এম আমান উল্লাহ আমান,টেকনাফ::
টেকনাফ থেকে মেরিন ড্রাইভ সড়ক হয়ে সরাসরি ককসবাজার যাওয়া যাচ্ছে। ৩১ মার্চ টেকনাফ দরগারছড়া সী-বিচ সংযোগ সড়ক দিয়ে নেমে মাত্র ৬০ মিনিটে ককসবাজার পৌঁছার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে গ্রামীণ ফোন ডিস্ট্রিভিউটর আবদুল করিম বলেন- সকাল ১১ টায় যাত্রা শুরু করে ১২ টায় ককসবাজার যাত্রা শেষ করেছি। সাগরের কুল ঘেঁষে বয়ে চলা দৃষ্টিনন্দন মেরিন ড্রাইভ সড়ক। পাহাড়, সমুদ্র ও প্রকৃতির উত্তাল হাওয়ায় আনন্দ হিল্লোল এক অন্যরকম ভ্রমণ হয়েছে। কমিউনিকেশন ভিলেজের এমডি মোঃ আলী বলেন যে কোনো ভ্রমণপিপাসু মেরিন ড্রাইভে এসে মুগ্ধ না হয়ে পারবেনা। মেরিন ড্রাইভ সড়কে গেলে মনে হয় আমি বিদেশের নামকরা কোন পর্যটন এলাকায় অবস্থান করছি।
সেতুমন্ত্রীর ঘোষণা মতে ২০১৭ সালের মার্চ মাসে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শুভ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।
৩১ মার্চ টেকনাফ –ককসবাজার মেরিন ডাইভ সড়ক পরিদর্শনে দেখা যায় কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে, সেনা বাহিনী দিন রাত কাজ চালিয়ে চলতি মাসে শুভ উদ্বোধনের প্রচেষ্ঠা অব্যাহত রেখেছেন। সেনা বাহিনীর পক্ষ থেকে দায়িত্বে থাকা মেজর নাহিদ সাংবাকিদের জানান, সরকারের নির্দেশনায় মেরিন ড্রাইভ সড়কের নির্মাণ কাজ দ্রুত চলছে, মেরিন ড্রাইভ সড়কের কাজ শেষ হলে দেশি-বিদেশি পর্যটকের আগমন বাড়বে। এছাড়া অর্ধেকেরও কম সময় নিয়ে পর্যটকরা টেকনাফ যেতে সক্ষম হবে। বদলে যাবে টেকনাফের সব কিছু।
এদিকে বাংলাদেশ সরকারের সেতুমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলে ছিলেন ২০২৭ সালের মার্চ মাসে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শুভ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । মার্চ মাসে সম্ভব না হলেও চলতি মাসের শেষের দিকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুভ উদ্বোধন করবেন বলে জানা গেছে।
সরেজিমন পরিদর্শনে দেখা গেছে, ইনানী থেকে শীলখালী পর্যন্ত সাগরের কুল ঘেঁষে বয়ে গেছে দৃষ্টিনন্দন মেরিন ড্রাইভ সড়ক। পাহাড়, সমুদ্র ও প্রকৃতির উত্তাল হাওয়ায় মেরিন ড্রাইভ ভ্রমণ অন্যরকম এক অনুভূতি সৃষ্টি করে। বিশেষ করে বিকেলের দিকে। সূর্যাস্তের পূর্বে মেরিন ড্রাইভের সৌন্দর্য্য আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠে। ফলে যে কোনো ভ্রমণপিপাসু মানুষ মেরিন ড্রাইভ আসলে মুগ্ধ না হয়ে পারবেন না। দৃষ্টিনন্দন এ সড়কটির কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। ৩য় পর্যায় কাজের প্রকল্প পরিচালক মেজর নাহিদ বলেন, কক্সবাজার টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের কাজ ১৯৯৩-১৯৯৪ অর্থবছরে ফিডার রোড টাইপ এ হিসেবে শুরু হয়। ১৯৯৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সেনাবাহিনীর ১৬ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ শুরু করে। পরবর্তীতে কাজের সুবিধার্থে প্রকল্পটি ৩ টি পর্যায়ে ভাগ করা হয়। ২০০৮ সালের জুন মাসে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হয়। ২০০৮-২০০৯ অর্থবছরের ২য় পর্যায়ের কাজ শুরু হয়। কিন্তু পরবর্তীতে অর্থ ছাড়ে বিলম্ব হওয়ায় ২য় পর্যায়ের কাজও ধীরগতিতে হয়। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর উদ্যোগে প্রকল্পের অর্থ ছাড়সহ সার্বিক সহযোগিতায় এবং ১৬ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কঠোর ও নিরলস পরিশ্রমে মেরিন ড্রাইভ প্রকল্পটির ২য় পর্যায় ইনানী থেকে শীলখালী পর্যন্ত কাজ ৬ মাসের পূর্বেই শেষ হয়। এ কর্মকর্তা আরও বলেন, ১৬ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন ইতিমধ্যেই মেরিন ড্রাইভের ৩য় পর্যায়ের শীলখালী থেকে টেকনাফ (৪০-৮০ কি.মি.) প্রায় ৩২ কি.মি. সড়কের মাটি ভরাটের কাজ ৮০ শতাংশ সম্পন্ন করেছে। ২০১৬ সালে এপ্রিলের মধ্যে শতভাগ মাটির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ৩য় পর্যায়ে সড়কে ৪২ টি কালভার্ট এবং ৩টি পিসি গার্ডার ব্রিজের নির্মাণ কাজ একই গতিতে এগিয়ে চলছে।শুধু রাস্তা নির্মাণ নয়, ১৬ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন রাস্তাটির শোভাবর্ধন এবং পরিবেশগত দিক বিবেচনায় রেখে মেরিন ড্রাইভের ২য় পর্যায়ে প্রায় আড়াই লক্ষ ঝাউগাছ এবং কৃষ্ণচুড়াসহ প্রায় ৫০ হাজার অন্যান্য ফুলের গাছ রোপণ করা হয়। এছাড়া ১৬ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন মেরিন ড্রাইভের ৩য় পর্যায়ের শোভাবর্ধন ও উপকূলীয় পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় রাখার উদ্দেশ্যে আরও প্রায় ৩ লক্ষ ঝাউগাছ এবং সোনালু, ফলানু, কৃষ্ণচূড়া, মিনঝিরি, বকুলসহ ৫০ হাজার ফুলের চারা লাগানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে।