বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় বিভিন্ন মুসলিম দেশে ধর্মীয় জমায়েত থেকে শুরু করে সব ধরণের জনসমাবেশের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হলেও বাংলাদেশে এরকম জমায়েতকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন না তাবলীগ জামাতের সদস্যরা।
‘ধর্মীয় সমাবেশ এড়িয়ে চলার মতো কোন পরিস্থিতি বাংলাদেশে সৃষ্টি হয়নি’ বলে উল্লেখ করে বাংলাদেশ তাবলীগ জামাতের জ্যেষ্ঠ সদস্য মাহফুজুর রহমান বলেন, এদেশে ভাইরাস সেভাবে ছড়ায়নি।
“যেসব দেশে এটি বেশি ছড়িয়েছে – যেমন চীন, ইটালি, দক্ষিণ কোরিয়া – তাদের পরিস্থিতি উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো। মালয়েশিয়ার মতো আমাদের দেশে এই ভাইরাস সেভাবে ছড়ায়নি। তাই এখানে জমায়েতে তেমন কোন ঝুঁকি আমি দেখছি না। এতে ভয় করার কিছু নেই” – বলেন তিনি।
তবে মালয়েশিয়ার যতো মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন – তাদের একটি বড় অংশই সেখানকার একটি ধর্মীয় জমায়েতে অংশ নিয়েছিলেন বলে বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
গত মাসের ২৭ তারিখ থেকে চলতি মাসের এক তারিখ পর্যন্ত চারদিনব্যাপী ওই অনুষ্ঠান হয়েছিল।
সেখানে মালয়েশিয়ার স্থানীয় মুসল্লি থেকে শুরু থেকে বাংলাদেশ, ব্রুনেই, ফিলিপিন্স, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের মানুষ অংশ নিয়েছিলেন বলে কর্তৃপক্ষ জানায়।
প্রতিবছরের মতো এবারও বাংলাদেশ থেকে তাবলীগ জামাতের বেশ কয়েকজন সদস্য ওই জমায়েতে অংশ নিয়েছিলেন।
ওই জমায়েতে অংশ নেয়ার পর পরই মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের কয়েকজন নাগরিক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। এর পর দেশ দুটির কর্তৃপক্ষ সব ধরণের সমাবেশ এড়িয়ে চলতে জনগণকে সতর্ক করে দেন।তবে বাংলাদেশের তাবলীগ জামাতের অনুসারীরা মনে করেন, বাংলাদেশ এখনও ততোটা ঝুঁকিতে নেই।
তাবলীগ জামাতের জ্যেষ্ঠ সদস্য মাহফুজুর রহমান মনে করেন, করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি এর ভৌগলিক অবস্থানের ওপর নির্ভর করে।
তার মতে মালয়েশিয়াতে চীন ও সিঙ্গাপুরের নাগরিকদের চলাচল বেশি হওয়ার কারণে ওই দেশে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হতে পারে।
“মালয়েশিয়ার ওই জমায়েত থেকে ভাইরাসটি ছড়িয়েছে বলে যে সন্দেহ করা হচ্ছে, তার মানে এই নয় যে অন্য সব জমায়েত থেকেও এমনটা হবে” – বলেন তিনি।
গত শুক্রবার থেকে তিনদিনব্যাপী পাকিস্তানে একই ধরণের ধর্মীয় সমাবেশ হয়। যাতে অংশ নেন কয়েক লাখ মুসল্লি।
সেই জমায়েতের উদাহরণ টেনে মি. রহমান বলেন, “লাহোরের সমাবেশে লাখ লাখ মানুষ সমবেত হয়েছে। তাদের মধ্যে ৮০টি দেশের অন্তত ৫০০০ জন বিদেশি নাগরিক ছিল । কই, ওখানে তো কোন সমস্যা হয়নি।”
তবে দেশের বাইরে বিভিন্ন জমায়েতে অংশ গ্রহণের বিষয়টি যার যার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের বিষয় বলে তিনি জানিয়েছেন ।
এ ব্যাপারে তিনি বলেন, “সরকার খুব প্রয়োজন ছাড়া বিদেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সতর্কতা দিয়েছেন। সরকার তো আমাদের ভালোর জন্যই এই সতর্কতা দিয়েছেন। কেউ যদি যেতে চায় সেটা তার ব্যক্তিগত বিষয়।”
কিন্তু করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের একটি বড় সংখ্যক মানুষ মালয়েশিয়ার ওই জমায়েতে অংশ নেয়ায়, বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে দেশটির সরকারকে।
গত এক সপ্তাহের মাথায় দেশটিতে নতুন করে ১৯০ জন ভাইরাসে আক্রান্ত হন। তাদের বেশিরভাগই ওই বৈশ্বিক ইসলামী অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন বলে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।মালয়েশিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক নূর হিশাম আবদুল্লাহ সংবাদমাধ্যম এএফপিকে জানান, তাদের দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ৪২৮ জনের মধ্যে ২৪৩ জন শ্রী পেটালিং মসজিদে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন।
এমন অবস্থায় দেশটির প্রধানমন্ত্রী মুহিউদ্দিন ইয়াসিন আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, মালয়েশিয়া বড় ধরণের সংক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছে। এজন্য তিনি সবাইকে জনসমাবেশ এড়িয়ে চলার আহ্বান জানান।
এদিকে, করোনাভাইরাস থেকে সতর্ক থাকতে মালয়েশিয়ার পার্লিসে জুমার নামাজ স্থগিত ঘোষণা করার পাশাপাশি ধর্মীয় মাহফিলের ক্ষেত্রেও কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
মালয়েশিয়ার ওই সমাবেশে প্রায় ২০ হাজার মানুষের জমায়েত হয়। এর মধ্যে ৫০০ জনই ছিলেন বিদেশি নাগরিক।
শনিবার ব্রুনেইয়ে নতুন করে ১০ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এতে দেশটিতে এখন মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ জনে।
তাদের অনেকেই মালয়েশিয়ার ওই জমায়েতে ছিলেন বলে জানা গেছে।
সিঙ্গাপুরের আক্রান্ত কয়েকজন নাগরিকও ওই জমায়েতে ছিলেন বলে বলা হচ্ছে।
পাঠকের মতামত