মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা::
কিয়ামত হবে এ কথা সত্য। কিন্তু কিয়ামত কবে হবে—এ ব্যাপারে একমাত্র মহান আল্লাহই জানেন। তবে মহানবী (সা.) কিয়ামতের কিছু নিদর্শন বাতলে গেছেন, যেগুলো প্রকাশ হতে শুরু করলে বোঝা যাবে, কিয়ামত ঘনিয়ে আসছে। হাদিসে জিবরাঈল নামে একটি বিখ্যাত হাদিস আছে, যেখানে জিবরাঈল (আ.) সাহাবায়ে কেরামকে দ্বিনের বিভিন্ন বিষয়ে ধারণা দিতে মানুষের বেশে এসে মহানবী (সা.)-কে কিছু প্রশ্ন করেন, একজন মুমিনের যেসব বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা ও বিশ্বাস রাখা উচিত, মূলত সেই বিষয়গুলো শিক্ষা দেওয়াই ছিল এ সাক্ষাৎকারের উদ্দেশ্য।
সে হাদিসে জিবরাঈল (আ.) মহানবী (সা.)-কে প্রশ্ন করেন, ‘কিয়ামত কখন হবে?’ তিনি বলেন, ‘যার কাছে প্রশ্ন করা হচ্ছে তিনি প্রশ্নকারী থেকে অধিক জ্ঞাত নন। ’ সে ব্যক্তি (জিবরাঈল) বলল, ‘কিয়ামতের নিদর্শনসমূহ বর্ণনা করুন। ’ তিনি বলেন, ‘দাসী তার মুনিবকে প্রসব করবে, নগ্ন পদ, বিবস্ত্র, গরিব, বকরির রাখালরা বড় বড় প্রাসাদ নির্মাণে প্রতিযোগিতা করবে। ’ (নাসায়ি, হাদিস : ৪৯৯০)
উল্লিখিত হাদিসের একটি চৌম্বকীয় এই অংশে কিয়ামতের অন্যতম নিদর্শনসমূহ বর্ণনা করা হয়েছে। মহানবী (সা.)-এর ভাষ্যমতে, কিয়ামতের নিদর্শন হলো, ‘দাসী তার মুনিবকে প্রসব করবে, নগ্ন পদ, বিবস্ত্র, গরিব, বকরির রাখালরা বড় বড় প্রাসাদ নির্মাণে প্রতিযোগিতা করবে। ’
অন্যান্য হাদিসে মহানবী (সা.) কিয়ামতের আরো নিদর্শন বলেছেন। আজকে আমাদের আলোচ্য বিষয়, ‘নগ্ন পদ, বিবস্ত্র, গরিব, বকরির রাখালরা বড় বড় প্রাসাদ নির্মাণে প্রতিযোগিতা করবে। ’
হাদিসের শব্দগুলো দ্বারা বোঝা যায়, এখানে তৎকালীন আরব উপদ্বীপের মানুষের প্রাচুর্যের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। কিয়ামতের আগে মহান আল্লাহ তাদের অঢেল সম্পত্তি দান করবেন, ফলে তারা বড় বড় প্রাসাদ তৈরির প্রতিযোগিতায় নামবে।
বর্তমান যুগে তার ধারাবাহিকতা শুরু হয়ে গেছে। বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবনটি রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইতে (যা আরব উপদ্বীপের অংশ)। ‘বুরজ আল খলিফা’ নামের ভবনটির উচ্চতা দুই হাজার ৭১৭ ফুট। তবে এই রেকর্ড ভেঙে দিতে দুবাইতেই তৈরি হচ্ছে আরো বেশি উচ্চতার ভবন। ২০১৬ সালের অক্টোবরে নির্মাণকাজ শুরু হয় ‘ক্রিক হারবার টাওয়ার’-এর। এর উচ্চতা হবে তিন হাজার ৪৫ ফুট। এটিকে ঘিরে গড়ে তোলা হবে ‘ক্রিক হারবার সিটি’। যেখানে সব ভবনই হবে সুউচ্চ। এই শহরে আবাসন হবে প্রায় চার লাখ ৭০ হাজার মানুষের। ক্রিক হারবার সিটির মধ্যমণি হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে টাওয়ারটি। ধারণা করা হয়েছিল, বুর্জ আল খলিফার পর এটিই হবে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবন। কিন্তু আরব উপদ্বীপেরই মূল কেন্দ্র সৌদি আরবের নির্মাণাধীন জেদ্দা টাওয়ার সে রেকর্ড ভেঙে দেবে। মরুভূমির বুকে গড়ে উঠছে আগামী বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু স্থাপনা। সৌদি আরবের জেদ্দা নগরীর লোহিত সাগরের তীরে দারুণ এই স্থাপনাটির নির্মাণকাজ চলছে। আকাশচুম্বী এই স্থাপনাটি উচ্চতায় তিন হাজার ২৮০ ফুট বা এক হাজার মিটার, যা কিলোমিটারের হিসাবে বরাবর ১ কিলোমিটার।
২.৬ মিলিয়ন বর্গফুট বা দুই লাখ ৪৩ হাজার ৮৬৬ বর্গমিটার আয়তনের বিশাল এই স্থাপনাটি ২৫২ তলাবিশিষ্ট হবে। ভূমি থেকে দুই হাজার ১৭৪ ফুট ওপরের পৃথিবীর সবচেয়ে উচ্চতম পর্যবেক্ষণকেন্দ্র থাকবে এই টাওয়ারে।
অন্যান্য সুবিধার মধ্যে থাকবে একটি পাঁচ তারকা হোটেল, ৯৭টি এপার্টমেন্ট ও সাতটি ডুপ্লেক্স। জেদ্দা টাওয়ারের সাতটি তলার ৩২৫টি রুমে অফিসগুলো থাকবে।
এই টাওয়ারের লিফটগুলো রেকর্ড পরিমাণ উচ্চতা দুই হাজার ১৬৫ ফুট বা ৬৬০ মিটার উচ্চতায় আসা-যাওয়া করবে। লিফটগুলো প্রথমতলা থেকে ঘণ্টায় সাড়ে ১২ মাইল বেগে ওঠা-নামা করবে। লিফটগুলো অতিথিদের ১৫৭ বা ১৫৮ তলায় সাড়ে ৬৬ সেকেন্ডের মধ্যে পৌঁছে দেবে। বিশ্বের অনাগত সর্ববৃহৎ এই স্থাপনার নির্মাণকাজ ২০২০ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে তা সম্ভব হয়নি। তবে নির্মাণকাজ শেষ হলে এটিই হবে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু স্থাপনা।
সুবহানাল্লাহ! মহানবী (সা.)-এর ভবিষ্যদ্বাণীগুলো অক্ষরে অক্ষরে মিলে যাচ্ছে। বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু প্রাসাদ আরব উপদ্বীপে, তাকে টেক্কা দিতে যে দুটি নতুন ভবন নির্মিত হচ্ছে, সেগুলোও আরব উপদ্বীপে। ভবিষ্যতে হয়তো এই প্রতিযোগিতা আরো বাড়তে থাকবে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি দেখে বোঝা যাচ্ছে, মহানবী (সা.)-এর ভবিষ্যদ্বাণী অনুুযায়ী আরবদের বড় বড় প্রাসাদ তৈরির প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে।
পাঠকের মতামত