আলমগীর মাহমুদ::
কক্সবাজারের ঔষধ মার্কেটটি পানবাজার নামেই পরিচিত।ওই মার্কেট এর সামনে আছি দাঁড়িয়ে। সেদিন হরতাল ছিল।রিক্সা আরোহী ভদ্র প্যাসেঞ্জার এই মার্কেটের সামনে ভাড়ার লেনদেনে ছিল ব্যস্ত।ভদ্রজনের চেহেরা সেইপ দেখে বুঝা যাচ্ছে উনি উপজাতি।
উনি নেমে পনের টাকা ভাড়া পে করতেই রিকশাচালক তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে।ভাড়া পঁচিশ টাকা দিতে হবে।ভদ্রজন তারে বারবার এককথাই বলছে তোর সাথে দাম দর ঠিক করেই পনের টাকায় আমি এসেছি আমি একটাকাও বেশী দেব না।দিতে পারব না।গোলদীঘির পাড় থেকে এখানে দশটাকা ভাড়া হরতাল বিধায় পাঁচটাকা বেশী দিয়ে এসেছি।
রিকশাচালক এর যুক্তি সামনে মিছিল পড়ায় আপনারে অনেকদুর ঘুরিয়ে আনতে হয়েছে আমাকে দশটাকা দরের চেয়ে বাড়িয়ে দিতে হবে।যথেষ্ট কথায় হচ্ছিল ধস্তাধস্তি. ...লাঠিহাতেভরকারী পথিক একজন এগিয়ে এসে রিকশাচালককে২৫টাকা হাতে দিয়ে বলে এবার যা।ভদ্রজনকে আপনিও যান।
ভদ্রজন যথেষ্ট থতমত হয়ে আরো কিছুদুর গিয়ে একটু আড়ালসাইটে গিয়ে দাঁড়িয়ে পর্যবেক্ষন করছিল ওই লোকটাকে।বিষয়টা ছিল ঐ লোকটার দৃষ্টি সীমানার বাইরে।ভদ্রজন দেখলেন ওই লোকটা ভিক্ষা করছে।
ভিক্ষুকই উনার এই টাকা দিয়েছে দেখে তিনি বিমর্ষ বদনে আবার ফিরে ভিক্ষুকের কাছে এসে হুট করে জড়িয়ে ধরে ভাংগা চাটগাঁইয়া ভাষায় বলতে থাকে...তুই আঁরে মাফ গরি দে।তুই আঁরে মাফ গরি দে।তর ২৫ টিঁয়ার বদলে ধর ত্রিশটাকা নে।ভিক্ষুক ফিরতি জবাবে গর্বের সাথে কয়..আমি ভিক্ষা করি মানুষের সাহায্যের জন্য। সারাদিন ভিক্ষার টাকা রাতে বদরমোকাম মসজিদের রাস্তায় যারা না খেয়ে থাকে তাদের রাতের খাবার কিনে দেই।বন্যা অইলে আমার ভিক্ষার টাকায় তাদের খিছুড়ি করে পৌঁছে দেই।আমি উপকার করার জন্য ভিক্ষা করি এইটাকাতো আপনাদের মত মানুষের টাকা। মানূষের দেয়া আমার নয়। মানুষের টাকা। মানবের উপকারে ব্যবহার করলাম। টাকা যদি আমার হতো নিতাম।
এইরকম ভিক্ষার জমানো টাকা বন্যার্তদের দিয়ে সাংবাদিক তোফাইল জনকন্ট পত্রিকায় আমারে নিয়া লেইখা সবাইরে জানাইছিল।আপনি পড়েন নাই আমি কেমন লোক? কেন ভিক্ষা করি।
এই টাকা নিবই না কইলাম! তারপরও যখন ভদ্রজন আফসোসে আফসোসে আত্নহারা। উনি টাকাটা না নিয়েই হাটা শুরু করলেন।কদমে কদমে চলছে আর বলছে..দু:খ বাড়ে আফসোসে ! দু:খ বাড়ে আফসোসে !
লেখক:-উখিয়া কলেজের সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষক।
[email protected]
*লেখাটি ফেইসবুক থেকে নেওয়া*