দেশের সবচেয়ে উঁচু সড়ক ছিল বান্দরবানের ডিমপাহাড়। এবার সেনাবাহিনীর হাত ধরে সেই খ্যাতি দখল করেছে একই জেলার থানচি লিক্রি সড়ক। তিন পার্বত্য জেলায় এক হাজার ৩৬ কিলোমিটার সীমান্ত সড়ক নির্মাণের অংশ হিসেবে এই সড়ক নির্মাণ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। ইতোমধ্যে ৪০ শতাংশের বেশি কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে শতভাগ কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রকল্পের কাজ শেষ হলে বান্দরবানসহ তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে আঞ্চলিক সংযোগ স্থাপন ও সীমান্তে নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়া ছাড়াও কৃষি এবং পর্যটন শিল্পের প্রসার ঘটবে।
জানা যায়, সড়কটির শুরু হয়েছে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম থেকে। এরপর দোছড়ি-আলীকদম-থানচি-রেমাক্রি-লিক্রি-ধোপানিছড়া সড়ক হয়ে তিন দেশের (বাংলাদেশ-মিয়ানমার-ভারত) সীমানা তিনমুখ পাহাড় ঘেষে রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি সীমান্তের রামগড় পর্যন্ত পৌঁছাবে এই সড়ক। এর দৈর্ঘ্য এক হাজার ৩৬ কিলোমিটার। ২৪ ফুট সড়কটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালে। দুই পর্যায়ে কাজটি সমাপ্ত হওয়ার কথা রয়েছে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে। প্রথম পর্যায়ে ৩১৭ কিলোমিটার কাজ সাতটি সেগমেন্টে বাস্তবায়ন হয়েছে। এর পর শুরু হবে দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ। সড়কটি বংঙ্গুপাড়া সমতল থেকে উচ্চতা ৩ হাজার ফুট। সীমান্তের গহীন ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নে সেনাবাহিনীর এমন পরিবর্তনে খুশি স্থানীয়রা।
থানচি সদর থেকে ৪ কিলোমিটার গেলে দেখা মেলে তমা তুংগী। এরপর ১৯ কিলোমিটার বাকলাই এলাকায় আরেক সম্ভাবনাময় পর্যটন স্পট উঁকি দিচ্ছে। এভাবে পুরো সড়কটিই যেন সপ্নের। সড়কটি সম্পূর্ণ কাজ শেষ হলে পুরো বান্দরবানের চেহারা যেমন পাল্টে যাবে তেমনি রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি সীমান্ত এলাকায়ও আমূল পরিবর্তন ঘটবে। পাশাপাশি পার্বত্যঞ্চলের সীমান্ত পূর্ণ-নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
স্থানীয়রা জানান, বংঙ্গুপাড়া ও বাকলাই দুর্গম এলাকা থেকে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মানুষ উপজেলা সদরে পৌঁছাতে ৩-৪ দিন সময় লাগত। এখন সেসব জায়গা থেকে অনায়াসে কয়েকঘন্টায় পৌঁছানো সম্ভব।
সরকারি অর্থায়নে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের সার্বিক তত্বাবধানে ১৬, ২০ এবং এডহক ২৬ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন এই প্রকল্পের গুণগতমান নিশ্চিত করছে।
রবিবার (২১ আগস্ট) সকালে থানচি-রুমা সীমান্তের বাকলাই এলাকায় এই সীমান্ত সড়ক নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করেছেন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ।
এই প্রসঙ্গে সেনাবাহিনীর ১৬ ইসিবির প্রকল্প কর্মকর্তা মেজর মো. মোস্তফা কামাল বলেছেন, ফেনী রামগড় থেকে শুরু হয়ে ঘুমধুম পর্যন্ত এই সীমান্ত সড়ক নির্মিত হলে তিন পার্বত্য জেলার উপজেলাগুলো সীমান্ত সড়কের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন হবে। এতে করে দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের সীমান্তের কৃষকরা আমাদের মূলধারার কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারবে। এছাড়া যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি, পাহাড়ের মানুষের মৌলিক চাহিদার বাস্তবায়ন, শিক্ষা ক্ষেত্রেও অনেক পরিবর্তন ঘটবে। এছাড়াও ট্যুরিজম, আর্থসামাজিক উন্নয়ন ছাড়াও নিরাপত্তা নিশ্চিতে এই সড়কটি অন্যতম ভূমিকা রাখবে।