উখিয়া নিউজ ডেস্ক::
মাত্র দুই হাজার থেকে তিন হাজার টাকার মধ্যেই ১০ হাত দৈর্ঘ্য ও ৮ হাত প্রস্তের এক টুকরো জায়গা কিনতে পারছে রোহিঙ্গারা। স্থানীয় ৬০ জনের একটি চক্র ওই জমি বিক্রির কাজ করছেন। তারা চাষকৃত ও চাষযোগ্য জমির ‘ক্ষতিপূরণ’ হিসেবে রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে ওই টাকা আদায় করছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়ক থেকে পাঁচ কিলোমিটার অভ্যন্তরে হোয়াইক্যং ইউনিয়নের রইক্ষ্যংয়ের পাহাড় ও সমতল ভূমিতে গত দুই দিনে অন্তত সাত হাজার বসতি গড়ে উঠেছে। প্রত্যেক বসতি তৈরীর জন্য টাকা দিতে হয়েছে রোহিঙ্গাদের। যারা টাকা দিতে পারছে তাদের ঘর নির্মানের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। টাকা দিতে না পারলে ঠাঁই হচ্ছে রাস্তার ধারে কিংবা খোলা মাঠে। বাংলাদেশী মুদ্রার পাশাপাশি মিয়ানমারের মুদ্রাও নেওয়া হচ্ছে আশ্রয় প্রত্যাশী রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে। পাহাড়ের নিচে কিছুটা সমতলে ঘর নির্মাণ করছিলেন মিয়ানমারের মংডুর রাইম্যারঘোনা এলাকা থেকে আসা বয়োবৃদ্ধ কামাল আহমদ (৬০) ও তার ছেলে মো: হোসেন (৩০)। মো: হোসেন জানান, এ জমি পেতে মিয়ানমারের মুদ্রা ৮০ হাজার কিয়াট দিয়েছেন জমির মালিক দাবীদারদের। তাদের ১০ হাত দৈর্ঘ্য ও ৮ হাত প্রস্তের একটি ঘর নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। টাকা না দিলে কাউকে ঘর তৈরী করতে দেওয়া হচ্ছে না। সুত্র দৈনিক কক্সবাজার
তিনি জানান, গত রোববার মিয়ানমারের শীলখালী সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেন। এখানে নতুন রোহিঙ্গা ক্যাম্প হওয়ার খবর পেয়ে ছুটে এসেছিলেন। কোথাও থাকার জায়গা হয়নি। খোলা মাঠেই পরিবারের ছয় সদস্যকে নিয়ে কাটাতে হয়েছে দুই দিন। এরপর জমির মালিক দাবী করা লোকজনকে টাকা দিলে তারা ঘর নির্মাণের অনুমতি দেন।
পাশেই অন্য রোহিঙ্গাদের ঘর তৈরীর জন্য জমি মাপার কাজ করছিলেন স্থানীয় শাহাব মিয়া, মীর কাশেম ও অমিয় বড়–য়াসহ কয়েক জন। তারা সকলে নিজেদের জমির মালিক বলে দাবী করেন। শাহাব মিয়া জানান, তাদের ৬০ জনের একটি ভূমিহীন সমিতি রয়েছে। ওই ৬০ জন ভূমি অফিস থেকে এই জমি বন্দোবস্তি নিয়েছেন। প্রত্যেকের সাত কানি করে জমি রয়েছে। তারা সেখানে বিভিন্ন ফসলের আবাদ করতেন। প্রতি বিঘা জমি থেকে মাসে দুই লাখ টাকা আয় হতো। এখন রোহিঙ্গারা আসায় জমির ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সেখানে রোহিঙ্গারা ঘর নির্মাণ করছে। তারা এই জমিতে প্রায় ২০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। তাই ক্ষতিপূরণ তুলতেই রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ নেওয়া হচ্ছে।
প্রায় একই কথা জানান, রইক্ষ্যংয়ের বাসিন্দা কালা মিয়া। তিনি বলেন, ‘আমি দুই দাগে মোট ৭১ শতক জমি লিজ নিয়েছি। ওই জমিতে চাষাবাদ করতাম। এখন সেখানে রোহিঙ্গারা বসতি তৈরী করছে। আমরা এর জন্য ক্ষতিপূরণ চাই।’
দুপুরে খোলা জায়গায় দুইটি খুঁটি গেড়ে সেখানে পলিথন দিয়ে ঝুঁপড়ি তৈরী করে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন মিয়ানমারের মংডুর বলিবাজার থেকে আসা আব্দুর রশিদ ও তার পরিবারের সদস্যরা। তিনি জানান, তিনি থাকার জায়গা পাচ্ছেন না। যে জায়গায় খুঁটি গেড়েছে সেখানে থাকার জন্য জমির মালিক দাবী করা লোকজন এসে ৩ হাজার টাকা চাচ্ছে। অন্যথায় চলে যেতে বলছে। টাকা না দিলে এখানে থাকতে দেবে না। আমরা একদিন সময় নিয়েছি।
তিনি জানান, সোমবার পরিবারের ছয় সদস্যকে নিয়ে তিনি শীলখালী সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেন। আসার সময় নৌকার মাঝিকে দিতে হয়েছে ১০ হাজার কিয়াট। এপারে এসেও থাকার জন্য টাকা দিতে হচ্ছে।
রইক্ষ্যংয়ের বাসিন্দা, সবজি চাষী ছৈয়দুর রহমান জানান, এখানে ৬০ জনের জমি রয়েছে। রোহিঙ্গারা ওই জমিতে ঘর তৈরী করছে। জমির ক্ষতিপূরণ হিসেবে মালিকরা প্রত্যেক রোহিঙ্গা পরিবারের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে দুই হাজার টাকা করে নিচ্ছেন। তবে তিনি যে জমিতে চাষ করেছেন সেখানে কাউকে থাকার জায়গা দেননি বলে জানান তিনি।
হোয়াইক্ষ্যং ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল বাসেত বলেন, ‘দুই দিনে রইক্ষ্যংয়ের পাহাড়ি জমিতে ৪০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। প্রতিনিয়ত আশ্রয় নিচ্ছে আরও রোহিঙ্গা। এ পর্যন্ত সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগের রোহিঙ্গাদের কোন সাহায্য-সহযোগীতা করা হয়নি। তারা অত্যন্ত মানবেতর জীবন যাপন করছে সেখানে। অনেকে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছে। সেখানে যাদের জমি আছে তারা ঘর নির্মাণের সুযোগ দিয়ে রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছে বলেও জানতে পেরেছি।’
কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আলী কবির বলেন, ‘রইক্ষ্যংয়ের পাহাড়ে ইতোমধ্যে অনেক রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। বেদখল হয়ে গেছে বন বিভাগের বিশাল আয়তনের জমি। সেখানে ¯্রােতের মতো আসছে রোহিঙ্গারা। তারা বনজ সম্পদ ধ্বংস করে ঘর নির্মাণ করছে। বন রক্ষায় আমরা নানাভাবে আমাদের তৎপরতা অব্যাহত রেখেছি। কিন্তু লোকবল সংকটের কারনে সবদিক সামলানো কঠিন হয়ে পড়ে।