে। এ ধারাবাহিকতা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত থাকবে বলে আশা করা যায়।
কক্সবাজার জেলা রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, অতীতে ভ্রমণকারীরা বেলাভূমিতে দাঁড়িয়ে রাত ১২টা ১ মিনিটে পুরোনো বছরকে বিদায় এবং নতুন বছরকে বরণ করতো। এসময় আতশবাজির ঝলকানি এবং ফানুসের আলোয় ঝলমল হতো অন্ধকারের আকাশ।
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরি খোকা বলেন, রোহিঙ্গা আশ্রয় ও অন্য কোনো ইস্যু কক্সবাজারের সৌন্দর্যকে ম্লান করতে পারেনি। সবাই মিলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সৈকত তীরে থার্টি ফার্স্ট নাইটের অনুষ্ঠান করা গেলে পর্যটনের বিভিন্ন সেক্টরে কয়েকশ কোটি টাকা বাণিজ্য হতো।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষে কক্সবাজার থেকে টেকনাফ সৈকতের কোথাও উন্মুক্ত স্থানে আতশবাজি, ফটকা ফোটানো, কনসার্টসহ গান-বাজনা সব ধরনের আয়োজন বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে হোটেল কর্তৃপক্ষ চাইলে তাদের অতিথিদের জন্য নববর্ষ উদযাপনে ইনডোর আয়োজন করতে পারে। স্বাভাবিক অবস্থায় বালুচরে দাঁড়িয়ে সমুদ্র উপভোগ করতে পারেন পর্যটক বা দর্শনার্থীরা। এসময় ভ্রাম্যমাণ আদালত পর্যটন এলাকায় টহলে থাকবে। নিরাপত্তায় মাঠে থাকবে ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি জেলা পুলিশ ও র্যাব।