দেশে দ্বিতীয়বারের মতো জেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। সোমবার (১৭ অক্টোবর) সকাল ৯টায় শুরু হওয়া ভোটগ্রহণ বিরতিহীনভাবে চলবে দুপুর ২টা পর্যন্ত।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) যুগ্ম সচিব এসএম আসাদুজ্জামান জানান, প্রতি উপজেলা সদরে স্থাপিত ভোটকেন্দ্রে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হচ্ছে। তবে প্রতিটি ওয়ার্ডে স্থাপন করা হয়েছে ভোটকেন্দ্র।
তিনি জানান, ভোটগ্রহণ মনিটর করার জন্য প্রতি ভোটকেন্দ্রে সিসিটিভি স্থাপন করা হয়েছে। সিসিটিভি ও ইভিএম মেশিন যথাযথভাবে সচল রাখার স্বার্থে এবং ভোটারগণ যাতে সুষ্ঠুভাবে তাদের ভোট প্রয়োগ করতে পারেন সেজন্য ভোটকেন্দ্র সংশ্লিষ্ট উপজেলা সদরে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
নির্বাচনে ২৬ জন চেয়ারম্যান, ১৮ জন মহিলা সদস্য এবং ৬৫ জন সাধারণ সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
তিন পার্বত্য জেলা বাদে ৬১টি জেলা পরিষদে নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা করেছিল ইসি। তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নোয়াখালী জেলা পরিষদ নির্বাচন আদালত কর্তৃক স্থগিত করা হয়েছে এবং ভোলা ও ফেনী জেলার সকল পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায়। ৫৭টি জেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এতে চেয়ারম্যান পদে ৯২ জন, সদস্য পদে ১ হাজার ৪৮৫ জন ও সংরক্ষিত সদস্য পদে ৬০৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এই নির্বাচনে ৪৬২টি ভোটকেন্দ্রের ৯২৫টি ভোটকক্ষে ৬০ হাজার ৮৬৬ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
জেলা পরিষদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে জেলা প্রশাসক ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করছেন। আর প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসারের দায়িত্বে রয়েছে অন্যান্য নির্বাচন কর্মকর্তারা। তবে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ ওঠায় তাকে পরিবর্তন করে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
১৯৮৯ সালে দেশে তিন পার্বত্য জেলায় একবারই সরাসরি নির্বাচন হয়েছিল। আর কোনো জেলা পরিষদ নির্বাচন হয়নি। এরপর ১৯৮৮ সালে হুসাইন মুহাম্মাদ এরশাদ সরকারের সময় প্রণীত আইনে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে সরকার কর্তৃক নিয়োগ দেওয়ার বিধান ছিল। পরবর্তীতে আইনটি কার্যকারিতা হারায়।
এরপর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারে এসে ২০০০ সালে নতুন আইন করে জেলা পরিষদ আইন প্রণয়ন করে। সে আইনটি মাঝে ফের অকার্যকর থাকে। পরবর্তীতে নবম সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এলে ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর ৬১ জেলায় নিজ দলের নেতাদের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয় আওয়ামী লীগ। এদের মেয়াদ শেষ হলে ২০১৬ সালে প্রথমবারের মতো সারাদেশের ৬১ জেলায় নির্বাচন দেওয়া হয়। সে সময় ১৯ জন চেয়ারম্যান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন।
দ্বিতীয় জেলা পরিষদ নির্বাচনের আগে আইনি অধিকতর সংশোধনের উদ্যোগ নেয় সরকার। এ অবস্থায় জেলা পরিষদে প্রশাসক নিয়োগের আগে প্রত্যেক জেলা পরিষদের প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতা পরিচালনার জন্য প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অথবা ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। জেলা পরিষদে প্রশাসক নিয়োগের বিষয়টি যোগ করে জেলা পরিষদ আইনের সংশোধনী গত ৬ এপ্রিল সংসদে পাস হয়। এরপর সংশোধনীর গেজেট প্রকাশ হয় ১৩ এপ্রিল।
আগের আইন অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট জেলার অধীনে যতগুলো স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেগুলোর সদস্যরাই জেলা পরিষদ সদস্যদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতেন। অর্থাৎ সিটি করপোরেশন, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেয়র এবং কাউন্সিলররা বা সদস্যরা ভোট দিয়ে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ১৫ জন সদস্য ও পাঁচজন সংরক্ষিত সদস্য নির্বাচিত করতেন। কিন্তু সংশোধীত আইনে জেলা পরিষদের সদস্য সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট জেলার উপজেলার সংখ্যার সমান। আর নারী সদস্য সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট জেলার উপজেলা চেয়ারম্যানদের মোট সংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ (দুই জনের কম নয়)। অর্থাৎ একেক জেলা পরিষদের সদস্যের সংখ্যা হবে একেক রকম, সংশোধনের আগে যেটা ২১ জন নিদির্ষ্ট করে দেওয়া ছিল।
আইনে আগে পরিষদের মেয়াদ শেষ হলেও পরবর্তী নির্বাচন না হওয়ার পর্যন্ত পূর্বের পরিষদকেই দায়িত্ব পালন করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু সংশোধীত আইনে সেটির পরিবর্তে প্রশাসক বসানোর বিধান আনা হয়েছে। সেই ক্ষমতা বলেই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় প্রশাসক বসানোর আদেশ জারি করে, যার বলেই এখনও প্রশাসক দায়িত্বে রয়েছে।
প্রশাসক বসানোর পরের দিন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোহাম্মদ তানভীর আজম ছিদ্দিকী গত ১৮ এপ্রিল এক চিঠিতে নির্বাচন কমিশনকে দ্রুততম সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বলে। এরপর সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা সাপেক্ষে ভোটের তফসিল ঘোষণা করে কমিশন। জেলা পরিষদ (ওয়ার্ডের সীমা নির্ধারণ) বিধিমালা, ২০১৬ অনুযায়ী জেলা ডেপুটি কমিশনার সংশ্লিষ্ট জেলা পরিষদের ‘সীমা নির্ধারণ কর্মকর্তা’ এবং তার মনোনীত উপ-পরিচালক, স্থানীয় সরকার অথবা এডিশনাল ডেপুটি কমিশনার সহকারী সীমা নির্ধারণ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বপালন করে থাকেন।