দেশব্যাপী বিএনপির চলমান কর্মসূচিতে গত দুই দিনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের নৃশংস হামলা-মামলা ও গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি জানান, গত দুই দিনে সারা দেশে দলটির ২৬ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার ও ৯২ জনের অধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।
আজ শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিবৃতিতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বর্তমান গণবিরোধী সরকার বিএনপিসহ বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর সীমাহীন অত্যাচার চালাচ্ছে। সরকারের মদদে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীরা বিএনপিকে ধ্বংস করার মিশন নিয়ে প্রতিদিন শহর থেকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিএনপির শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশে হামলা চালাচ্ছে, গুলি চালিয়ে নেতা-কর্মীদের হত্যাসহ গুরুতর আহত করছে। চারদিকে শুধু ভয়, আতঙ্ক ও নৈরাজ্য বিরাজ করছে। কিন্তু সরকারের ভয়াবহ দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জনগণ এখন ফুঁসে উঠেছে। তাদের ক্ষমতা থেকে সরাতে জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে রাস্তায় নামতে শুরু করেছে। আওয়ামী সরকারকে বিদায় নিতেই হবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজ শনিবার ঠাকুরগাঁও জেলার রুহিয়া থানা বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ-যুবলীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা নেতা-কর্মীদের ওপর নৃশংস হামলা চালিয়ে ২০ জনকে গুরুতর আহত করেছে। সন্ত্রাসীরা রুহিয়া থানা বিএনপি কার্যালয় পুড়িয়ে দেওয়াসহ ৫ থেকে ৬টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেছে। কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর আওয়ামী সন্ত্রাসী ও পুলিশ বাহিনী বর্বরোচিত হামলা চালিয়েছে। কিশোরগঞ্জ পৌর ছাত্রদলের সাব্বির আহমেদ শ্রাবনকে পুলিশ গুলি চালিয়ে গুরুতর আহত করেছে। সে এখন রাজধানীর একটি হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। নোয়াখালী, মানিকগঞ্জ, সিরাজগঞ্জসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় পুলিশি ধরপাকড় এখন প্রকট আকার ধারণ করেছে। সাধারণ মানুষকেও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এলাকাগুলোতে এক ভীতিকর অবস্থা বিরাজ করছে।’
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘গত শুক্রবার মধ্যরাতে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাকির খানকে রাজধানীর বসুন্ধরা থেকে র্যাব গ্রেপ্তার করেছে। নেত্রকোনা জেলা যুবদলের সহসভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন রনিকে মধ্যরাতে গাজীপুর থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে যায়। গাজীপুর মহানগরে বিএনপির ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শান্তিপূর্ণ র্যালিতে পুলিশের বর্বরোচিত হামলায় গাজীপুর মহানগর তাঁতী দলের আহ্বায়ক মো. তাজুল ইসলাম বেপারী, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা গাজী সালাহ উদ্দীন, মো. ইব্রাহিম মিয়া, মাইদুল ইসলাম, যুবদলের নেতা আবুল হোসেন সরকারসহ ১০ থেকে ১২ জনের অধিক নেতা-কর্মী গুরুতর আহত হন। এ ছাড়াও বিক্ষোভ মিছিল ঘিরে আগের রাতে পুলিশ গাজীপুর মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব শওকত হোসেন সরকার, সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সরকার জাবেদ আহমেদ সুমন ও বাসন মেট্রো থানা বিএনপির সভাপতি আলহাজ বশির আহমেদ বাচ্চুর বাসায় তল্লাশি চালায় এবং পরিবারের সদস্যদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে বলে—বিএনপির কর্মসূচিতে গেলে গুলি করে হত্যা করা হবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলাধীন নাঙ্গলকোটে বিএনপি ঘোষিত বিক্ষোভ কর্মসূচিতে গত মাসের ৩১ তারিখে আওয়ামী সন্ত্রাসী বাহিনী এবং পুলিশ যৌথভাবে রাবার বুলেট, টিয়ারশেল এবং সরাসরি গুলি চালিয়ে প্রায় ৩০০ নেতা-কর্মীকে গুরুতর আহত করে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ১৯ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় এবং সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল গফুর ভূঁইয়া, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক নজির আহমেদ ভূঁইয়া, উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব মো. আনোয়ার হোসেন নয়নসহ ৫০১ জনের নামে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মিথ্যা মামলা দায়ের করে।’
ফরিদপুর জেলা জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) সদস্যসচিব আরিফুর রহমান বকুকে তাঁর নিজ বাসা থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চুর বাড়িতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তল্লাশি চালিয়েছে। জেলা বিএনপির সহসভাপতি নাজমুল হাসান রানার ছোট ভাই পারভেজ তালুকদারকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সদর থানার শিয়ালখোলা ইউনিয়ন বিএনপি নেতা নুরে আলমকে বাসায় না পেয়ে তাঁর ছেলে মেহেদী হাসানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ছাড়াও শিয়ালখোলা ও সয়দাবাদ ইউনিয়নে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের সহযোগিতায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাড়িতে-বাড়িতে তল্লাশি চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সায়দাবাদ ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আউয়াল ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবদলের সদস্য গাজী মো. জসিম উদ্দীনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।’
বিবৃতিতে বিএনপির মহাসচিব অবিলম্বে বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির ওপর হামলাকারী আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আহ্বান জানান। তিনি গ্রেপ্তার দলীয় নেতা-কর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তিসহ আহত ব্যক্তিদের আশু সুস্থতা কামনা করেন