প্রকাশিত: ১১/০৮/২০২২ ৭:০৩ এএম


১৮ এপ্রিল-২০২২ইং তারিখ রাতে আমরা হোটেল দি পাম ডি’র এ ছিলাম।হোটেলটির অবস্থান নতুন দিল্লি রেল স্টেশনের খুব নিকটেই।বউ বাচ্চাকে রুমে রেখে আমি ১৯ তারিখ সকাল সকাল বের হয়ে রেলস্টেশনের ঠিক উল্টো দিকের মানি এক্সচেঞ্জের দোকান থেকে কিছু ডলার চেন্জ করে রুপি নিলাম।পাহাড়গন্জের এই জায়গায় অনেকগুলো মানি একচেন্জ বা মুদ্রা বিনিময়ের দোকান রয়েছে।রেটও ভালো পাওয়া গেল এক ডলারে ছিয়াত্তর রুপি হারে পাওয়া গেল যা বাংলাদেশী ৯৩ টাকার সমান।এর পরে চলে গেলাম রেলের টিকেট বুকিং কাউন্টারে।এবার টিকেট পেতে তেমন কস্ট হলো না।আশপাশের দালাল চক্রের লোকজনও আমাকে ডাকাডাকি করে সুবিধা করতে পারলো না।সোজা চলে গেলাম টিকেট বুকিং  কাউন্টারে। কাউন্টারে ডুকতে ঝুড়িতে বুকিং স্লিপ পাওয়া যায়।এখান থেকে স্লিপ নিয়ে তা চাহিত তথ্য যেমন ট্রেন নাম্বার,ট্রেনের নাম,যাত্রী নাম ঠিকানা ইত্যাদি দিয়ে পূরণ করে কাউন্টারে জমা দিলে কাউন্টারম্যান রিজার্ভেশন টিকেট ইস্যু করে।

আমাদের ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিল বলা চলে আমরা ঐদিন বিকাল পাঁচটা পয়তাল্লিশ মিনিটের দিল্লি-কালকা শতাব্দী এক্সপ্রেস(গাড়ি নং-১২০০৫ ) এর টিকেট পেয়ে যায়।যেহেতু চন্ডীগড় থেকে একদিন পর আবারও দিল্লি চলে আসার প্লান আছে সেহেতু এই বার বুদ্ধি করে আসার টিকেটও বুক করলাম দিল্লি রেলস্টেশন থেকেই। যাবো ১৯ তারিখ ফিরবো ২১ তারিখ।বাড়াও বেশি রাখলো না মনে হলো।আমাদের দুই জন প্রাপ্ত বয়স্কের ভাড়া নিল যাওয়ার জন্য ষোলশ পঞ্চাশ রুপি আর আসার জন্য পনেরশ সত্তর রুপি।আমাদের ছেলের বয়স যেহেতু পাঁচ বছরের কম সেহেতু তার জন্য কোন আলাদা টিকেট নিতে হয়নি।তবে রিজার্ভেশন স্লিপে ছেলের তথ্য দেওয়া ছিল বাধ্যতামূলক।ইন্ডিয়ান রেলওয়েতে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের টিকেট নিতে হয় না অর্থ্যাৎ রেল ভ্রমণ ছোটদের জন্য একদম ফ্রি।টিকেট সংগ্রহ করে হোটেল রুমে চলে আসলাম।আসার পথেই ঐদিন রুম চেক  আউটের বিষয়টিও রিসিপশনে বলে আসলাম।আমাদের ট্রেন যেহেতু বিকাল পৌনে ছ’টায় ছাড়বে তাই হোটেল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করলাম একটু দেরিতে রুম ত্যাগ করার বিষয়টি।তারা আমার অনুরোধ রাখলেন।বিকাল ৩ টায় আমরা রুম থেকে বের হয়ে হেটেই দিল্লি  রেলস্টেশনে চলে গেলাম।মাত্র পাঁচ মিনিটে আমরা আমাদের প্লাট ফরমের সামনে পৌছালাম।ট্রেন আসতে এখনো পাক্কা দু’ঘন্টার অধীক সময় বাকি।

পান্জাব বিশ্ববিদ্যালয়
হেঁটে হেঁটে রেল স্টেশন দেখা শুরু করলাম।বেশ বড়সড় ভিআইপি লাউঞ্জ দেখে কৌতূহলবশত জিজ্ঞেস করলাম এখানে প্রবেশের কুদরত কী?কাউন্টার লেডি জানতে চাইলেন আমাদের কাছে ট্রেনের রিজার্ভেশন কোন টিকেট আছে কিনা।আমি হ্যাঁবোধক উত্তর দেওয়াতে আমাকে টিকেটসহ প্রতিঘন্টার জন্য বিশ রুপি জমা দিতে বললেন।টিকেট কেটে ভিতরে গিয়ে দেখি রেস্তোরাঁ ও ওয়েটিং একই জায়গায়।বেশ আরাম করে বাকি দুই ঘন্টা লাউঞ্জে কাটিয়ে দিলাম।পাশে আরেক জায়গায় দেখি ক্লোক নামক কাউন্টার, জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম যাত্রীরা এখানে লাগেজ জমা রাখেন।যদি কেউ এক প্রদেশ থেকে দিল্লি হয়ে অন্য প্রদেশে যায় তবে মাঝখানের বিরতীকালীন সময়ে  সে তার ব্যাগ ব্যাগেজ ক্লোকে জমা রেখে প্রয়োজনীয় কাজ কিংবা বিশ্রাম নিতে পারে।বিষয়টি আমার কাছে বেশ আকর্ষনীয় ও নিরাপদ মনে হলো।তার একটু পরেই একটি উন্মুক্ত লাইব্রেরি রয়েছে।ওয়েটিং টাইমে কারো ইচ্ছে হলে এখানে পুস্তক পড়েও সময় পার করতে পারেন।তার পাশে বই বিক্রি করারও একটা বুক শপ আছে কিন্তু রেট দেখে মনে হলো অরিজিনাল প্রিন্ট।বুকশপটা সাদামাটা দেখে আমাদের ঢাকার নীলক্ষেতের মত মনে করে একটা বই হাতে নিয়ে দাম জিজ্ঞেস করাতে দাম বলল পঁচিশ’শ রুপি’র মত।যাক বেড়াতে এসে এত দামী বই কিনার কোন মানে হয় না বলে মনকে বোঝালাম। এক্ষেত্রে আমার স্ত্রীও তড়িৎ আমাকে বই না কেনার পক্ষে সমর্থন দিলেন।স্টেশন দেখা প্রায় শেষ এখন রইল বাকি রেল গাড়ি দেখা।হলুদ রঙ্গের আলপনা আকাঁ গাড়িটির নাম রাজধানী এক্সপ্রেস। ভারতীয় রেলের সব থেকে বিলাসবহুল ট্রেন নাকি এটি।এর চেয়ে একধাপ নিচের ট্রেন শতাব্দীর এক্সপ্রেস।আপাততঃ আমরা রাজধানী এক্সপ্রেস নামক বিলাসবহুল ট্রেনটির সাথে একটি সেলফি তুলে নিজেদের কিঞ্চিৎ ধন্য করার ব্যর্থ চেস্টা করলাম।


ঠিক সময়ে আমাদের দিল্লি -কালকা শতাব্দী এক্সপ্রেস গাড়িটি প্লাটফর্মে চলে আসছে।ট্রেনেই তাদের আতিথ্য গ্রহন করতে করতে প্রায় তিন ঘন্টায় দুইশত চল্লিশ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে আমাদের কাঙ্ক্ষিত শহর চন্ডীগড় এসে পৌছালাম।বুকিং ডটকমের মাধ্যমে নিউ চন্ডীগড়ে আমাদের হোটেল বুক করা ছিল।চন্ডীগড় রেল স্টেশন থেকে বের হয়ে উবার যোগে সোজা আমাদের বুক করা হোটেল হলি ডে হোমস গিয়ে পৌছালাম।ঐ দিন রাতে আপাততঃ আর কোথাও বের হলাম না।হোটেল হলিডে হোমস নামে হোটেল হলেও এটি ছিল মূলত ব্যক্তি মালিকানাধীন একটি রেস্ট হাউস।মালিক ভদ্রলোক সরকারের অবসরপ্রাপ্ত সাবেক কর্মকর্তা। পাশাপাশি দুটি বাড়ির একটিতে উনি পরিবার নিয়ে থাকেন বাকি চারটা ইউনিট বাড়ায় দেন।উনার ছেলে এটি দেখবাল করেন।একজন নিয়মিত বাবুর্চি রয়েছেন উনি গেস্টদের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন পদের খাবার রান্না করে পরিবেশন করেন। প্রথমে একটু অন্যরকম লাগলেও পরে মালিকের ছেলে ম্যানেজারের কাছ থেকে বিস্তারিত জেনে আশ্বস্ত হলাম।রাতের খাবার ওখানে খেলাম।একেবারে ঘরোয়া পরিবেশের রান্না। খাওয়া দাওয়া শেষ করে আমাদের পরের দিনের সিটি ট্যুরের প্লান ম্যানেজারের সাথে শেয়ার করলে উনি নিজেই আমাদের আরেকটি রিভাইজড বাজেট প্লান দেন।আমরা সে অনুযায়ী পরের দিনের ট্যুর সেট করে ঘুমিয়ে পড়ি।এতক্ষণে বুঝতে পারলাম বুকিং ডটকমে কেন এই হোটেলের এত ভালো রিভিউ। লোকটা আসলেই বেশ ফ্রেন্ডলি।


চন্ডীগড়ঃ এটি ভারতের কেন্দ্র শাসিত আটটি অঞ্চলের অন্যতম।বর্তমানে এলাকাটি তার প্বাশর্বতী দুটি রাজ্য পান্জাব ও হরিয়ানা’র রাজধানী হিসাবে বেশ খ্যাতি কুড়িয়েছে।ভারতের তথা বিশ্বের কয়েকটি পরিকল্পিত নগরী মধ্যে একটি হলো চন্ডীগড়। ওল্ড চন্ডীগড় ও নিউ চন্ডীগড় নামে প্রধান দুটো অংশে চন্ডীগড় বিভক্ত। পাঞ্চকোনা, মোহালী ও চন্ডীগড় শহরের অংশ হিসাবে পরিচিত। চন্ডীগড়ের লোকসংখ্যা প্রায় ষোল লক্ষ কিন্তু তাদের মাথাপিছু আয় সর্ব ভারতে সব থেকে বেশি।এটি দিল্লি থেকে প্রায় দুইশ ষাট কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।আধুনিক এই শহরটি সর্বমোট পয়ষট্টি সেক্টরে বিভক্ত। সেক্টর এক এ অবস্থিত কেপিটোল কমপ্লেক্স যা ২০১৬ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যের স্থান হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান বিভক্ত হওয়ার ফলে তৎকালীন পান্জাবের রাজধানী লাহোর শহরটি পাকিস্তান অংশে চলে গেলে ভারতের তখনকার শাসকগোষ্ঠী ভারতীয় পান্জাব প্রদেশের রাজধানী হিসাবে এই নগরটি পরিকল্পনা করেন।একজন সুইজ-ফরাসী নাগরিক স্থাপত্যবিদের সার্বিক পরিকল্পনায় নগরটিকে গড়ে তোলা হয়েছিল।২০১৫ সালের এক জরিপে চন্ডীগড়কে ভারতের সব থেকে সুখী নগরী হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।পুরো শহরটি পরিকল্পনা অনুযায়ী গড়ে তোলা হয়েছে বলেই এটিকে সুন্দরের নগরী বা সিটি অব বিউটিও বলা হয়ে থাকে।২০১৬ সালে চন্ডীগড় ভারতের দ্বিতীয় পরিচ্ছন্ন নগরী হিসাবে স্বীকৃতি পায়।

পরদিন ভোরবেলা আমরা সিটি ট্যুরে বের হলাম।কি সুন্দর সকাল চারদিকে কেবল সবজি বাগান আর পরিপাটি রাস্তা ঘাট।কোথাও কোন শব্দ দূষণ কিংবা যানজট চোখে পড়ল না।একটি অটো নিয়ে আমরা প্রায় দশ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলাম মাত্র দশ বারো মিনিটে।চওড়া রাস্তায় সবাই ট্রাফিক নিয়ম মেনে গাড়ি চালান। রাস্তার প্রতিটা মোড় এমনভাবে তৈরি করা যাতে আড়াআড়ি যান চলাচলের কারণে প্বার্শের রাস্তার গাড়ির থেমে থাকতে না হয়।রাস্তার উভয় পাশে সারি সারি গাছ থাকি রাস্তা ওপারের বড় বড় সহজে চোখে পড়েনা।কিছুদূর পর আবার বড় বড় মাঠ এতে শিশুরা খেলছে আবার বড়রা হাঁটছে।মুরুব্বিদের অনেকে আবার রাস্তায় সাইকেল চালাচ্ছেন।যতই দেখছি কেবল অভিভূত হচ্ছি। আমাদের প্রথম গন্তব্য শুকনো লেক।দেখতে দেখতে লেকের পাড়ে চলে আসছি। 
শুকনো লেকঃ নামে শুকনো লেক হলেও এটি মূলত পানিতে টইটম্বুর।হিমালয়ের শিবালিক উপত্যকায় বাঁধ দিয়ে এই জলাধার নির্মাণ করা হয়েছে। লেকে বোট জার্নি করার ব্যবস্থাও রয়েছে।লেকটিতে প্রবেশে কোন টিকেট নিতে হয়না লেকটির উভয় পাশে পথচারীদের হাটার সুব্যবস্থা রয়েছে।এর পাশের সবুজ অরণ্যে বিচিত্র ধরনের পাখিদের দেখা মিলল।পাখিদের কেউ বিরক্ত করে না  দেখে হয়ত এরা মানুষের খুব কাছেই ভিড়ে।কাঠবিড়ালি থেকে টিয়া পাখি পর্যন্ত কি নেই এই লেক এলাকায়।পার্ক কর্তৃপক্ষ শিশুদের বিনোদন উপযোগী বেশ কিছু খেলনা সামগ্রী রেখেছেন লেকে একেবার প্রবেশ মুখে।তবে বোট রাইড কিংবা শিশু সবই ভাড়ায় চালিত।হ্রদের সৌন্দর্য উপভোগ করে আমরা চলে আসলাম একটু দূরে বার্ডস পার্কে।চন্ডীগড়ের আরেকটি পর্যটন স্পট এটি।বিশালাকৃতির গাছ পালা দেখলে মনে হবে আপনি হয়ত আমাদের লাউয়াছড়া বনের ভিতরে আছেন।পুরোদস্তুর একটি আধুনিক শহরের প্রাণকেন্দ্রে কতবড় প্রাকৃতিক পার্ক গড়ে তোলা হল।কাঁটাতারের ভিতরে সাম্বা চড়ে বেড়াচ্ছে। এগাছ থেকে ঐ গাছে ময়ূর উড়াল দিচ্ছে।বিশালদেহী খাঁচার ভিতরে ডুকে বন্দী পাখি দেখার অসাধারণ অনূভুতি এখানেই পাওয়া গেল।হাতে সময় কম থাকায় যদিও আমরা বেশি সময় এখানে দিতে পারি নাই।পুরো পার্কটি হেঁটে হেঁটে দেখলে প্রায় তিন চার ঘন্টা মত সময় লাগতে পারে।
এরপর আমরা চলে গেলাম রকগার্ডেনে।নেক চাঁদ নামক তৎকালীন সরকারি এক কর্মকর্তা ১৯৫৭ সালে তার একক প্রচেস্টায় পার্কটি নির্মাণ করেন। প্রায় চল্লিশ একর জায়গাজুড়ে পার্কটির অবস্থান। বাড়ি ও বিভিন্ন কলকারখানার পরিত্যক্ত জিনিস পত্র দিয়েই এই পার্কটি নির্মাণ করা হয়েছে।পরবর্তীতে ১৯৭৬ সালে ভারতীয় সরকার পার্কটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়। পাথরের ব্যবহার কবে থেকে এবং পাথর দিয়ে কতকিছু যে করা যায় তা দেখতে হলে আপনাকে এই রকগার্ডেনে একবার আসতেই হবে।গুহা আকৃতি ছোট গেইট দিয়ে প্রবেশের পর থেকে বের হওয়া অবধি কেবল বিষ্ময়কর নিদর্শন চোখে পড়বে।কোনটা মনুষ্য আকৃতির কোনটা আবার দালান।সবই পাথরের তৈরি।পাথরের তৈরি বিভিন্ন রকমের প্রাচীন অস্ত্র সস্ত্রের দেখাও মিলবে এই পার্কটিতে।মাঝখানে পাথরের তৈরি ঝর্ণা আগত দর্শনার্থীদে বাড়তি আনন্দ দেয়।পার্কে প্রবেশমূল্য জন প্রতি একশ রুপি।২০২১ সালে মুক্তি পাওয়া হিন্দি মুভি “শেরশাহ” এর শুটিং এই পার্কেই করা হয়েছিল।সরকারি হিসাব মতে প্রতিদিন প্রায় পাঁচ হাজার দর্শনার্থী এই স্থানটি পরিদর্শন করেন।
এলান্টি শপিং মলঃ শুকনা লেক,বার্ড পার্ক,কেফিটোল ভবন ও রকগার্ডেন ভ্রমণ শেষে আমরা চলে আসলাম উত্তর ভারতের সপ্তম ও সর্ব ভারতের দশম বৃহত্তম শপিংমল এলান্টিতে।প্রাশ বিশ একর জায়গাজুড়ে মার্কেটটি নির্মিত হয়েছে। বাহ্যিক সৌন্দর্য দেখে বুঝা যায় এটি আসলেই একটি অদ্বিতীয় শপিং মল।দেশী বিদেশি বিভিন্ন ব্রান্ডের শোরুম রয়েছে এই মার্কেটে।শিশু উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়েছে আধুনিক মানের কিডস জোন।আমরা দুপুরের খাবার এই শপিংমলের কেএফসি রেস্টুরেন্ট সেরে নিলাম।তারপর আরো কিছুক্ষণ মার্কেটে ঘুরাঘুরি পর রওয়া দিলাম।রোজ গার্ডেন দেখতে।
রোজ গার্ডেনঃ ভারতে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডা.জাকের হোসেন ১৯৬৭ সালে পার্কটি তৈরি করে।প্রায় চল্লিশ একর জায়গাজুড়ে পার্কটি নির্মাণ করা হয়েছে।এতে মোট আট’শ পঁচিশ প্রজাতীর বত্রিশ হাজার পাঁচ’শত গোলাপগাছ রয়েছে।বিনোদন কেন্দ্র হিসাবে স্থানটি সকলের কাছে বেশ সমাদৃত মনে হলো।নির্মল বায়ু খোলা আকাশ আর শত সহস্র গোলাপের সুরভিতে এখান পরিবেশ সবসময়ই থাকে উপভোগ্য। পার্কটি আবাল বৃদ্ধ বনিতা সকলকে খুব সহজেই আকর্ষণ করে।আমরাও এখানে শোয়ে বসে বেশ খানিকক্ষণ সময় ব্যয় করলাম।এর পর আমরা চলে গেলাম ভারতের অন্যতম প্রাচীন বিদ্যাপিট পান্জাব বিশ্ববিদ্যালয় দেখতে।
পান্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ঃ ১৮৮২ সালে তৎকালীন ভারতীয় উপ মহাদেশের লাহোরে এটি প্রতিষ্টিত হয়।১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান বিভক্ত হওয়ার পর নতুন ক্যাম্পাসে পান্জাব বিশ্ববিদ্যালয়কে স্থানান্তর করা হয়।বর্তমান ক্যাম্পাসটি চৌদ্দ এবং পঁচিশ নম্বর সেক্টরের প্রায় পাঁচ’শত পঞ্চাশ একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত।এতে বর্তমানে আটাত্তরটি বিভাগে শিক্ষার্থীরা অধ্যয়ন করছেন। দূরশিক্ষণ কিংবা অনলাইন ভিত্তিক পাঠ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি একক বৈশিষ্ট্যপূর্ণ পদ্ধতি। ১৯৭১ সাল থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয় দূরশিক্ষণ পদ্ধতিতে পাঠদান করে আসছেন।প্রতিবছর প্রায় চব্বিশ হাজার শিক্ষার্থী বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের দূরশিক্ষণ পদ্ধতিতে বিদ্যা অর্জন করে থাকেন। পুরো ক্যাম্পাসটি সবুজের সমারোহ। যে দিকে চোখ যায় কেবল সবুজ আর সবুজ।এত সুন্দর ক্যাম্পাসে পড়া লেখা করার সুযোগ পাওয়া সত্যিই সৌভাগ্যের ব্যাপার মনি করি।ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং,তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা সরাজ,ভারতের প্রথম মহিলা মহাকাশচারী কল্পনা চাওলা,ক্রিকেটার যুবরাজ সিং রা সবাই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন।গান্ধী ভবন এই ক্যাম্পাসের সৌন্দর্যকে নতুন মাত্রায় নিয়েগেছে।ক্যাম্পাসে ঘুরাঘুরির পরে চলে আসলাম সতের নম্বর সেক্টরে শপিং মলে।এটি মল নামেই অধিক পরিচিত। এখানেও দেশি-বিদেশি বিভিন্ন নামীদামী ব্যান্ডের দোকান রয়েছে।পর্যটকরা বেশিরভাগ সময়ই এখান থেকে তাদের প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করেন।সন্ধ্যার পরপরই উন্মুক্ত জায়গায় আয়োজন করা হয় মিউজিক ফাউন্টেন শো।এটি অতন্ত মনোমুগ্ধকর একটি ঝর্ণা প্রদর্শনী।গানের ভিডিও ঝর্ণার উপচে পড়া পানিতে বেশ চমৎকার দেখা যায়।পুরো জায়গাটা উন্মুক্ত হওয়ায় শিশুরা এখানে বেশ আনন্দের সহীত দৌড় ঝাপ করতে পারে।চন্ডিগড়ের সিটি ট্যুর আপাতত শেষ হিমাচল প্রদেশের রাজধানী সিমলা দেখার পালা।
পরদিন ভোরবেলা চন্ডীগড় থেকে আমরা ভাড়ায় নেওয়া কারে চড়ে হিমাচল প্রদেশের রাজধানী সিমলা’র উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম।চন্ডীগড় থেকে সিমলার দুরত্ব প্রায় একশ বিশ কিলোমিটার। আমরা ভোর ৬ টায় নিউ চন্ডীগড় থেকে রওয়া দিয়ে দুপুর বারটার মধ্যে হিমাচল প্রদেশের অন্যতম প্রাকৃতিক পর্যটন স্পট কুফরী’র এডভেঞ্চার রিসোর্ট এ পৌছালাম।চমৎকার পাহাড়ী প্রাকৃতিক দৃশ্য।পাহাড়ের একবারে চূড়াই হ্যালিপ্যাড বানানো হয়েছে।এখান থেকে যে কেউ হ্যালিকপ্টারে করে পুরো সিমলা শহর ঘুরে দেখতে পারেন।এখানে শিশুদের জন্য বিভিন্ন রকমের রাইড ও বড়দের জন্য নানারকম এডভেঞ্চারাস কর্মকান্ড যেমন হ্যালিকপ্টার ভ্রমণ,প্যারাগ্লাইডিং,রোপ গেমস এর ব্যবস্থা রয়েছে।আপেলের তৈরি এক ধরনের চিপসও এখানে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছি দেখলাম ইদানিং।কুফরি এলাকায় তাপমাত্রা প্রায় তের থেকে পনের ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠানামা করছিল।অন্যদিকে চন্ডীগড় ও এর প্বার্শবর্তী এলকার তামমাত্রা ছিল প্রায় উনচল্লিশ বা চল্লিশ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রার হঠাৎ এই পরিবর্তনে আমার মাথা ব্যাথা শুরু হয়।পরে ঔষধ খেয়ে মাথা ব্যাথা কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা হয়।এই তের বা পনের ডিগ্রি তাপমাত্রাকে স্থানীয় লোকদের কাছের গরম কালই বলা চলে তবে আমাদের জন্য ছিল বেশ ঠান্ডা।কুফরি ভ্রমণ শেষে আমরা চলে আসলাম হিমাচল প্রদেশের রাজধানী সিমলা শহর।পাহাড়ের পাদদেশে কি সুন্দর মনোরম শহর।প্রতিটা ভাঁজে ভাঁজে দাঁড়িয়ে আছে শত সহস্র রঙ্গিন দালান।দূর থেকে দেখলে মনে হয় এক দালানের উপর যেন আরেক দালান তৈরি করা হয়েছে।আমরা হোটেল ময়ূরে উঠার কথা থাকলেও তাদের সাময়িক অসুবিধা’র কারণে মল রোডের সাথেই আরেকটা হোটেলে উঠলাম। হোটেল বুকিং এ গিয়ে দেখি এরা কোন বিদেশি নাগরিককে রুম ভাড়া দিবেন না!পাহাড়ের এতটুকু উপরে বউ বাচ্চা নিয়ে এক হোটেল থেকে আরেক হোটেলে যাওয়া আমার জন্য বেশ কস্টকর হয়ে পড়ছিল।অন্যদিকে ঠান্ডাজনিত মাথা ব্যাথাও বেশ ভোগাচ্ছিল আমাকে।বাইরে বেশ ঠান্ডা।তখন রাত আনুমানিক সাতটা।বিদেশিদের রুম ভাড়া না দেওয়ার কারণ হিসাবে যা জানতে পারলাম তা হল তখনো কোভিড-১৯ এর বিধি নিষেধ পুরোপুরি সব প্রদেশে হয়ত উঠে যায়নি।তাই তারা আপাততঃ ভারতীয় নাগরিকদের জন্য রুম ভাড়া দিচ্ছিল।আমাদের যেটা ভুল হয়েছিল তা হল আমরা প্রতিটা জায়গায় যাবার আগেই হোটেল বুকিং করলেও এই সিমলাতে আসার আগে কোন হোটেল বুকিং করিনি।তার কারণ ছিল চন্ডীগড়ের আমার হোটেল ম্যানেজার আমাদের জন্য উনার পরিচিত হোটেল বুক করে আমাদের সেই ময়ুর হোটেলে পাঠিয়েছিল কিন্তু ময়ূর হোটেল কর্তৃপক্ষ জানতেন না যে আমরা বিদেশি নাগরিক। যাই হোক কোন রকম মল রোডের পাশেই আরেকটা হোটেল পেয়ে যায়।রুম ভাড়া নিল আঠারশ রুপি।রাতের সিমলা দেখার জন্য বের হলাম,মল রোড থেকে নিচের দিকে থাকালে চোখে পড়ে আলোকিত এক মায়াবী নগরী।হালকা বৃষ্টি পড়ছিল রাতের বেলায় সুতরাং আমরা বেশিদূর না হেঁটে রাতের খাবার খেয়ে রুমে চলে আসলাম।সিমলার হোটেলে এসি নেই তবে ওয়াটার হিটার অবশ্যই থাকতে হয়।পরদিন সকালে আমরা পাশ্ববর্তী কিছু জায়গা হেঁটে গাড়ি নিয়ে সোলান শহরের উদ্দেশ্যে রওয়া করি।সোলান হিমালয় প্রদেশের একটি জেলা শহর।পুরো সিমলা শহর অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ মনে হলেও এটি খুবই পরিচ্ছন্ন একটি শহর।যেহেতু পুরো শহরটি পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত তাই মূল সড়ক ছাড়া সবখানে পায়ে হেটেই ভ্রমণ করতে হয় পর্যটকদের।অন্যান্য শহরের মত রিকসা কিংবা অটো ধরণের কোন যানবাহনের দেখা মিলবে না এই সিমলা শহরে।ছোট শিশু পরিবহনের জন্য কিছু লোকজন ভাড়ায় সাপোর্ট দিয়ে থাকে।তারা তাদের বেবি চেয়ার বা ট্রলিতে করে আপনার শিশুকে আপনার সাথে বহন করে নির্দিষ্ট গন্তব্যে নিতে সাহায্য করেন।

তবে তাদের ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট বেশ চমৎকার। কোথাও কোন যানযট চোখে পড়েনি।পর্যটকদের গাড়ি রাখার জন্য রিডজ এলাকায় বহুতল বিশিষ্ট গাড়ি পার্কিং এর ব্যবস্থা রয়েছে।রাতে আমাদের গাড়ির ড্রাইভারও ঐ পার্কিং তার গাড়িসহ অবস্থান করছিল।সকালে গাড়ি নিয়ে সোলান হয়ে বিকালে পৌছালাম হরিয়ানা প্রদেশের পিন্জুর গার্ডেনে।ঐ গার্ডের ভিতরে একটা বারসহ রেস্টুরেন্ট রয়েছে আমরা একটু দেরিতে ওখানে দুপুরের খাবার খেলাম।তাদের আতিথেয়তা ও পরিবেশনা ভালোই উপভোগ করলাম।পিন্জুর গার্ডেন সতেরশ শতাব্দীতে নির্মিত মুঘল স্থাপত্য নিদর্শনের অন্যতম।তৎকালীন মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব এর গ্রীষ্মকালীন অবকাশ কেন্দ্র ছিল বাগানটি।অনেকটা তাজ মহলের আদলে নির্মিত কয়েকটি সাদা মার্বেল পাথরের অবকাশ কেন্দ্রও রয়েছে এখানে।বর্তমানে অবকাশ কেন্দ্র হারিয়া পর্যটন কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধানে ভাড়া দেওয়া হয়।পার্কে প্রবেশ মূল্য জন প্রতি পঁচিশ রুপি।প্রতিবছর এপ্রিল মাসে এখানে দুই দিনের বৈশাখী মেলা এবং জুলাই মাসে দুই দিন ব্যাপী আম্রমেলা অনুষ্ঠিত হয়। গরমের দিনে কিংবা অবকাশ যাপনের জন্য স্থানটি বেশ নিরিবিলি ও মনোরম সৌন্দর্যে ভরা।

গার্ডেন থেকে সন্ধ্যার মধ্যে বের হয়ে আমরা আবারও চলে আসলাম চন্ডীগড়ের সতের নম্বর সেক্টরের মল চত্তরে।ফাউন্টেন শো দেখাও কিছু টুকটাক কেনা কেটা করা ছিল এবারের উদ্দেশ্য। প্রয়োজনীয় কাজ সেরে পূর্বের হোটেলে ফিরে আসলাম।রাতের খাবার হোটেল বার্বুচিকে দিয়ে তৈরি করানো হলো।উল্লেখ্য চন্ডীগড় হোটেল থেকে সিমলা যাওয়ার সময় আমাদের লাগেজ ও অন্যান্য জিনিস পত্র হোটেল রিসিপশনে জমা রেখে গিয়েছিলাম।যেহেতু সিমলায় কোন যানবাহান নেই সবখানে হেঁটেই যাতায়াত করতে হয় সেহেতু একান্ত প্রয়োজনীয় জিনিসগুলোই সঙ্গে নিয়েছিলাম।হোটেল ম্যানেজারের পরামর্শটা কাজে দিয়েছিল না হয় চলাচলে বেশ কস্ট হতোনআমাদের।সিমলা যাবার আগের দিন চন্ডীগড় রেলস্টেশন থেকে আমাদের ট্রেনের টিকেট চেন্জ করিয়ে নিয়েছিলাম।রেল কর্তৃপক্ষ টিকেট প্রতি দুই’শ রুপি ক্যান্সেলেশন ফি রেখে পরবর্তী তারিখে আমাদের জন্য নতুন টিকেট ইস্যু করলেন।একুশ এপ্রিলের পরবর্তী তেইশ এপ্রিল আমরা দিল্লি ফিরব।ভোর ছ’টা পয়তাল্লিশ মিনিটে আমাদের ট্রেন কালকা-নিউদিল্লি(গাড়ি নং ১২০০৬) চন্ডীগড় স্টেশনে পৌছাবে। এটি কালকা স্টেশন থেকে ভোর ছ’টা পনের মিনিটে ছেড়ে আসে।কালকা থেকে চন্ডীগড়ের দূরুত্ব প্রায় পঁচিশ কিলোমিটার। গাড়িটি চন্ডীগড় স্টেশনে আট মিনিটের বিরতি দিয়ে ছ’টা তিপ্পান্ন মিনিটে স্টেশন ছাড়ল।আগেও বলেছি সময় মেনে চলার ক্ষেত্রে ভারতীয় রেলের বেশ সুনাম রয়েছে। তার প্রমাণ আমরা আবারো পেলাম। আমরা সকাল সাড়ে দশটায় দিল্লি রেলস্টেশনে এসে পৌছালাম। দুপুর ২:৩০ মিনিটে আমাদের ঢাকাগামী ফ্লাইট। নিয়মানুযায়ী তিন ঘন্টা পূর্বে এয়ারপোর্টে পৌছাতে হবে।রেলস্টেশনের এক কুলিকে আমাদের লাগেজ বহন করতে দিয়ে আমরা দ্রুত ছুটে চলাম মেট্রো রেলস্টেশনের দিকে।রেলস্টেশনের শেষ প্রান্তে আন্ডার গ্রাউন্ডে মেট্রোরেল এর টিকেট কাউন্টার। লাগেজ আশি রুপিতে বুকিং দিয়ে  আমরা জনপ্রতি বিশ রুপি করে টিকেট কেটে নিলাম।মাটির নিচের কাউন্টার থেকে টিকেট সংগ্রহ করে গাড়িতে উঠার জন্য লিপ্টে তিন ফ্লোর উপরে আসতে হলো।ভারতীয় রেলের আরেক বিস্ময় এই মেট্রোরেল।কখনো শহরে উপরে কখনো মাটির নিচে দিয়ে মাত্র বিশ মিনিটে আমরা ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌছালাম।মেট্রোরেল থেকে নামলেই এয়ারপোর্টের প্রবেশপথ ফলে লাগেজ নিয়ে আর কোন বাড়তি ঝামেলা পোহাতে হলো না।যথারীতি এয়ারপোর্ট চেকিং ও ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করে এয়ার লাউঞ্জে দুপুরের খাবার সেরে নিলাম।ক্রেডিট কার্ডের সৌজন্যে বিনা পয়সায় বিদেশি এয়ারপোর্টে খাওয়া দাওয়ার নতুন অভিজ্ঞতা হলো।না হয় জনপ্রতি ত্রিশ ডলার করে গুনতে হতো আমাদের। ফ্লাইট যথাযথ সময়ে দিল্লি ত্যাগ করল আমরা দুই ঘন্টা ত্রিশ মিনিটে হযরত শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর,ঢাকায় এসে পৌছালাম। এরই মধ্যে আমাদের দশ দিনের দ্বিতীয় ভারত সফর দিল্লি,রাজস্থান,চন্ডিগড়,পান্জাব,হরিয়ানা ও হিমাচল প্রদেশ ভ্রমণের মাধ্যমে শেষ হলো।

লেখকঃ
জিয়াউর রহমান মুকুল,
উপ-পরিচালক (স্বাস্থ্য ও পুষ্টি) 
শেড,কক্সবাজার। 
ইমেইলঃ[email protected]

পাঠকের মতামত

আসলে কি বয়কট করছি!

আমরা বাঙালি নতুন ইস্যু পেলে দৌড়ে তা দেখার জন্য উৎকণ্ঠা প্রকাশ করি। আজ বয়কট নিয়ে ...