নিউজ ডেস্ক ::
দোহাজারী-কক্সবাজার-গুনধুম রেললাইন প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলছে। এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকারভুক্ত প্রকল্প। চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজারের পাঁচ অভয়ারণ্য ও সংরক্ষিত বনাঞ্চল রক্ষার ব্যবস্থা রাখতে কয়েকটি সুপারিশ করেছে পরিবেশবাদীরা। বন্যপ্রাণীর চলাচল নির্বিঘ্ন করতে করিডোর তৈরিসহ কার্যকর উদ্যোগ নিতে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা দিয়েছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংগঠন ও সংস্থা।রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের মধ্যে পড়া বনাঞ্চল ও অভয়ারণ্যগুলো হলো- চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, ফাঁসিয়াখালী বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, রাজারকুল সংরক্ষিত বন, আপার রেজু সংরক্ষিত বন ও মেধাকচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যান। এসব এলাকায় শুধু হাতি চলাচল করে এমন ‘করিডোর’ রয়েছে ৯টি।বন বিভাগ ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অভয়ারণ্যগুলোতে হাতি, হরিণসহ বিভিন্ন প্রাণী চলাচলের পথগুলোতে আন্ডারপাস, জলাধারের ওপর বক্স কালভার্ট নির্মাণ ও ট্রেন থেকে হাতি রক্ষায় ‘এলিফ্যান্ট ট্র্যাকিং’ সিস্টেম চালু রাখতে হবে। পাশাপাশি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কমিটি গঠনের প্রস্তাবও দেন তারা। সূত্র জানায়, বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ থেকে সুনির্দিষ্ট কয়েকটি প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে রেলওয়েকে। চট্টগ্রাম বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে দেওয়া উল্লেখযোগ্য প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে_ অভয়ারণ্যের যে স্থানে রেললাইন নির্মাণ করা হবে, সেখানে নির্বিঘ্নে হাতি চলাচলেরর জন্য আট মিটার উঁচু ও ১০০ মিটার দৈর্ঘ্যের ‘আন্ডারপাস’ নির্মাণ, হরিণসহ ছোট ছোট মাংশাসী প্রাণী চলাচলের জন্য এক কিলোমিটার পর পর কমপক্ষে দুই মিটারের ‘আন্ডারপাস’ নির্মাণ, সরীসৃপ ও উভচর প্রাণীর যাতায়াতের জন্য প্রাকৃতিক জলাধারের ওপর বক্স কালভার্ট নির্মাণ, বক্স কালভার্ট বা আন্ডারপাসগুলোর দেয়ালে প্রাকৃতিক উদ্ভিদে ঢেকে দেওয়া, বনাঞ্চলের মধ্যে ট্রেনের গতি ২০ কিলোমিটারে কমিয়ে আনা এবং এলিফ্যান্ট ট্র্যাকিং কমিটি গঠন করা।বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এসএম গোলাম মাওলা সমকালকে বলেন, ‘রেললাইন নির্মাণের ক্ষেত্রে পরিবেশ ও প্রকৃতি সংরক্ষণের জন্য আমরা বিভিন্ন সুপারিশ দিয়েছি। বিশেষ করে হাতি, হরিণসহ বিভিন্ন প্রাণী চলাচলের জন্য আন্ডারপাস নির্মাণের পাশাপাশি ট্রেনের গতি ও শব্দ নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়েছে রেলওয়েকে।’ এদিকে দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণকে সামনে রেখে চট্টগ্রাম-কক্সবাজারে ২৬ কিলোমিটার বনাঞ্চল জরিপ করে সরকারকে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার’ (ইইউসিএন)। সংগঠনটির ওয়াইল্ড বায়োলজিস্ট মো. আশরাফুল হক সমকালকে বলেন, ‘বন ও বন্যপ্রাণী রক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ ছাড়া সিলেটের লাউয়াছড়া বনাঞ্চলের ওপর দিয়ে রেললাইন নির্মাণের ফলে সেখানে প্রায় দিনই বনাঞ্চলের কোনো না কোনো স্থানে সরীসৃপসহ বিভিন্ন প্রাণীর মৃত্যু হচ্ছে। তাই আমরা দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণকালে এ বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হাতি চলাচলের করিডোরে আন্ডারপাস নির্মাণসহ বিভিন্ন সুপারিশ করেছি।’ তবে দোহাজারী-কক্সবাজার-গুনধুম প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. মোজাম্মেল হক সমকালকে বলেন, ‘বন, বন্যপ্রাণী ও পরিবেশ রক্ষা করেই দোহাজারী থেকে কক্সবাজার হয়ে গুনধুম পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ করা হবে। যেসব স্থান দিয়ে রেললাইন নির্মাণ করা হবে, সেসব স্থানে থাকা সংরক্ষিত বনাঞ্চল, অভয়ারণ্য ও উদ্যানগুলোর সার্বিক পরিবেশ ঠিক রাখতে বন ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের দেওয়া সুপারিশগুলো আমলে নেওয়া হবে। যদিও প্রকল্পের মধ্যেই এ বিষয়ে আগে থেকেই পরিবেশ ও প্রকৃতি রক্ষার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত ছিল।’ ডুয়েল গেজ এই রেললাইন নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ১৬ হাজার ১৮২ কোটি ১৩ লাখ টাকা। চলতি বছরের বাজেটে যে ১০টি মেগা প্রকল্পে বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হয়, এর মধ্যে রয়েছে এই প্রকল্পটিও। প্রকল্প অনুযায়ী, চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু পর্যন্ত ৮৯ কিলোমিটার, রামু থেকে কক্সবাজার সৈকত ১১ কিলোমিটার ও রামু থেকে মিয়ানমার সীমান্ত গুনধুম পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটারসহ ১২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হবে। রেললাইনটি হলে বছরে প্রায় ২০ লাখ যাত্রী চলাচলের সুযোগ পাবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল কক্সবাজারের ঝিলংজায় প্রকল্পটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। –
পাঠকের মতামত