শোলাকিয়ায় সন্ত্রাসী হামলার পর অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার দিনাজপুরের এক মাদ্রাসা ছাত্র র্যাবকে বলেছে, ‘ওস্তাদের নির্দেশে অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে’ সে কিশোরগঞ্জে আসে।
ঈদের সকালে দেশের সবচেয়ে বড় জামাতের আড়াইশ মিটার দূরে পুলিশের বোমা হামলার এই ঘটনায় দুই কনস্টেবল নিহত হন। পরে গোলাগুলির মধ্যে বাড়ির জানালা দিয়ে গুলি ঢুকে কেড়ে নেয় স্থানীয় এক গৃহবধূর প্রাণ।
হামলার পর পুলিশের অভিযানের মধ্যে সন্দেহভাজন এক হামলাকারীও নিহত হন, যার ঢোলা পোশাকে অস্ত্র রাখার ‘বিশেষ পকেট’ থাকার কথা জানিয়েছে পুলিশ।
সন্দেহভাজন হামলাকারীদের মধ্যে দুইজনকে আটক করেছে পুলিশ; আর গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পিস্তলসহ র্যাবের হাতে ধরা পড়েন এক যুবক।
র্যাব-১৪ এর মেজর সাইফুল সাজ্জাদ জানান, শফিউল ইসলাম ওরফে আবু মোকাদ্দেল নামের ১৯ বছর বয়সী ওই যুবককে তারা আহত অবস্থায় আটক করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছেন।
“সে বলেছে তার বাড়ি দিনাজপুরর জেলা ঘোড়াঘাটে এবং সে মাদ্রাসার ছাত্র। সে আলিম পরীক্ষা দিচ্ছিল, কিন্তু শেষ করে নাই।”
তার সাথে যারা পাঁচজন ছিল, সে বলেছে, তাদের কে সে চেনে না।
শফিউল র্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, ওই হামলায় তার সঙ্গে আরও পাঁচজন ছিলেন, যাদের তিনি আগে থেকে ‘চিনতেন না’।
“তাদের যে ওস্তাদ, সে তাদেরকে এখানে অ্যাসাইনমেন্ট দিয়েছে।”
তবে সেই ‘অ্যাসাইনমেন্ট’ ঠিক কী ছিল, সে বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো ব্যাখ্যা এই র্যাব কর্মকর্তা দিতে পারেননি।
সেই ‘আইইডি’
এর আগে বিভিন্ন স্থানে জঙ্গিরা যে ধরনের বিস্ফোরক ব্যবহার করেছিল, শোলাকিয়াতেও তাই করা হয়েছে বলে র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “জঙ্গিরা আইইডি (ইম্প্রোভাইসড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) ব্যবহার করে থাকে। এগুলো হাতে তৈরি এবং উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন। শোলাকিয়াতেও তাই হয়েছে।”
এক সপ্তাহ আগে গুলশানের ক্যাফেতে জঙ্গি হামলার ঘটনাতেও আইইডি ব্যবহার করা হয়েছিল বলে সে সময় সেনা সদর দপ্তর থেকে বলা হয়েছিল।
এছাড়া গতবছর ইমামবাড়ায় শিয়া সম্প্রদায়ের তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতির সময় যে হামলা হয়েছিল, হাতে তৈরি গ্রেনেড ব্যবহার করা হয়েছিল সেখানেও।
ওই দুই হামলাতেই জেএমবির জঙ্গিরা জড়িত বলে পুলিশের ভাষ্য।
‘গুলি খেয়েও নির্বিকার’
র্যাব-১৪ এর মেজর সাইফুল সাজ্জাদ জানান, শোলাকিয়ার ঘটনার পর মাদ্রাসা ছাত্র শফিউলকে রক্তাক্ত অবস্থায় আটক করা হলেও তাকে দেখাচ্ছিল ‘নির্বিকার’।
“তার সাথে কথা বললাম, তার মধ্যে কোনো ভয়ই নাই। সে বুলেটবিদ্ধ; তার মধ্যে কোনো যন্ত্রণা নেই। এর অর্থ হল, তার মগজ ধোলাই করা হয়েছে এমন ভাবে, যে এই কাজটাকেই সে মনে করেছে ইসলামের পথে জিহাদ, যদিও সত্যিকার অর্থে ইসলাম অ্যালাউ করে না।”
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন,
“এই কর্মকাণ্ডগুলো বাংলাদেশে নতুন করে শুরু হয়েছে, যারা এই কাজগুলো করছে তারা ধর্মের নামেই করছে।”
যারা এই দেশের ‘পতাকা ও মানচিত্র মানে না’, তারাই এ হামলা চালিয়েছে বলে মন্তব্য করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।
এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
পাঠকের মতামত