শাহিদ মোস্তফা শাহিদ, কক্সবাজার সদর
কক্সবাজার সদর ও পাশর্^বর্তী উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের আওতাভূক্ত ঈদগাঁও পল্লী বিদ্যুৎ সাব জোনাল অফিস এখন দালালের নিয়ন্ত্রণে চলছে। বিভিন্ন অযুহাতে হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা। ভেস্তে যেতে পারে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী ইশতেহারের প্রতিটি ঘরে ঘরে বিদ্যুতায়নের প্রকল্প। এরই লক্ষ্যে বিভিন্ন গ্রামগঞ্জে সম্পূর্ণ ফ্রি বিদ্যুৎ লাইন চালু করার সুযোগে এ দালাল চক্রটি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে বলে জানান ভূক্তভোগীরা। খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়- ঈদগাঁও, চাঁন্দেরঘোনা, কাটা মুরা মসজিদ সংলগ্ন পাহাড়ে ও কোনা পাড়া নিয়ে দু’টি লাইন চালু করা হয়েছে। তাছাড়াও দক্ষিণ মেহেরঘোনাসহ বিভিন্ন স্থানে প্রত্যেক গ্রাহক থেকে পল্লী বিদ্যুৎ কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ৫ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিচ্ছে এ দালাল চক্রটি। স্থানীয় গ্রাহক আবদুল মোনায়েম জানান, টাকা পরিশোধ না করায় বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে না দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। বিদ্যুৎ অফিসে দালাল ছাড়া মিটারের আবেদন, খুটির আবেদনসহ বিভিন্ন সমস্যার জন্য অভিযোগ করতে গেলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে গ্রাহকদের। পল্লী বিদ্যুৎ অফিস যেন চলছে এ দালাল চক্রের নিয়ন্ত্রণে। তাছাড়াও সরকারী নীতিমালা অনুযায়ী নতুন লাইনের ক্ষেত্রে মিটার বাবদ জামানত ফি ৬শ টাকা, সদস্য ফি ৫০ টাকা, আবেদন জমা বাবদ ১শ টাকা, সর্বমোট ৭৫০ টাকা, আবার পুরাতন লাইনের ক্ষেত্রে অনলাইনের আবেদন ফি ১শ টাকা বাড়তিসহ মোট ৮৫০ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও কতিপয় দালাল চক্রের মাধ্যমে অফিস কর্তৃপক্ষ ৪ হাজার থেকে ৬ হাজার ৫শ টাকা পর্যন্ত না দিলে মিটার পাচ্ছে না গ্রাহকরা। এমনকি উক্ত দালালচক্রটি তাদের পছন্দনীয় ইলেক্ট্রনিক্স দোকান থেকেও মালামাল ক্রয় করার চাপ প্রয়োগ করে বলে জানান একাধিক ভূক্তভোগী। এলাকাবাসী জানান, ঘরে ঘরে বিদ্যুতায়নের মাধ্যমে সরকারের সুনাম হওয়ার কথা থাকলেও গ্রাহকদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা আদায় করে নেওয়া ও দালালচক্রের হাতে পড়ে দূর্ণামের পাশাপাশি বর্তমান সরকারের বিদ্যুৎ উন্নয়নের সুনামকে বাধাগ্রস্থ করছে। অন্যদিকে বিদ্যুতের ভেল্কিবাজিতে অতিষ্ট হয়ে পড়েছে গ্রাহকরা। ঈদগাঁওর ব্যবসায়ী মোস্তাক আহমদ, জিয়াউল হক, বেলাল সওদাগরসহ একাধিক ব্যক্তিরা জানান, ১০ ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এরিয়া অফিসে অদক্ষ ও অযোগ্য এজিএম ও জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার এবং বিএস নিয়োগ দেওয়ার ফলে ঈদগাঁওয়ের প্রায় ২৮ হাজার গ্রাহককে পড়তে হয়েছে চরম ভোগান্তিতে। বিদ্যুৎ বিল নিয়ে চলে নানা অনিয়ম। সার্ভিস চার্জসহ নানা বাহানা দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে শত শত টাকা। মানবাধিকার কর্মী বেলাল উদ্দীন বলেন, সুষ্ঠু বন্টন নীতির মাধ্যমে বিদ্যুৎ সার্ভিস না দিয়ে মানুষের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে। এ ব্যাপারে কক্সবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির পরিচালক মোহাম্মদ নাছির উদ্দীনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ঈদগাঁও পল্লী বিদ্যুৎ শাখা বৃহত্তর এরিয়া হওয়ায় সাব জোনাল অফিস দ্বারা গ্রাহকদের পরিপূর্ণ সেবা দেওয়া সম্ভব নয়। তাই ঈদগাঁওকে জোনাল অফিসে পরিণত করা অত্যন্ত জরুরী। এসব বিষয়ে ঈদগাঁওর এজিএম ফায়সাল আহমদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মিটারের ক্ষেত্রে যে বাড়টি টাকা আদায় করা হচ্ছে তা অফিস কর্তৃপক্ষ নয় বরং দালাল সিন্ডিকেটের কথা উল্লেখ করেন। আর নতুন লাইনের ক্ষেত্রে অনিয়মের যে অভিযোগ, তা কক্সবাজার সদর অফিসের নিয়ন্ত্রনে চলছে বলে লাইনটি বিচ্ছিন্ন করে দেন। সচেতন এলাকাবাসী ঈদগাঁও পল্লী বিদ্যুৎ সাব জোনাল অফিসটি দালালমুক্ত করতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
পাঠকের মতামত