বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৯/০৮/২০২৪ ৩:১৮ পিএম

৮ আগস্ট-২০২৪ ইংরেজি (বৃহস্পতিবার) রাত সাড়ে ন’টায় বাংলাদেশে নবীন প্রবীণের সমন্বয়ে সতের সদস্য বিশিষ্ট অন্তর্বর্তীকালীন একটি সরকার গঠিত হলো।সরকার প্রধানের (প্রধান উপদেষ্টা) দায়িত্ব নিলেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড.মুহাম্মদ ইউনূস।সাথে রয়েছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই প্রতিনিধিসহ আরো ষোল উপদেষ্টামন্ডলী।অর্থনীতিবিদ,আইনজ্ঞ,মানবাধিকার কর্মী,বীর মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষাবিদ,কূটনীতিবিদ,নিরাপত্তা বিশ্লেষকসহ বিভিন্ন পেশার সুশীল সমাজের প্রতিনিধিবৃন্ধ।
আমার কাছে এক কথায় এটি
“ছাত্রদের অংশগ্রহণে,ছাত্রদের দ্বারা ছাত্রদের জন্যই একটি অন্তর্বতীকালীন সরকার”।এখানে ছাত্র বলতে দেশের সকল নাগরিকদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।নতুন সরকারের প্রতিটি সদস্য দেশ ও বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্ব যারা দেশের সার্বিক উন্নয়নে যথোপযুক্ত অবদান রাখতে সক্ষম হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।দেশের চলমান সংকটময় মুহূর্তে তারা যেভাবে জাতির কল্যাণে এগিয়ে এসেছেন এটি নি:সন্দেহে প্রশংসার দাবী রাখে।এবারের সরকারে চমক হিসাবে রয়েছে দুইজন ছাত্র প্রতিনিধি যাদের নেতৃত্বে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পতন ঘটানো হয়েছে। আশা করি তাদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে তরুন যুব সমাজের চাওয়া পাওয়া প্রতিফলিত হবে। সরকার অবশ্যই ছাত্র-জনতার আশা আকাঙ্খাপূরনে সক্ষম হবেন।
নূতন সরকারের কাছে আমাদের কিছু প্রত্যাশা:
১.ঘুষ-দূর্নীতিমুক্ত একটি সাম্যবাদী অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ যেখানে প্রশাসনের প্রতিটি স্তরে আইনের শাসন নিশ্চিত করা যেখানে অন্যায় কোন হস্তক্ষেপ (উপরের চাপ) থাকবে না।
২.সকল মানুষের ভিন্নমত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।
৩.সরকারের প্রতিটি বিভাগে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা;দেশের মালিক হিসাবে জনগণের কাছে সরকারের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা হবে।প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদেরও জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসা।
৪.বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী’র হারানো গৌরব ও ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার জন্য চলমান সংস্কার কার্যক্রম অব্যাহত রেখে এই বাহিনীর ভিতর-বাহির সংস্করণ দ্রুত নিশ্চিত করে তাদেরকে জনবান্ধন করে গড়ে তোলা।প্রয়োজনে তাদের পোষাকও পরিবর্তন করা যেতে পারে।
৫.বিচারক বিভাগের পরিপূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।সরকার পতনের পূর্বে ও পরে সংঘটিত হত্যাকান্ডসহ ফৌজদারি সকল অপরাধের বিচার নিশ্চিত করা।
৬.ব্যাংক বিমাসহ সকল আর্থিক প্রতিষ্টানে সুশাসন নিশ্চিত করা।শেয়ারবাজার পুনরুদ্ধারে আশু ব্যবস্থা গ্রহন করা।বিদেশে পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরত আনার জন্য কার্যকর উদ্যোগ গ্রহন করা।কোন মেগা প্রজেক্ট হাতে নেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট সকল ষ্টেকহোল্ডাদের সাথে কার্যকর উপায়ে মতামত গ্রহন করা।পরিবেশ প্রতিবেশগত ভাবে ঝুঁকিপূর্ণ কোন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহন না করা।
৭.বিদ্যমান সকল আইনের ত্রুটিপূর্ণ ধারাসমূহ সংশোধন করা প্রয়োজনে নূতন আইন প্রনয়ন কিংবা ত্রুটিপূর্ণ বিদ্যমান আইন সম্পূর্ণরুপে বাতিল করা যাতে জনকল্যাণ, মানবাধিকার ও সুশাসন নিশ্চিত করা যায়।
৮.উন্নত বিশ্বের সাথে মিল রেখে শিক্ষা ব্যবস্থা পরিপূর্ণরুপে ঢেলে সাজানো।বিতর্কিত শিক্ষা কারিকুলাম অতিদ্রুত সংশোধন করে যুগোপযোগী অবৈতিনিক ও স্বল্পব্যয়ী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রনয়ন করা।প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ পরীক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় প্রক্রিয়া স্বচ্ছতার সহিত করা,অনিয়মকারীদের জিরো টলারেন্স এর আওতায় নিয়ে আসা।
৯.সবার জন্য সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা,স্বাস্থ্য বিভাগের সকল শূণ্য পদে দ্রুত জনবল নিয়োগ করা এবং উনাদের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।যত্রতত্র প্রাইভেট হাসপাতাল অনুমোদন না দিয়ে সরকারি হাসপাতালের গুণগত মান নিশ্চিত করে সরকারি স্বাস্থ্যসেবার প্রতি গণ আস্থা ফিরিয়ে আনা।
১০.সরকারী ব্যবস্থাপনায় দেশের সকল বিভাগীয় ও জেলা শহরে জনসংখ্যা অনুপাতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিশুপার্ক ও বিনোদন কেন্দ্রের ব্যবস্থা করা। দেশের সকল শিশুপার্কে শিশুদের বিনামূল্যে প্রবেশের ব্যবস্থা করা।
১১.নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম সাধারণ জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসা।সকল সিন্ডিকেট ব্যবসা বন্ধ করা এবং পণ্য পরিবহনে বিভিন্ন পয়েন্টে চাঁদাবাজী বন্ধ করা।
১২.সর্বোপরি সকল রাজনৈতিক দলের অংশ গ্রহনে একটি গ্রহনযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে দায়িত্বভার অর্পন করা।

এই সরকার গঠনের মাধ্যমে চলমান সংকট শীঘ্রই কেটে যাবে,চলমান অস্থিতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হবে।সরকারি বেসরকারি সকল উন্নয়ন অংশীজনদের সহযোগিতায় একটি বৈষম্যশূণ্য সুখী বাংলাদেশ প্রত্যাশা করছি।

লেখক:
জিয়াউর রহমান মুকুল,
উপ-পরিচালক (স্বাস্থ্য ও পুষ্টি)
শেড,কক্সবাজার।
ইমেইল:[email protected]

পাঠকের মতামত

নতুন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানোই যখন বড় চ্যালেঞ্জ!

মিয়ানমারের তিনটি প্রধান এথনিক রেজিস্ট্যান্ট গ্রুপ—তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ), মিয়ানমার ন্যাশনাল এলায়েন্স (এমএমডিএ) এবং ...