নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শফিউল্লাহর বিরুদ্ধে পরিবেশ আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা সদরে নিজ পিতার নামে তৌজিভুক্ত পাহাড় কেটে ভবন নির্মাণ ও পাহাড় কাটা মাটি দিয়ে সরকারি পুকুর ভরাট করেছেন তিনি।
গত জুলাইয়ে এক তদন্তে পাহাড় কেটে ভবন নির্মাণ ও মাটি দিয়ে পুকুর ভরাটের সত্যতা পেয়ে তাকে চিঠি দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর। কিন্তু চিঠির নির্দেশনা উপেক্ষা করে ধার্য তারিখে তিনি চট্টগ্রাম পরিবেশ আদালতে হাজির হননি বলে নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয়রা জানায়, বিভিন্ন সভা-সেমিনারে সুশীল সমাজসহ অংশগ্রহণকারীদের মাঝে অবৈধভাবে পাহাড় না কাটতে ও প্রাকৃতিক পরিবেশ সুরক্ষা বিষয়ে সচেতনতামূলক বক্তব্য দিয়ে থাকেন উপজেলা চেয়ারম্যান মো. শফিউল্লাহ। কিন্তু গত বছর বর্ষা মৌসুমের আগে থেকে নিজ পিতার নামে তৌজিভুক্ত পাহাড় কাটতে শুরু করেন তিনি।
নাইক্ষ্যংছড়ি থানার পশ্চিমে ১৫০ গজের মধ্যে পাহাড়টির অবস্থান। পাহাড়টি শফিউল্লাহর পিতা ছালে আহাম্মদের নামে রেকর্ডভুক্ত। পাহাড় কেটে করা মাঠে নির্মিত দুটি ভবনের দ্বিতল পর্যন্ত ছাদ ঢালাই করা হয়েছে। পাহাড়টির পাদদেশে ও নাইক্ষ্যংছড়ির প্রধান সড়ক ঘেঁষে আশির দশকে খনন করা ৪০ শতাংশ পরিমাণ একটি সরকারি পুকুর রয়েছে। আগে গোসল করার সময় পুকুরের গভীরতা মানুষের উচ্চতার বেশি ছিল। গত বছর থেকে রাতের অন্ধকারে পাহাড় কাটা মাটি ফেলায় পুকুরটির তলদেশ ভরে গিয়েছে। বর্তমানে উপর থেকে ভরাটের এক-তৃতীয়াংশ পরিমাণ দেখা যায়। তবে যেটুকু অবশিষ্ট আছে তাতে কোমর সমানও পানি নেই।
স্থানীয় সূত্র জানায়, গত বছর থেকে রাতের বেলায় এক্সক্যাভেটর দিয়ে অল্প অল্প করে পাহাড় কাটছেন তিনি। তবে দিনের বেলায় পাহাড় কাটার অংশ কালো পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা হয়। পাহাড় কাটার মাটি ফেলা হচ্ছে সরকারি পুকুরটিতে।
সম্প্রতি সরজমিনে দেখা গিয়েছে, নাইক্ষ্যংছড়ি থানার পশ্চিমে আনুমানিক ১৫০ গজের মধ্যে একটি পাহাড় কেটে ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। পাহাড়টির দক্ষিণ দিকের পাদদেশে একটি পুকুরের এক-তৃতীয়াংশ ভরাট হয়ে গিয়েছে। পুকুরের চারপাশে কাটা তারের বেড়া দেয়া রয়েছে। এ সময় জানতে চাইলে মোহাম্মদ উল্লাহ নামের এক ব্যক্তি নিজেকে উপজেলা চেয়ারম্যান শফিউল্লাহর ভাই বলে পরিচয় দিয়ে বণিক বার্তাকে বলেন, পাহাড়টি আমাদের বাবার নামে রেকর্ডভুক্ত। পাহাড় কাটা হচ্ছে না, কিছুটা সমান করা হচ্ছে বলে দাবি তার। এ সময় পুকুরটিও তাদের বলে দাবি করেন তিনি।
সম্প্রতি সেলফোনে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যস্ত আছি জানিয়ে ১ ঘণ্টা পর কল করতে বলেন নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শফিউল্লাহ। এরপর সন্ধ্যায় সেলফোনে সংশ্লিষ্ট প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন ব্যস্ত আছি, ফ্রি হয়ে কল দেব। গতকাল দুপুরে এসব বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পুনরায় কল করা হলে শফিউল্লাহর ব্যবহূত সেলফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে সেলফোনে একাধিকবার কল করা হলেও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা ফেরদৌসের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
পাহাড় কেটে ভবন নির্মাণ ও পুকুর ভরাটের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পরিবেশ অধিদপ্তর বান্দরবানের সিনিয়র কেমিস্ট মো. আব্দুছ ছালাম। গতকাল তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, তদন্তে সত্যতা মিলেছে পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন মোহাম্মদ শফিউল্লাহ। দীর্ঘ সময়ে পুকুরটির ১ হাজার ৫০০ বর্গফুট ভরাট হয়ে গিয়েছে, যা পুকুরটির মোট আয়তনের এক-তৃতীয়াংশ। এ পরিপ্রেক্ষিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর প্রতিবেদন দেয়া হয়। গত জুলাইয়ে আইন অনুযায়ী মো. শফিউল্লাহকে চিঠি দেন পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম পরিবেশ আদালত। কিন্তু আইন অমান্য করে ধার্য তারিখে মো. শফিউল্লাহ আদালতে হাজির হননি। শিগগির আবারো তাকে চিঠি দেয়া হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তর বান্দরবানের সহকারী পরিচালক মো. ফখর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, মো. শফিউল্লাহর বিষয়ে আইন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। সুত্র: বণিকবার্তা