প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা অমান্য করে প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনে নতুন করে একের পর অবৈধ ভবনের নির্মাণকাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। আগেরগুলো সংস্কারের পাশাপাশি দ্বীপে নতুন করে আরও ৩০টির বেশি কটেজ ও আবাসিক হোটেল নির্মাণ করা হচ্ছে। তবে পরিবেশ অধিদফতর ও প্রশাসন এতে কোনও হস্তক্ষেপ করছে না।
সম্প্রতি কয়েকটি গবেষণায় সেন্টমার্টিনে সমুদ্রের পানিতে ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়ার ভয়াবহ উপস্থিতি পাওয়া গেছে। সেখানকার জীববৈচিত্র্যের ভয়াবহ চিত্রের বিষয়টিও উঠে এসেছে। সেন্টমার্টিনের স্থাপনা উচ্ছেদে হাইকোর্টের নির্দেশের পরও একের পর নির্মাণ হচ্ছে নতুন স্থাপনা। পর্যটন মৌসুম শুরুর আগে এরই মধ্যে এসব হোটেল-কটেজের অনুমতির জন্য দৌড়ঝাঁপও শুরু হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে কয়েক বছরের মধ্যে সেন্টমার্টিনের জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দ্বীপের জেটিঘাট থেকে দেড় কিলোমিটার পশ্চিমে কোনাপাড়া সাগরের পাড়ে ‘আটলান্টিক’ নামক আবাসিক হোটেলের পাশে নতুন করে তিন তলা ভবনের কাজ চলছে। যদিও এর আগে নির্মিত হোটেলের দুই পাশে আরও দুটি তিন তলা অবৈধ হোটেল ভবন আছে। এ ছাড়া পশ্চিম কোনাপাড়ায় ‘লাবিবা বিলাস’সহ, দক্ষিণপাড়া, পূর্বপাড়া, গলাচিপা এলাকায় বেশকিছু কটেজ ও আবাসিক হোটেলের সংস্কার কাজ চলছে। আরও ৫-১০টি ছোট-বড় স্থাপনার নির্মাণ কাজ চলছে। এরই মধ্যে দ্বীপে এক বর্গকিলোমিটার এলাকায় গড়ে উঠেছে ৮৪টিরও বেশি হোটেল-মোটেল ও ৫০টি রেস্টুরেন্ট।
সেন্টমার্টিনের আটলান্টিক হোটেলের ব্যবস্থাপক মো. আমজাদ হোসেন দাবি করেন, ‘আমরা নতুন করে কোনও ভবনের নির্মাণকাজ করছি না। আগে যেটুকু করেছি সে অবস্থায় পড়ে আছে এখনও। তবে এটা সত্য যে দ্বীপে অনেক জায়গায় নতুন করে ছোটবড় স্থাপনা নির্মাণ কাজ হচ্ছে। লোকজন শুধুই আমাদের দুর্নাম ছড়ায়।’
চলতি বছরে জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনকে বাঁচাতে একটি বৈঠকে দ্বীপের পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা ও ইকোট্যুরিজম উন্নয়নে কর্মপরিকল্পনাসহ ১৩টি সুপারিশ বাস্তবায়নে কঠোরভাবে নির্দেশ দেয়। এসব সুপারিশ বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসক, পরিবেশ অধিদফতরসহ দ্বীপের অধীনস্থ সব সংস্থাকে নির্দেশ পালনকালে প্রতি মাসে কাজের অগ্রগতি প্রতিবেদন দেওয়ার কথাও উল্লেখ করা হয়।
পরিবেশবাদী ও দ্বীপের বাসিন্দারা বলছেন, ওই নির্দেশের পর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে প্রবাল দ্বীপে জেলা প্রশাসক, পরিবেশ অধিদফতর, স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কয়েক মাস তৎপরতা দেখা যায়। সে সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে কয়েক দফা উচ্ছেদ অভিযানও চালায় তারা। কয়েক মাস পর ওই তৎপরতা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে দ্বীপে নতুন করে স্থাপনা নির্মাণের হিড়িক চলছে। মূলত দ্বীপের উন্নয়নের নামে যেসব ইট, বালু ও রডসহ বিভিন্ন মালামাল আনা হয়, যেসব দিয়ে এখানে স্থাপনার কাজ চলছে। অভিযোগ আছে, এই কর্মকাণ্ডে স্থানীয় কিছু জনপ্রতিনিধিও জড়িত রয়েছেন। এভাবে চলতে থাকলে দ্বীপটি একসময় সমুদ্রে তলিয়ে যেতে পারে। বিলীন হতে পারে দেশের মানচিত্র থেকে।
এই বিষয়ে সেন্টমার্টিনের সাবেক চেয়ারম্যান নুর আহমদ বলেন, ‘দ্বীপে যেভাবে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ চলছে সেন্টমার্টিন এখন মৃত্যুর দুয়ারের কাছাকাছি। দালানকোঠার কারণে দ্বীপ দিন দিন দেবে যাচ্ছে। যার কারণে সামান্য বৃষ্টিতে দ্বীপের চারদিকে ভাঙন ধরেছে।’
তিনি দাবি করেন, ‘মূলত দ্বীপে রাস্তাঘাটসহ উন্নয়নমূলক কাজের কথা বলে ইট, রড, সিমেন্টসহ যেসব মালামাল আনা হয়েছে- সেগুলো জনপ্রতিনিধিদের একটি সিন্ডিকেট আবাসিক হোটেল কর্তৃপক্ষের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছে। তারা এই মালামাল নিয়ে স্থাপনা নির্মাণ কাজ চালাচ্ছে।’
এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কেউ কথা বলতে রাজি হননি। তবে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মামুনুর রশিদ বলেন, ‘সেন্টমার্টিনে নতুন করে স্থাপনা নির্মাণের বিষয়টি নজরে এসেছে। আমরা ভবনগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করবো।’
বৈরী আবহাওয়ার কারণে সেন্টমার্টিনে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না উল্লেখ করে টেকনাফ উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. এরফানুল হক চৌধুরী বলেন, ‘খুব দ্রুত সরেজমিন তদন্ত করে অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করা হবে।