এবার ধর্ষণের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে সন্ত্রাসীদের হাতে এক গৃহবধূ নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রচ- মারধরের কারণে টানা দুদিন ওই নারীর নাক-মুখ দিয়ে অঝোরে রক্ত পড়েছে। গুরুতর অসুস্থ ওই নারীকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনাটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুলিশ কেস হিসেবে নথিভুক্ত করেছেন। এমন অবস্থায় দিশেহারা গৃহবধূর পরিবার। হাসপাতালের মেঝেতে চিকিৎসাধীন মায়ের মৃত্যুর আশঙ্কায় মাথার কাছে বসে শুধুই কাঁদছিল তার সাত বছর বয়সী একমাত্র ছেলে সাব্বির। তার কান্না থামানো যাচ্ছিল না। মাথায় প্রচ- আঘাত পাওয়া মা ছেলেসহ পরিবারের লোকজনদের ভালভাবে চিনতেই পারছিল না।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে রাজধানীর পল্লবী থানাধীন বাওনিয়াবাদের ‘ই’ ব্লকের ১৮ নম্বর লাইনের ৭ নম্বর বাড়িতে ঘটনাটি ঘটে। আহত গৃহবধূ তাসলিমা (২৫) ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় নারী ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। সরেজমিনে দেখা গেছে, তসলিমা ওয়ার্ডের বারান্দায় চিকিৎসাধীন। তাকে ঘিরে রয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। আর মাথার কাছে বসে কাঁদছে সাত বছরের ছেলে সাব্বির। তার পাশে বসেই বিলাপ করছিলেন তাসলিমার স্বামী সোহেল (৩৬)। যন্ত্রণায় তাসলিমা কথা বলতে পারছেন না। একেকবার মুখ, শরীর বেঁকে বিছানা থেকে উঠে যাচ্ছে। তাকে জোর করে ধরে শুইয়ে রাখা হচ্ছে। সারাক্ষণ মুখে বমির ভাব।
তাসলিমার স্বামী সোহেলের দাবি, তার ও তাসলিমাদের পরিবার সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করে। তাদের পাশেই বসবাস করে জলিল নামের এক স্থানীয় সন্ত্রাসী। জলিল স্থানীয় সন্ত্রাসীদের সঙ্গে চোরাই রিক্সা ও মাদক ব্যবসা করে। মোটামুটি বড় হওয়ার পর থেকেই জলিল নানাভাবে উত্ত্যক্ত করে আসছিল তাসলিমাকে। শুধু তাসলিমা নয়, অনেক মেয়েকেই জলিল নানাভাবে বিরক্ত করে।
এমন পরিস্থিতিতে রেহাই পেতে তাসলিমার পরিবার তাকে বিয়ে দেয়। প্রায় নয় বছর আগে তার সঙ্গে বিয়ে হয় তাসলিমার। তাদের ঘরে সাব্বির নামে সাত বছর বয়সী এক ছেলে রয়েছে। কিন্তু তাতেও পিছু ছাড়েনি জলিল। বিয়ের পর থেকে অদ্যাবধি দশ বছর ধরে তাসলিমাকে নানাভাবে হেনস্থা ও উত্ত্যক্ত করে আসছিল জলিল।
সোহেল আরও জানান, তিনি বাড়ির কাছেই একটি মুদি দোকান চালান। ঘটনার দিন গত বৃহস্পতিবার রাত তখন প্রায় সাড়ে আটটা। তিনি দোকানেই ছিলেন। তারা তিন রুমের একটি বাসায় থাকেন। ছেলে পাশের রুমে ঘুমিয়েছিল। এ সময় জলিল মাতাল অবস্থায় তার বাড়িতে যায়। দরজায় নক করলে স্বাভাবিক কারণে সবাই দরজা খুলে দেখে, কে এসেছে। দরজা খোলামাত্র জলিল তার স্ত্রীকে জাপটে ধরার চেষ্টা করে। এ সময় তার স্ত্রী ভয়ে চিৎকার দেয়ার চেষ্টা করলে জলিল তার মুখ চেপে ধরে বেধড়ক মারধর করে। গলা টিপে এবং মাথায় কিল-ঘুষি দেয়। বুকে মারাত্মকভাবে আঘাত করে।
তাসলিমার চিৎকারে আশপাশের মানুষ এগিয়ে গেলে জলিল নিজের জামা-কাপড় নিজেই ছিঁড়ে ফেলে। লোকজন আসার পর জলিল তাদের বলে, তাসলিমা তাকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে মারধর করেছে। শারীরিক শক্তির দিক থেকে জলিলের তাসলিমা অনেক বেশি শক্তিশালী; এমন কথায় বিশ্বাস না করে জনতা জলিলের ওপর চড়াও হওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় পাশেই থাকা জলিলদের বাড়ির লোকজন সেখানে হাজির হয়। তারা স্থানীয় সন্ত্রাসী হিসেবে প্রভাবশালী। পরে জলিল তার লোকজন নিয়ে তাসলিমার নামে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে তাকে বেধড়ক মারধর করে। মারের চোটে তাসলিমা রক্তবমি করতে করতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এ সময় জলিলসহ অন্যরা পালিয়ে যায়।
তাসলিমাকে দ্রুত মিরপুর আধুনিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাসলিমার অবস্থার অবনতি হয়। চিকিৎসকরা দ্রুত প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাসলিমাকে শেরেবাংলানগর শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। সেখানে অবস্থার আরও অবনতি হতে থাকে। এরপর তাকে পাঠানো হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। শনিবার সকালে তার রক্তবমি কমে আসে। তবে মাঝেমধ্যেই বমির ভাব হচ্ছে। তার অবস্থা গুরুতর। ঘটনার পর থেকে তাসলিমা আবোলতাবোল বলছেন। মাঝেমধ্যে চোখ খুললেও কয়েক সেকেন্ড পরেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
তাসলিমার স্বামী সোহেল বলছিলেন, আল্লাহ না করুক। স্ত্রীর যদি মৃত্যু হয়, তাহলে তার একমাত্র ছেলের কি হবে। এই বলেই কেঁদে ফেলেন তিনি। তার অভিযোগ, স্ত্রীকে এভাবে মারধর করার পেছনে জলিল ছাড়াও তার পরিবারের লোকজন জড়িত। কারণ জলিলের অবৈধ ব্যবসার কারণে আশপাশের লোকজন খুবই অতিষ্ঠ। কিন্তু কিছুই বলতে পারছে না। তারা মাদক ব্যবসা ছাড়াও নানা ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত। যারাই তাদের কিছু বলতে যায় তাদেরই দলবল নিয়ে জলিল ভয় দেখায়। তাতেও কাজ না হলে মারধর করে। নারী লোভী জলিলের কারণে ওই মহল্লার অনেকের মেয়েকেই উপযুক্ত বয়স হওয়ার আগেই বিয়ে দিতে হয়েছে। জলিলের অত্যাচারে আশপাশের মেয়েরা এবং তাদের অভিভাবকরা অতিষ্ঠ।
সোহেলের দাবি, ঘটনার পর পরই বিষয়টি পল্লবী থানা পুলিশকে জানানো হয়। পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে যায়। তারা সার্বিক বিষয় জেনে আসে। এরপর জলিল থানায় উল্টো তাসলিমাদের নামে মামলা করতে যায়। কিন্তু পুলিশ জলিলের মামলা নেয়নি। জলিলকে কড়া ভাষায় গালিগালাজ করে। অবস্থা বেগতিক দেখে জলিল থানা থেকে সটকে পড়ে। এ ব্যাপারে তিনি মামলা দায়ের করবেন।
পল্লবী থানার ওসি দাদন ফকির জনকণ্ঠকে বলেন, বিষয়টির খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। অভিযোগ দায়েরের পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।