উখিয়া নিউজ ডেস্ক::
কক্সবাজারের উখিয়ায় গড়ে উঠা রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে প্রভাব বিস্তার কে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। ফলে উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালীর ৩টি রোহিঙ্গা শরনার্থী শিবিরে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের মাঝে এখন আতংক বিরাজ করছে।
তারা বলছেন, স্থানীয় দুই জনপ্রতিনিধির আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের পরিস্থিতি এখন উত্তপ্ত। যে কোন মুহুর্তে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে পারে।
তবে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন জানালেন, রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। আর যারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে হঠাৎ করে উত্তপ্ত হয়ে উঠায় ও দুই রোহিঙ্গা নেতা অপহরণ এবং হত্যার ঘটনায় শুক্রবার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে একটি জরুরী সভাও অনুষ্ঠিত হয়। রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে যেকোন ধরণের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে উক্ত সভায় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে জানা যায়।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, উখিয়ায় রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে সন্ত্রাসীরা নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের জন্য একে অপরের লোকজনকে অপহরণ করে হত্যার মিশন শুরু করেছে। হঠাৎ করে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে সন্ত্রাসী গ্রুপের আত্মপ্রকাশ, অস্ত্রের মহড়া ও হত্যাকান্ডের ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। যেকোন মূল্যে রোহিঙ্গা শিবিরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে হার্টলাইনে যাচ্ছে প্রশাসন। এনিয়ে কক্সবাজারে প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ে দফায় দফায় বৈঠকও হচ্ছে। আর রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মূলহোতা দুই জনপ্রতিনিধিকে প্রয়োজনে আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানা যায়।
কক্সবাজারে উখিয়া উপজেলার কুতুপালং ও বালুখালীর নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত ৩টি রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে হঠাৎ করে অশান্ত হয়ে উঠেছে। গত ১২ জুন রাতে কুতুপালংয়ে ২ জন রোহিঙ্গা নেতাকে প্রতিপক্ষরা ঘর থেকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরে অপহৃত ২ জনের মধ্যে মোঃ সেলিম নামের এক রোহিঙ্গার মৃতদেহ ৫ দিন পর গত রবিবার উখিয়ার বালুখালী থেকে উদ্ধার করা হয়। তাকে গুলি ও জবাই করে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করছে পুলিশ। তবে এখনো পর্যন্ত অপহৃত আরেক রোহিঙ্গা নেতা মোঃ আইয়ুবের কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি।
পুলিশ ধারনা করছে, তাকেও হত্যা করে লাশ গুম করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এই হত্যা ও অপহরণের সাথে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী সংগঠন জড়িত বলে সন্দেহ করা হয়। কিন্তু সরকারি দুইটি গোয়েন্দা সংস্থা নিশ্চিত করেছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে স্থানীয় দুই জনপ্রতিনিধি যথাক্রমে বখতিয়ার মেম্বার ও আবছার মেম্বারের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এই অপহরণ ও হত্যার ঘটনা ঘটেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, গত ১৩ জুন দিবাগত রাত দেড়টার দিকে ১৮/২০ জনের একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ কুতুপালং নিবন্ধিত শরণার্থী শিবিরের জি-ব্লকের আলী আহমদের ছেলে মোঃ সেলিমকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। একই রাতে তাদের প্রতিপক্ষ আরেকটি সন্ত্রাসী গ্রুপ কুতুপালং অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের ই-১ ব্লকের সর্দার আয়ুব মাঝিকে একই কায়দায় তুলে নিয়ে যায়। তবে অপহরণের ৫ দিন পর মোঃ সেলিমের মৃতদেহ পাওয়া যায়।
গোয়েন্দা সূত্র নিশ্চিত করেছে, গত বছরের শেষের দিকে উখিয়ার বালুখালীতে রোহিঙ্গারা বসতি স্থাপনের পর থেকেই বখতিয়ার মেম্বার ও আবছার মেম্বারের মধ্যে চরম দ্বন্দ্ব শুরু হয়। বালুখালীতে নতুন রোহিঙ্গা ক্যাম্প হলে কুতুপালংয়ের মেম্বার বখতিয়ারের প্রভাব কমে যাবে আর আবছার মেম্বারের প্রভাব বাড়বে।
তাই রোহিঙ্গা ক্যাম্প নিয়ন্ত্রণ নিয়ে রোহিঙ্গা শিবিরে দুইটি সন্ত্রাসী গ্রুপ গড়ে তুলে মেম্বার বখতিয়ার ও আবছার। গ্রুপ দুটি নিজেদের ভেতর আধিপত্য বিস্তার করার জন্য বিভিন্ন সময় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে। অপহরনের পর থেকে রোহিঙ্গারা ও উখিয়া থানার পুলিশ বিভিন্নভাবে অপহৃতদের উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে আসছিল। কিন্তু অপহরনের শিকার দুই রোহিঙ্গার মধ্যে একজনের লাশ উদ্ধার করা গেলেও আয়ুব মাঝির এখনো কোন হদিস পাওয়া যায়নি।
উখিয়া থানার ওসি মোঃ আবুল খায়ের বলেন, স্থানীয় লোকজনের সংবাদের ভিত্তিতে গত রোববার কুতুপালং সংলগ্ন বালুখালী তেলিপাড়া খালে হাত-পা বাঁধা ও গলা জবাই করা অবস্থায় মোঃ সেলিমের লাশ উদ্ধার করা হয়। কিন্তু অনিবন্ধিত শিবিরের অপহৃত আয়ুব মাঝিকে এখনো জীবিত বা মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তবে আইয়ুব মাঝিকে উদ্ধারে জোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উখিয়া সার্কেল) চাই লাউ মারমা জানান, স্থানীয় দুই প্রভাবশালীর ছত্রছায়ায় সাম্প্রতিক সময়ে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে কয়েকটি সন্ত্রাসী গ্রুপ সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা নিজেদের ভেতরে আধিপত্য বিস্তারের জন্য বিভিন্ন সময় সংর্ঘষে জড়িয়ে পড়ছে। তাই প্রতিটি রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসেন জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাশের দুই ইউপি সদস্য বখতিয়ার আহমদ ও আবছার উদ্দিনের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের মাঝে বিভক্তি সৃষ্টির অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো আরও তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। সুত্র :দৈনিক কক্সবাজার