১৪৪৪ হিজরির রমজান মাসের দশম তারাবিহ আজ। সুরা ইউসুফের ৫৩নং আয়াত থেকে শেষ পর্যন্ত, সুরা রাদ এবং সুরা ইবরাহিমের তেলাওয়াতে মুগ্ধ হবে মুসল্লিরা। হাফেজে কোরআনগণ তারাবিহ নামাজ আদায়কারীদের শুনাবেন হজরত ইউসুফ আলাইহিস সালামের জীবনের সুন্দর ঘটনা।
হজরত ইউসুফ আলাইহিস সালামের ঘটনার পাশাপাশি কোরআনুল কারিমের ১৩ পারার সুরা ইবরাহিমে রয়েছে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দোয়া। এর সঙ্গে বাদ যায়নি বাবা-মা ও নিজেদের কল্যাণ কামনার দোয়া। বাবা-মা ও নিজেদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা দোয়া করতে আল্লাহ তাআলার নির্দেশ হলো এমন-
رَبَّنَا اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ يَقُومُ الْحِسَابُ
‘হে আমাদের পালনকর্তা! আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে এবং সব মুমিনকে ক্ষমা করুন, যেদিন হিসাব কায়েম হবে।’ (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ৪১)
এ সুরাগুলোতে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সান্ত্বনা দেয়া হয়েছে। নবুয়তের দায়িত্ব পালনকালে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কার শেষ সময়গুলোতে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা ও কষ্টের মাঝে অতিবাহিত করছিলেন। সেই কঠিন পরিস্থিতিতে আল্লাহ তাআলা এ সুরাগুলোর মাধ্যমে নবিজিকে সান্ত্বনা দিয়েছিলেন। সুরাগুলোর বক্তব্য সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো-
সুরা ইউসুফ
সুরা ইউসুফ মক্কায় নাজিল হয়েছে। এ সুরাটির আয়াত সংখ্যা ১১১ এবং রুকু সংখ্যা ১২। এ সুরার বিষয়বস্তু থেকে বোঝা যায় যে, সুরাটি নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মক্কায় অবস্থানের শেষ দিকে নাজিল হয়েছিল। তখন মক্কার ইসলাম বিদ্বেষীরা নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হত্যা বা দেশান্তর বা বন্দি নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছিল। আজ এ সুরার ৫৩নং আয়াত থেকে শেষ পর্যন্ত পাঠ করা হবে।
আজকের তারাবিহ সুরা ইউসুফের যে আয়াতে শুরু হবে, তাতে মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন-
وَ مَاۤ اُبَرِّیٴُ نَفۡسِیۡ ۚ اِنَّ النَّفۡسَ لَاَمَّارَۃٌۢ بِالسُّوۡٓءِ اِلَّا مَا رَحِمَ رَبِّیۡ ؕ اِنَّ رَبِّیۡ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ
‘(সে বলল), ‘আমি নিজেকে দোষমুক্ত মনে করি না, নফস্ তো মন্দ কাজে প্ররোচিত করতেই থাকে, আমার প্রতিপালক যার প্রতি দয়া করেন সে ছাড়া। আমার প্রতিপালক বড়ই ক্ষমাশীল, বড়ই দয়ালু।’ (সুরা ইউসুফ: আয়াত ৫৩)
এখানে আজিজ-পত্নী কর্তৃক ইউসুফ আলাইহিস সালামের নির্দোষিতা ঘোষিত হয়েছে। অর্থাৎ আযীয-পত্নী তখন বললেন, ‘এখন সত্য প্রকাশিত হয়েছে, আমিই তাকে ফুসলিয়েছিলাম, অবশ্যই সে (ইউসুফ) সত্যবাদীদের অন্তর্গত। আর এটা আমি এ জন্যই বলছি, যাতে করে সবাই জানতে পারে যে, আমি তার (ইউসুফের) অনুপস্থিতিতে তার প্রতি কোনো মিথ্যা ও খেয়ানতের অপবাদ দিচ্ছি না। (ইবনুল কাইয়্যেম: রাওদাতুল মুহিব্বীন ২৯৯)
আর অবশ্যই আল্লাহ তাআলা যারা খেয়ানত করে তাদের চক্রান্ত সফল হতে দেন না। আর আমি আমার নিজ আত্মাকে নির্দোষ বলছি না। আত্মা তো খারাপ কাজের নির্দেশই দেয়, অবশ্য যাদেরকে আল্লাহ করুনা করেছেন, তাদের কথা ভিন্ন। নিঃসন্দেহে আমার রব অতীব ক্ষমাশীল, দয়াময়।’ এ তিনটি আয়াতই আযীয-পত্নী বলেছিল।
ইউসুফ আলাইহিস সালাম এর আত্মা নফসে আম্মারা বা খারাপ কাজের আদেশদানকারী আত্মা নয়। এ ব্যাপারে সত্যাম্বেষী আলেমগণ সবাই একমত। সুতরাং এখানে আযীয-পত্নী নিজ আত্মার কথাই বলেছে। আর তার আত্মা অবশ্যই নফসে আম্মারা ছিল, ইউসুফ আলাইহিস সালাম-এর আত্মা নয়। (ইবন কাসির; ইবনুল কাইয়্যেম, রাওদাতুল মুহিববীন ২৯৯-৩০০)
আর এটা যদি ইউসুফ আলাইহিস সালামের উক্তি হয়, তাহলে এটা তাঁর পক্ষ থেকে আত্মবিনয়ের বহিঃপ্রকাশ। কেননা এটা সুস্পষ্ট যে, সব দিক থেকেই তাঁর পবিত্রতা সাব্যস্ত হয়ে গিয়েছিল। পক্ষান্তরে এটা যদি মিশরের বাদশার স্ত্রীর কথা হয়, (যেমন ইবনে কাসিরের মত) তাহলে তা বাস্তবের উপরই প্রতিষ্ঠিত। কেননা সে নিজের অপরাধ এবং ইউসুফ আলাইহিস সালামকে ফুসলানো ও ব্যভিচারে উদ্বুদ্ধ করানোর কথা স্বীকার করেছিল।
হজরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার বিষয়টি আজিজ মিশরের কাছে প্রমাণিত হয়েছিল। আল্লাহ তাআলা কোরআনে পাকে সে কথা এভাবে ঘোষণা করেন-
وَ قَالَ الۡمَلِکُ ائۡتُوۡنِیۡ بِهٖۤ اَسۡتَخۡلِصۡهُ لِنَفۡسِیۡ ۚ فَلَمَّا کَلَّمَهٗ قَالَ اِنَّکَ الۡیَوۡمَ لَدَیۡنَا مَکِیۡنٌ اَمِیۡنٌ
রাজা বললেন, ‘তাকে (ইউসুফ) আমার কাছে নিয়ে এসো, আমি তাকে আমার জন্য বিশেষভাবে নির্দিষ্ট করে নেব। এরপর সে (ইউসুফ) যখন তার সঙ্গে কথা বলল, তখন রাজা বলল, ‘আজ তুমি আমাদের কাছে খুবই মর্যাদাশীল ও বিশ্বস্ত হিসেবে পরিগণিত।’ (সুরা ইউসুফ: আয়াত ৫৪)
বাদশাহ যখন ইউসুফ আলাইহিস সালামের দাবি অনুযায়ী নারীদের কাছে ঘটনার তদন্ত করলেন এবং আযীয-পত্নী ও অন্যান্য সব নারী বাস্তব ঘটনা স্বীকার করল, তখন বাদশাহ নির্দেশ দিলেন, ইউসুফকে (আলাইহিস সালাম) আমার কাছে নিয়ে আসো- যাতে তাকে একান্ত উপদেষ্টা করে নেই।
নির্দেশ অনুযায়ী তাকে সসম্মানে কারাগার থেকে রাজ দরবারে আনা হল। এরপর পারস্পরিক আলাপ ও আলোচনার ফলে তার যোগ্যতা ও প্রতিভা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে বাদশাহ বললেন, ‘আপনি আজ থেকে আমার কাছে অত্যন্ত সম্মানাহ এবং বিশ্বস্ত। অর্থাৎ আপনার কথা গ্রহণযোগ্য এবং আপনি এমনই বিশ্বস্ত যে আপনার পক্ষ থেকে কোন গাদ্দারীর ভয় নেই।’ (কুরতুবি)
দুর্ভেক্ষের মোকাবেলায় প্রস্তুতি
এটা যেন বাদশাহর পক্ষ থেকে এ মর্মে একটি সুস্পষ্ট ইঙ্গিত ছিল যে, আপনার হাতে যে কোন দায়িত্বপূর্ণ কাজ সোপর্দ করা যেতে পারে। স্বপ্ন এবং অনাগত পরিস্থিতির ব্যাপারে বাদশাহ বললেন, এখন কি করা দরকার? ইউসুফ আলাইহিস সালাম বললেন, প্রথম সাত বছর খুব বৃষ্টিপাত হবে। এ সময় অধিকতর পরিমাণে চাষাবাদ করে অতিরিক্ত ফসল উৎপাদনের ব্যবস্থা করতে হবে। জনগণকে অধিক ফসল ফলানোর জন্য নির্দেশ দিতে হবে। উৎপন্ন ফসলের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ নিজের কাছে সঞ্চিতও রাখতে হবে।
এভাবে দুর্ভিক্ষের সাত বছরের জন্য মিসরবাসীর কাছে প্রচুর শস্যভাণ্ডার মজুদ থাকবে এবং আপনি তাদের পক্ষ থেকে নিশ্চিন্ত থাকবেন। রাজস্ব আয় ও খাস জমি থেকে যে পরিমাণ ফসল সরকারের হাতে আসবে, তা ভিনদেশী লোকদের জন্য রাখতে হবে। কারণ এ দুর্ভিক্ষ হবে সুদূরদেশ অবধি বিস্তৃত। ভিনদেশীরা তখন আপনার মুখাপেক্ষী হবে। আপনি খাদ্যশস্য দিয়ে সেসব মানুষকে সাহায্য করবেন। বিনিময়ে যৎকিঞ্চিৎ মূল্য গ্রহণ করলেও সরকারী ধনভাণ্ডারে অভূতপূর্ব অর্থ সমাগত হবে।
এ পরামর্শ শুনে বাদশাহ মুগ্ধ ও আনন্দিত হয়ে বললেন, এ বিরাট পরিকল্পনার ব্যবস্থাপনা কিভাবে হবে এবং কে করবে? ইউসুফ আলাইহিস সালাম বললেন, জমির উৎপন্ন ফসলসহ দেশীয় সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব আপনি আমাকে সোপর্দ করুন। আমি এগুলোর পূর্ণ রক্ষণাবেক্ষণ করতে সক্ষম এবং ব্যয়ের খাত ও পরিমাণ সম্পর্কেও আমার পুরোপুরি জ্ঞান আছে। (কুরতুবি)
ইউসুফ আলাইহিস সালাম দেশের কোষাধ্যক্ষ নিযুক্ত
قَالَ اجۡعَلۡنِیۡ عَلٰی خَزَآئِنِ الۡاَرۡضِ ۚ اِنِّیۡ حَفِیۡظٌ عَلِیۡمٌ
সে (ইউসুফ) বলল, ‘আমাকে দেশের কোষাধ্যক্ষ নিযুক্ত করুন। নিশ্চয়ই আমি সুসংরক্ষণকারী, সুবিজ্ঞ।’ (সুরা ইউসুফ: আয়াত ৫৫)
তিনি এ (শস্যাগারের) ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব¸ নিজ হাতে নেওয়ার ইচ্ছা এই জন্য প্রকাশ করলেন, যাতে (স্বপ্নের তাবির বা ব্যাখ্যা অনুসারে) আসন্ন দুর্ভিক্ষের জন্য উচিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে শস্য সংরক্ষিত রাখা যেতে পারে। সাধারণ অবস্থায় যদিও পদ বা নেতৃত্ব প্রার্থনা করা বৈধ নয়, কিন্তু ইউসুফ আলাইহিস সালামের এই পদক্ষেপ গ্রহণ থেকে জানা যায় যে, বিশেষ অবস্থায় যদি কোনো লোক এটা মনে করে যে, জাতি ও রাষ্ট্রের উপর আগত সঙ্কটের উচিত ব্যবস্থার যথাযথ যোগ্যতা আমার মধ্যে বিদ্যমান, যা অন্যের মধ্যে নেই, তাহলে সে নিজের যোগ্যতা অনুসারে এই বিশেষ পদ প্রার্থনা করতে পারে। পক্ষান্তরে ইউসুফ আলাইহিস সালাম মূলতঃ পদ প্রার্থনাই করেননি। বরং যখন মিসরের রাজা তাঁর সামনে এর প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তখন তিনি এমন পদ গ্রহণের ইচ্ছা ব্যক্ত করলেন, যাতে অধিষ্ঠিত থেকে তিনি জাতি ও রাষ্ট্রের সেবা সুন্দর ও সহজভাবে করতে পারেন।
আল্লাহ তাআলা এভাবেই জমিনে হজরত ইউসুফ আলাইহিস সালামকে কর্তৃত্ব দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَ کَذٰلِکَ مَکَّنَّا لِیُوۡسُفَ فِی الۡاَرۡضِ ۚ یَتَبَوَّاُ مِنۡهَا حَیۡثُ یَشَآءُ ؕ نُصِیۡبُ بِرَحۡمَتِنَا مَنۡ نَّشَآءُ وَ لَا نُضِیۡعُ اَجۡرَ الۡمُحۡسِنِیۡنَ
‘এভাবে আমি ইউসুফকে সে দেশে প্রতিষ্ঠিত করলাম। দেশের যেখানে ইচ্ছে সে নিজের স্থান করে নিতে পারত, আমি যাকে চাই আমার রহমাত দিয়ে ধন্য করি, আমি সৎকর্মশীলদের কর্মফল কক্ষনো বিনষ্ট করি না।’ (সুরা ইউসুফ: আয়াত ৫৬)
আমি ইউসুফকে ঐ দেশের উপর এমন শক্তি ও কৌশল প্রদান করলাম যে, মিসরের রাজা তাঁর নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করতেন এবং তিনি মিসরের মাটিতে এমন অধিকার প্রয়োগ করতেন, যেমন কোনো মানুষ নিজ ঘরে প্রয়োগ করে থাকে। তিনি যেখানে ইচ্ছা সেখানে অবস্থান করতেন, পুরো মিসর ছিল তাঁর পরিপূর্ণ অধীনস্থ।
এটা যেন তাঁর সেই সবরের সুফল, যা তিনি ভাইদের অন্যায়-অত্যাচারের উপর করেছিলেন এবং ঐ সুদৃঢ় পদক্ষেপের (বদলা ছিল) যা তিনি যুলাইখার পাপের আহবানের মোকাবিলায় এখতিয়ার করেছিলেন এবং সেই দৃঢ়তার (বদলা ছিল), যা তিনি কয়েদখানার জীবনে অবলম্বন করেছিলেন।
হজরত ইউসুফ আলাইহিস সালামের এই পদ সেই পদ ছিল, যার উপর ইতিপূর্বে মিসরের সেই রাজা অধিষ্ঠিত ছিলেন, যাঁর স্ত্রী ইউসুফ আলাইহিস সালামকে ব্যভিচারে উদ্বুদ্ধ করার অপচেষ্টা করেছিল। কারো কারো মন্তব্য যে, উক্ত রাজা ইউসুফ আলাইহিস সালামের দাওয়াত ও তবলীগে মুসলমান হয়ে গিয়েছিল। অনুরূপ কারো কারো মন্তব্য যে, মিসরের রাজা ইতফিরের মৃত্যুর পর হজরত ইউসুফ আলাইহিস সালামের সাথে যুলাইখার বিয়ে হয়েছিল এবং দুটি সন্তানও হয়েছিল; একজনের নাম আফরাইম এবং দ্বিতীয়জনের নাম মীশা ছিল। আফরাইমই ছিল ইউশা বিন নূন ও আইউব আলাইহিস সালামের স্ত্রী ‘রাহমাত’-এর পিতা।’ (ইবনে কাসির)
সুরা ইউসুফের শেষাংশে পুরুষদের থেকে নবি পাঠানো এবং কোরআনের নসিহত বা ঘটনোগুলো শিক্ষামূলক এবং বুদ্ধিমানের জন্য উপযোগী বলে ঘোষণা দেন। আল্লাহ বলেন-
وَ مَاۤ اَرۡسَلۡنَا مِنۡ قَبۡلِکَ اِلَّا رِجَالًا نُّوۡحِیۡۤ اِلَیۡهِمۡ مِّنۡ اَهۡلِ الۡقُرٰی ؕ اَفَلَمۡ یَسِیۡرُوۡا فِی الۡاَرۡضِ فَیَنۡظُرُوۡا کَیۡفَ کَانَ عَاقِبَۃُ الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِهِمۡ ؕ وَ لَدَارُ الۡاٰخِرَۃِ خَیۡرٌ لِّلَّذِیۡنَ اتَّقَوۡا ؕ اَفَلَا تَعۡقِلُوۡنَ
‘আপনার আগে আমি যতজনকে রাসুল করে পাঠিয়েছি, তারা সবাই পুরুষই ছিল জনপদবাসীদের মধ্য থেকে। আমি তাঁদের কাছে ওহি পাঠাতাম। তারা কি দেশ-বিদেশ ভ্রমণ করে না, যাতে দেখে নিত কিরূপ পরিণতি হয়েছে তাদের যারা আগে ছিল? সংযমকারীদের জন্যে পরকালের আবাসই উত্তম। তারা কি এখনও বোঝে না?’ (সুরা ইউসুফ : আয়াত ১০৯)
حَتّٰۤی اِذَا اسۡتَیۡـَٔسَ الرُّسُلُ وَ ظَنُّوۡۤا اَنَّهُمۡ قَدۡ کُذِبُوۡا جَآءَهُمۡ نَصۡرُنَا ۙ فَنُجِّیَ مَنۡ نَّشَآءُ ؕ وَلَا یُرَدُّ بَاۡسُنَا عَنِ الۡقَوۡمِ الۡمُجۡرِمِیۡنَ
‘এমনকি যখন পয়গম্বরগণ নৈরাশ্যে পতিত হয়ে যেতেন, এমনকি এরূপ ধারণা করতে শুরু করতেন যে, তাদের অনুমান বুঝি মিথ্যায় পরিণত হওয়ার উপক্রম হয়েছিল, তখন তাদের কাছে আমার সাহায্য পৌছে। এরপর আমি যাদের চেয়েছি তারা উদ্ধার পেয়েছে। আমার শাস্তি অপরাধী সম্প্রদায় থেকে প্রতিহত হয় না।’ (সুরা ইউসুফ : ১১০)
কোরআনে উল্লেখিত ঘটনাগুলো মানুষর জন্য উপকারি ও সঠিক পথ প্রাপ্তির উপায়। আল্লাহ তাআলা সুরা ইউসুফের শেষ আয়াতে সেকথা এভাবে তুলে ধরেছেন-
لَقَدۡ کَانَ فِیۡ قَصَصِهِمۡ عِبۡرَۃٌ لِّاُولِی الۡاَلۡبَابِ ؕ مَا کَانَ حَدِیۡثًا یُّفۡتَرٰی وَ لٰکِنۡ تَصۡدِیۡقَ الَّذِیۡ بَیۡنَ یَدَیۡهِ وَ تَفۡصِیۡلَ کُلِّ شَیۡءٍ وَّ هُدًی وَّ رَحۡمَۃً لِّقَوۡمٍ یُّؤۡمِنُوۡنَ
‘তাদের এ কাহিনীগুলোতে অবশ্যই বুদ্ধিমানদের জন্য রয়েছে শিক্ষা, এটা কোন বানানো গল্প নয়, বরং তাদের পূর্ববর্তী কিতাবের সত্যায়নকারী এবং প্রতিটি বিষয়ের বিস্তারিত বিবরণ। আর হিদায়াত ও রহমত ঐ কওমের জন্য যারা ঈমান আনে।’ (সুরা ইউসুফ: আয়াত ১১১)
নবিদের কাহিনীতে বুদ্ধিমানদের জন্য বিশেষ শিক্ষা রয়েছে। এর অর্থ সমস্ত নবির কাহিনীতেও হতে পারে এবং বিশেষ করে ইউসুফ আলাইহিস সালামের কাহিনীতেও হতে পারে, যা এ সূরায় বর্ণিত হয়েছে। কেননা, এ ঘটনায় পূর্ণরূপে প্রতিভাত হয়েছে যে, আল্লাহ তাআলার অনুগত বান্দাদের কী কী ভাবে সাহায্য ও সমর্থন প্রদান করা হয় এবং কূপ থেকে বের করে রাজসিংহাসনে এবং অপবাদ থেকে মুক্তি দিয়ে উচ্চতম শিখরে কীভাবে পৌঁছে দেওয়া হয়। পক্ষান্তরে চক্রান্ত ও প্রতারণাকারীরা পরিণামে কিরূপ অপমান ও লাঞ্ছনা ভোগ করে।
মনে রাখতে হবে
এ কোরআন কোনো মনগড়া কথা নয়। এর পূর্বে যা ছিল সেগুলোর মধ্যে যা যা সত্য সেগুলোকে এ কোরআন সমর্থন করে আর যেগুলো পরিবর্তিত ও পরিবর্ধিত হয়েছে সেগুলোকে অস্বীকার করে। (ইবনে কাসির) অথবা এ কাহিনী কোনো মনগড়া কথা নয়, বরং পূর্বে অবতীর্ণ গ্রন্থসমূহের সমর্থনকারী। কেননা, তাওরাত ও ইঞ্জিলে এ কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। (কুরতুবি)
সুরা রাদ
কয়েকটি আয়াত ছাড়া বাকি পুরো সুরাটি মক্কায় নাজিল হয়েছে। ৪৩ আয়াতের সুরাটিতে দ্বীন ইসলামের মৌলিক আকিদ্বা বিশ্বাস সংক্রান্ত আলোচনা রয়েছে। সুরা রাদ-এ তাওহিদ, রেসালাত, ওহি, শেষ দিবসের কর্মফল, হক ও বাতিলের তাৎপর্য ও পার্থক্য সম্পর্কে রয়েছে বিশেষ আলোচনা। তাই সুরার প্রথমেই এসেছে হকের আলোচনা।
আল্লাহ তাআলা ক্ষমতার বর্ণনা দিয়ে শুরু হয়েছে সুরা রাদ। আল্লাহ তাআলা সুরাটির দ্বিতীয় আয়াতে উল্লেখ করেন-
اَللّٰهُ الَّذِیۡ رَفَعَ السَّمٰوٰتِ بِغَیۡرِ عَمَدٍ تَرَوۡنَهَا ثُمَّ اسۡتَوٰی عَلَی الۡعَرۡشِ وَ سَخَّرَ الشَّمۡسَ وَ الۡقَمَرَ ؕ کُلٌّ یَّجۡرِیۡ لِاَجَلٍ مُّسَمًّی ؕ یُدَبِّرُ الۡاَمۡرَ یُفَصِّلُ الۡاٰیٰتِ لَعَلَّکُمۡ بِلِقَآءِ رَبِّکُمۡ تُوۡقِنُوۡنَ
‘আল্লাহ, যিনি খুঁটি ছাড়া আসমানসমূহ উঁচু করেছেন যা তোমরা দেখছ। এরপর তিনি আরশে উঠেছেন এবং সূর্য ও চাঁদকে নিয়োজিত করেছেন। এর প্রত্যেকটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চলবে। তিনি সবকিছু পরিচালনা করেন। আয়াতসমূহ বিস্তারিত বর্ণনা করেন, যাতে তোমাদের রবের সাক্ষাতের ব্যাপারে তোমরা দৃঢ়বিশ্বাসী হতে পার।’ (সুরা রাদ: আয়াত ২)
এ আসমানসমূহকে আল্লাহ তাআলা তাঁর নিজস্ব ক্ষমতাবলে কোনো প্রকার বাহ্যিক খুঁটি ছাড়াই ধারন করে রেখেছেন। সেগুলো একটির উপর আরেকটি পড়ে যাচ্ছে না। এটা একদিকে যেমন তাঁর মহা শক্তিধর ও ক্ষমতাবান হওয়া নিশ্চিতভাবে প্রমাণ করে অন্যদিকে আসমান ও জমিন যে কত প্রকাণ্ড সৃষ্টি তার এক প্রচ্ছন্ন ধারণা আমাদের দেয়। (ইবনে কাসির)
মহান আল্লাহ বলেন, ‘মানুষকে সৃষ্টি করা অপেক্ষা আসমানসমূহ ও জমিন সৃষ্টি তো কঠিনতর, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ এটা জানে না।’ (সুরা গাফের: আয়াত ৫৭)
অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন সাত আসমান এবং তাদের মত পৃথিবীও, তাদের মধ্যে নেমে আসে তার নির্দেশ; যাতে তোমরা বুঝতে পার যে, আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান এবং জ্ঞানে আল্লাহ সবকিছুকে পরিবেষ্টন করে আছেন।’ (সুরা আত-তালাক: আয়াত ১২)
হাদিসে পাকে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সাত আসমান ও এর ভেতরে যা আছে এবং এর মাঝখানে যা আছে তা সবই কুরসির মধ্যে যেন বিস্তীর্ণ জমিনের মধ্যে একটি আংটি আর কুরসি হলো মহান আরশের মধ্যে তদ্রুপ একটি আংটি স্বরূপ যা এক বিস্তীর্ণ জমিনে পড়ে আছে। অন্য বর্ণনায় এসেছে, আর আরশ তার পরিমাণ তো মহান আল্লাহ ছাড়া কেউ নির্ধারণ করে বলতে পারবে না। (তাবারি)
পরের আয়াতে তার আরও ক্ষমতার বর্ণনা দেন এভাবে-
وَ هُوَ الَّذِیۡ مَدَّ الۡاَرۡضَ وَ جَعَلَ فِیۡهَا رَوَاسِیَ وَ اَنۡهٰرًا ؕ وَ مِنۡ کُلِّ الثَّمَرٰتِ جَعَلَ فِیۡهَا زَوۡجَیۡنِ اثۡنَیۡنِ یُغۡشِی الَّیۡلَ النَّهَارَ ؕ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَاٰیٰتٍ لِّقَوۡمٍ یَّتَفَکَّرُوۡنَ
‘আর তিনিই জমিনকে বিস্তৃত করেছেন এবং তাতে সুদৃঢ় পর্বতমালা ও নদ-নদী স্থাপন করেছেন। আর প্রত্যেক প্রকারের ফল তিনি জোড়া জোড়া করে সৃষ্টি করেছেন। তিনি রাত দ্বারা দিনকে ঢেকে দেন। নিশ্চয়ই যে কওম চিন্তাভাবনা করে তাদের জন্য এতে নিদর্শনাবলী রয়েছে।’ (সুরা রাদ: আয়াত ৩)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা উল্লেখ করেন-
اَللّٰهُ یَعۡلَمُ مَا تَحۡمِلُ کُلُّ اُنۡثٰی وَ مَا تَغِیۡضُ الۡاَرۡحَامُ وَ مَا تَزۡدَادُ ؕ وَ کُلُّ شَیۡءٍ عِنۡدَهٗ بِمِقۡدَارٍ
‘আল্লাহ জানেন যা প্রতিটি নারী গর্ভে ধারণ করে এবং গর্ভাশয়ে যা কমে ও বাড়ে। আর তাঁর নিকট প্রতিটি বস্তু নির্দিষ্ট পরিমাণে রয়েছে।’ (সুরা রাদ: আয়াত ৮)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা আরও বলেন-
سَوَآءٌ مِّنۡکُمۡ مَّنۡ اَسَرَّ الۡقَوۡلَ وَ مَنۡ جَهَرَ بِهٖ وَ مَنۡ هُوَ مُسۡتَخۡفٍۭ بِالَّیۡلِ وَ سَارِبٌۢ بِالنَّهَارِ
‘তোমাদের মধ্যে কেউ কথা গোপন রাখুক বা প্রকাশ করুক। আর রাতে লুকিয়ে করুক বা দিনে প্রকাশ্যে করুক, সবই তাঁর নিকট সমান।’ (সুরা রাদ: আয়াত ১০)
মানুষ তার অবস্থা পরিবর্তনে চেষ্টা করলে মহান আল্লাহ তার অবস্থার পরিবর্তন করেন। কিন্তু কেউ চেষ্টা না করলে আল্লাহ তাআলা তার অবস্থার পরিবর্তন করেন না। আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-
لَهٗ مُعَقِّبٰتٌ مِّنۡۢ بَیۡنِ یَدَیۡهِ وَ مِنۡ خَلۡفِهٖ یَحۡفَظُوۡنَهٗ مِنۡ اَمۡرِ اللّٰهِ ؕ اِنَّ اللّٰهَ لَا یُغَیِّرُ مَا بِقَوۡمٍ حَتّٰی یُغَیِّرُوۡا مَا بِاَنۡفُسِهِمۡ ؕ وَ اِذَاۤ اَرَادَ اللّٰهُ بِقَوۡمٍ سُوۡٓءًا فَلَا مَرَدَّ لَهٗ ۚ وَ مَا لَهُمۡ مِّنۡ دُوۡنِهٖ مِنۡ وَّالٍ
‘মানুষের জন্য রয়েছে, সামনে ও পেছনে, একের পর এক আগমনকারী প্রহরী, যারা আল্লাহর নির্দেশে তাকে হেফাজত করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো কওমের অবস্থা ততক্ষণ পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা (নিজেরা) নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে। আর যখন আল্লাহ কোনো জাতির মন্দ চান, তখন তা প্রতিহত করা যায় না এবং তাদের জন্য তিনি ছাড়া কোনো অভিভাবক নেই।’ (সুরা রাদ: আয়াত ১১)
আকাশের মেঘ, মেঘের গর্জন এসবই মহান আল্লাহর ইচ্ছায় হয়। আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত। আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَ یُسَبِّحُ الرَّعۡدُ بِحَمۡدِهٖ وَ الۡمَلٰٓئِکَۃُ مِنۡ خِیۡفَتِهٖ ۚ وَ یُرۡسِلُ الصَّوَاعِقَ فَیُصِیۡبُ بِهَا مَنۡ یَّشَآءُ وَ هُمۡ یُجَادِلُوۡنَ فِی اللّٰهِ ۚ وَ هُوَ شَدِیۡدُ الۡمِحَالِ
‘আর বজ্র তার সপ্রশংস তাসবীহ পাঠ করে এবং ফেরেশতারাও তার ভয়ে। আর তিনি গর্জনকারী বজ্র পাঠান। অতঃপর যাকে ইচ্ছা তা দ্বারা আঘাত করেন এবং তারা আল্লাহ সম্বন্ধে ঝগড়া করতে থাকে। আর তিনি শক্তিতে প্রবল, শাস্তিতে কঠোর।’ (সুরা রাদ: আয়াত ১৩)
আল্লাহর পরিচয় দিয়ে মহান আল্লাহ ঘোষনা করেন-
قُلۡ مَنۡ رَّبُّ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ؕ قُلِ اللّٰهُ ؕ قُلۡ اَفَاتَّخَذۡتُمۡ مِّنۡ دُوۡنِهٖۤ اَوۡلِیَآءَ لَا یَمۡلِکُوۡنَ لِاَنۡفُسِهِمۡ نَفۡعًا وَّ لَا ضَرًّا ؕ قُلۡ هَلۡ یَسۡتَوِی الۡاَعۡمٰی وَ الۡبَصِیۡرُ ۬ۙ اَمۡ هَلۡ تَسۡتَوِی الظُّلُمٰتُ وَ النُّوۡرُ ۬ۚ اَمۡ جَعَلُوۡا لِلّٰهِ شُرَکَآءَ خَلَقُوۡا کَخَلۡقِهٖ فَتَشَابَهَ الۡخَلۡقُ عَلَیۡهِمۡ ؕ قُلِ اللّٰهُ خَالِقُ کُلِّ شَیۡءٍ وَّ هُوَ الۡوَاحِدُ الۡقَهَّارُ
‘বল, ‘আসমানসমূহ ও জমিনের রব কে’? বল, ‘আল্লাহ’। তুমি বল, ‘তোমরা কি তাঁকে ছাড়া এমন কিছুকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করেছ, যারা তাদের নিজদের কোনো উপকার অথবা অপকারের মালিক না’? বল, ‘অন্ধ ও দৃষ্টিমান ব্যক্তি কি সমান হতে পারে? নাকি অন্ধকার ও আলো সমান হতে পারে? নাকি তারা আল্লাহর জন্য এমন কতগুলো শরীক নির্ধারণ করেছে, যেগুলো তাঁর সৃষ্টির তুল্য কিছু সৃষ্টি করেছে, ফলে তাদের নিকট সৃষ্টির বিষয়টি একরকম মনে হয়েছে’? বল, ‘আল্লাহই সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা এবং তিনি এক, একচ্ছত্র ক্ষমতাধর’।’ (সুরা রাদ: আয়াত ১৬)
এভাবে তাওহিদ, রেসালাত ও আখেরাতের বর্ণনা সুবিন্যস্তভাবে আল্লাহ তাআলা সুরা রাদে তুলে ধরেছেন।
সুরা ইবরাহিম
মক্কায় অবর্তীণ ৫২ আয়াত বিশিষ্ট সুরা হলো ‘সুরা ইবরাহিম’। এ সুরাটি কোরআনুল কারিমের ১৪তম সুরা। মুসলিম জাতির পিতা হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের ঘটনা বর্ণনার পাশাপাশি সুরাটিতে প্রিয়নবির রেসালাত, নবুয়ত এবং কিছু বৈশিষ্ট্য আলোচিত হয়েছে।
সুরাটির আলোচনা মানুষকে গোমরাহীর অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে আসে। এ সুরায় রয়েছে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দোয়া ও আবেদন। আর তাহলো-
رَّبَّنَا إِنِّي أَسْكَنتُ مِن ذُرِّيَّتِي بِوَادٍ غَيْرِ ذِي زَرْعٍ عِندَ بَيْتِكَ الْمُحَرَّمِ رَبَّنَا لِيُقِيمُواْ الصَّلاَةَ فَاجْعَلْ أَفْئِدَةً مِّنَ النَّاسِ تَهْوِي إِلَيْهِمْ وَارْزُقْهُم مِّنَ الثَّمَرَاتِ لَعَلَّهُمْ يَشْكُرُونَ
‘হে আমাদের পালনকর্তা! আমি নিজের এক সন্তানকে তোমার পবিত্র গৃহের সন্নিকটে চাষাবাদহীন উপত্যকায় আবাদ করেছি; হে আমাদের পালনকর্তা! যাতে তারা নামাজ প্রতিষ্ঠা করে। অতপর আপনি কিছু লোকের অন্তরকে তাদের প্রতি আকৃষ্ট করুন এবং তাদেরকে ফলাদি দ্বারা রুজি দান করুন, সম্ভবতঃ তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে।’ (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ৩৭)
رَبَّنَا إِنَّكَ تَعْلَمُ مَا نُخْفِي وَمَا نُعْلِنُ وَمَا يَخْفَى عَلَى اللّهِ مِن شَيْءٍ فَي الأَرْضِ وَلاَ فِي السَّمَاء
‘হে আমাদের পালনকর্তা! আপনি তো জানেন আমরা যা কিছু গোপনে করি এবং যা কিছু প্রকাশ্য করি। আল্লাহর কাছে পৃথিবীতে ও আকাশে কোন কিছুই গোপন নয়।’ (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ৩৮)
رَبِّ اجْعَلْنِي مُقِيمَ الصَّلاَةِ وَمِن ذُرِّيَّتِي رَبَّنَا وَتَقَبَّلْ دُعَاء
‘হে আমার পালনকর্তা! আমাকে নামাজ কায়েমকারী করুন এবং আমার সন্তানদের মধ্যে থেকেও। হে আমাদের পালনকর্তা! কবুল করুন আমাদের দোয়া।’ (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ৪০)
رَبَّنَا اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ يَقُومُ الْحِسَابُ
‘হে আমাদের পালনকর্তা! আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে এবং সব মুমিনকে ক্ষমা করুন, যেদিন হিসাব কায়েম হবে।’ (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ৪১)
رَبَّنَا أَخِّرْنَا إِلَى أَجَلٍ قَرِيبٍ نُّجِبْ دَعْوَتَكَ وَنَتَّبِعِ الرُّسُلَ
‘হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদেরকে সামান্য মেয়াদ পর্যন্ত সময় দিন, যাতে আমরা আপনার আহবানে সাড়া দিতে এবং পয়গম্বরগণের অনুসরণ করতে পারি।’ (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ৪৪)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কোরআনের বিষয়বস্তুগুলো অধ্যয়ন করার পাশাপাশি সুরা ইবরাহিমের দোয়াগুলোর মাধ্যমে তার কাছে দোয়া করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
পাঠকের মতামত