বিধ্বংসী ক্ষমতা নিয়ে কক্সবাজার উপকূলে আঘাত হানতে বসা ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’ মোকাবেলায় প্রস্তুতি সভা করেছে জেলা প্রশাসন। দ্বিতীয় দফায় শুক্রবার সন্ধ্যা ৭ টায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আট উপজেলায় ৯০টি মেডিকেল টিম গঠন, উপকুলীয় এলাকার লোকজনকে সরিয়ে আনতে যান-বাহনের ব্যবস্থাকরণ, সাইক্লোন শেল্টারগুলো খোলা রাখা, ফায়ার সার্ভিসের জনবল প্রস্তুত রাখা, ও চরাঞ্চলের স্কুল কলেজ সমূহকে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা, মাইকিং করে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়।
জরুরী এ সভায় বক্তব্য রাখেন, জেলয় প্রশাসক মোঃ আলী হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এড. সিরাজুল মোস্তফা, সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান চেয়ারম্যান, কক্সবাজার আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ একেএম নাজমুল হক, সিভিল সার্জন ডাঃ পুচনো, কক্সবাজার রেড ক্রিসেন্ট সভাপতি নুরুল আবছার ও কক্সবাজার পৌরসভা মেয়র (ভারপ্রাপ্ত) মাহবুবুর রহমান মাবু প্রমুখ। সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় ও পরবর্তী দূর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলার সকল সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল করে কর্মস্থলে উপস্থিত থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রেডক্রিসেন্ট কর্মী, মেডিকেল টীম, ফায়ার সার্ভিস টীম ও উদ্ধার কর্মীদেরও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঘুর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) উপ-পরিচালক হাফিজ আহমদ জানান, ঘুর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির অধিনে কক্সবাজার জেলার ৭ উপজেলার (রামু ব্যতিত) ৪৮ ইউনিয়নে ৪১৪টি ইউনিট কাজ করবে। এদের প্রত্যেক ইউনিটে ১৫ জন করে মোট ৬ হাজার ২১০ জন স্বেচ্ছাসেবক রয়েছে। ঘুর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস ও সংকেত পাওয়ার পর সেই বার্তা তাদের কাছে পৌঁছে দিয়ে দূর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, ঘুর্ণিঝড়ের সময় দুর্গত মানুষের নিরাপদ অবস্থানের জন্য জেলার ৫১৬ টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এই মুহুর্তে দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য ১৬২ মেট্রিক টন শুকনো খাবার ও নগদ ২ লাখ ২৩ হাজার টাকা মজুদ রয়েছে।
আশ্রয়কেন্দ্রমূখী উপকুলীয় এলাকার লোকজনকে উদ্ধার করতে জেলার সকল পরিবহণ মালিকগণকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জেলা প্রশাসনের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে। শুক্রবার বিকেলে জেলা শহর উপকূলীয় এলাকায় সতর্কতা মূলক মাইকিং করা হয়েছে। গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থাকতে বলা হয়েছে। যাতে তারা স্বল্প সময়ের নির্দেশে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারে।
কক্সবাজার জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহমদ জানান, গভীর সাগরে মৎস্য আহরণে যাওয়া ফিশিং বোটসমূহের বেশীর ভাগই নিরাপদে কুলে ফিরে এসেছে। শনিবার ভোররাত একটার দিকে এ রিপোর্ট লেখার সময় জেলার উপকূলীয় বিভিন্ন এলাকায় থেমে থেমে দমকা বাতাস বইছে ও অন্যদিনের তুলনায় জোয়ারের উচ্চতা বেড়েছে বলে জানা গেছে। কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ একেএম নাজমুল হক জানান, কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ছয় নাম্বার বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। কক্সবাজার থেকে ৯৪৫ কিলোমিটার দুরে অবস্হানরত ঘূর্ণিঝড় "রোয়ানো" আজ (শনিবার) বিকালে উপকূল অতিক্রম করতে পারে। জেলার উপকূলীয় এলাকা, দ্বীপ ও চরসমূহ এসময় স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ৭ ফিট উঁচু জলোচ্ছাসে প্লাবিত হওয়ার আশংকা রয়েছে।