স্নিগ্ধ ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে সবে। কিছুদিন আগেও এই আলো ছিল তীব্র, এখন তা বেশ মিষ্টি। কুয়াশার চাদর সরিয়ে আলো ছড়াতে শুরু করে পথ-ঘাট-খেত সব স্থানে। শিশিরে সিক্ত সকালের এই রূপ স্নিগ্ধ সুন্দর। বাতাসেও হিমেল আমেজ। পাখির কলকাকলিতে মুখরিত ভোর। এমন আবহ বলে দেয় আমাদের, হেমন্ত এসেছে।
শরতের পর কার্তিক-অগ্রহায়ণ মিলে হেমন্ত। নতুন ঋতুর আগমনে রূপ বদলায় প্রকৃতি। প্রকৃতির ম্লান, ধূসর ও অস্পষ্টতার অনুভূতি হানা দেয় চেতনলোকে। হেমন্তকে বলা হয় শীতের বাহন। প্রকৃতিতে অনুভূত হচ্ছে শীতের আমেজ। তাইতো কবি সুফিয়া কামাল তার ‘হেমন্ত’ কবিতায় লিখেছেন, ‘সকাল বেলায় শিশির ভেজা/ ঘাসের ওপর চলতে গিয়ে/ হাল্কা মধুর শীতের ছোঁয়ায়/ শরীর ওঠে শিরশিরিয়ে।’
হেমন্ত মানেই তো চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে নবান্নের মৌ মৌ ঘ্রাণ। মাঠে মাঠে, রাশি রাশি সোনালি ফসল কাটার গান। চারদিকে কৃষকদের ফসল নিয়ে কর্মব্যস্ততা। ঘরে ঘরে নবান্ন উৎসব। নতুন চালের পিঠাপুলিতে চারদিক মুখরিত করে তোলে। আত্মীয়-স্বজনকে পিঠাপুলির নিমন্ত্রণ যেন এক বৈচিত্রময় উৎসব। কবি জীবনানন্দের ভাষায় কার্তিক নবান্নের। তিনি লেখেন, ‘আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে এই বাংলায়/ হয়তো মানুষ নয় হয়তো বা শঙ্খচিল-শালিকের বেশে/ হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে/ কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব কাঁঠাল ছায়ায়।’
হেমন্ত গতকাল আসার কথা ছিল, কিন্তু বাংলা বর্ষপঞ্জি সংস্কারের কারণে একদিন পিছিয়ে এসেছে। ভাষা দিবস, স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসের বাংলা ও ইংরেজি তারিখের সাযুজ্য রাখতে বাংলা বর্ষপঞ্জি সংস্কার করেছে বাংলা একাডেমি, যার ফলে এ বছর আশ্বিন মাস এসেছে ৩১ দিন নিয়ে। ফলে বাংলা বর্ষপঞ্জির কার্তিক মাস এবার শুরু হল বৃহস্পতিবার থেকে।
বাংলা সাহিত্যে হেমন্ত স্বল্প স্থায়িত্ব হলেও একেবারে তার প্রভাব দুর্লক্ষ্য নয়। অসংখ্য কবি সাহিত্যিক তাদের সুনিপুণ হাতের জাদু স্পর্শে শৈল্পিক সৌকর্যে হেমন্ত অনবদ্য বাণীমূর্তি রূপে উদ্ভাসিত হয়েছে। সাহিত্যের প্রাচীন যুগে বৌদ্ধ সহজিয়াগণ রচিত চর্যাপদে কোনো ঋতুরই উপস্থিতি নেই। তবে মধ্যযুগের কবি কংকন মুকুন্দরাম চক্রবর্ত রচিত ‘কালকেতু’ উপাখ্যানে হেমন্তের সামান্য নমুনা পরিদৃষ্ট হয়। কবির ভাষায়- ‘কার্তিক মাসেতে হয় হিমের প্রকাশ/ যগজনে করে শীত নিবারণ বাস।’
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, রাজধানীর বিভিন্নস্থানে বাতাসে এখন থেকেই হিম হিম অনুভূতি হচ্ছে। গ্রামে পড়ছে শিশির। কুয়াশার দেখাও মিলছে কোথাও কোথাও। তবে আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, বর্ষা আনুষ্ঠানিক বিদায় নিলেও বৃষ্টিপাত থাকবে আরো কিছু দিন।