শামীম ইকবাল চৌধুরী::
আগামী ৩১ অক্টোবর বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচনী মাঠে জমেছে নৌকা-ধানের শীষের লড়াই। প্রচার চলছে জমজমাট। নির্বাচনী উৎসব বিরাজ করছে সর্বত্র। দলীয় প্রতীকের হওয়ায় তা অনেকটা জাতীয় নির্বাচনে রূপ নিয়েছে।
এই নির্বাচনে শুধুমাত্র দুজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরা হলেন-উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক তসলিম ইকবাল চৌধুরী (নৌকা) ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি নুরুল আলম কোম্পানি (ধানের শীষ)। তন্মধ্যে গত ইউপি নির্বাচনে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আলহাজ্ব মোঃ আবু সৈয়দের কাছে হেরেছিলেন নুরুল আলম কোম্পানি। ওই নির্বাচনে জয়লাভকারী চেয়ারম্যানের পক্ষে নায়কের ভূমিকায় ছিলেন তসলিম ইকবাল চৌধুরী। কিন্তু চলতি বছরের ২১ ফেব্রুয়ারী নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করায় চেয়ারম্যান পদটি শুণ্য হয়। তাই এ নির্বাচন আওয়ামী লীগের মর্যাদার লড়াই আর বিএনপির জন্য মরণ কামড়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, চায়ের আড্ডা থেকে রাজপথ, সর্বত্র চলছে নির্বাচনী আলাপ-আলোচনা। চুলচেরা নিশ্লেষণ হচ্ছে নির্বাচনের ফল নিয়ে। বিজয় উৎসব করবে কারা-আওয়ামী লীগ নাকি বিএনপি? তবে জয়ের স্বপ্ন নিয়ে নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন দুই দলের প্রার্থীই। এদিকে বিজয় ছিনিয়ে আনতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিনেতাদের পাশাপাশি সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও দিন-রাত একাকার করে ভোট প্রার্থনায় মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। আর অন্যদিকে উন্নয়নের আশ্বাস আর স্বপ্নজাগানিয়া কথার ফুলঝুরি নিয়ে ভোটারদের মুখোমুখি হচ্ছেন দুই প্রার্থী।
উপজেলা আওয়ামী লীগের ধারনা, এলাকার প্রতিটি ঘরে পরিচিত তসলিম ইকবাল চৌধুরী যদি এবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়, সরকারী দলের প্রার্থী হিসেবে সদর ইউনিয়নে ব্যাপক উন্নয়ন হবে। কারণ তিনি বিচক্ষণ ও কৌশলী মানুষ। সব সময় সাধারণ মানুষের পক্ষে নিবেদিত প্রাণ হয়ে কাজ করেন। রাজনৈতিক দিক থেকেও তার যথেষ্ট পরিচিতি রয়েছে। এছাড়াও ছাত্র রাজনীতি থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত মানুষের সেবায় নিয়োজিত থাকা এ নেতার কাজে-কর্মে কতটুকু সন্তুষ্ট জনগণ, তার পরীক্ষাও হবে এই নির্বাচনে।
অপরদিকে একজন সাধারণ ভোটার জানান, গত নির্বাচনে বিএনপিকে ভালবেসে নুরুল আলম কোম্পানীকে সমর্থক জানিয়ে ভোট প্রদান করেছিলাম। তিনি অল্প ভোটে হেরে যাওয়ায় এলাকা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। সে বারে বারে সমর্থকদেরকে বলে ছিল আমি আর প্রার্থী হব না। আমার সাথে দলে বেঈমানী করেছে। তাতে আমরা যারা সাধারণ ভোটার সিদ্ধান্ত নিয়েছি দলমত নির্বিশেষে এলাকায় উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে সরকারের টিকেটে নৌকার প্রতীকে সমর্থন দিয়ে কাজ করে যাব। তিনি আরও জানান, মূলত ধানের শীর্ষ প্রার্থী বহিরাগত। ব্যবসায়ীক কাজে এইখানে ভোটার হয়েছে। তিনি মাঝে মধ্যে দিনের বেলায় আসেন, রাত যাপন করে থাকেন কক্সবাজারে। প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থী এই এলাকারই সন্তান। অতীতে নৌকা প্রর্তীক প্রার্থী দলমত নির্বিশেষে বিপদে আপদে সাধারণ মানুষের পাশে এসে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন বলে জানান।
আর এদিকে, বিএনপি মনে করছেন, ধনাঢ্য ও সদা হাসিখুশি সাদা মনের মানুষ হিসেবে এলাকাবাসীর কাছে পরিচিত প্রার্থী নুরুল আলম কোম্পানী। গত ইউপি নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের তিন প্রার্থীসহ অন্যান্য প্রার্থীদের সাথে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে তিনি মাত্র ১০৭ ভোটে হেরেছিলেন। এবার বিএনপি-জামায়াতের বিদ্রোহী কোন প্রার্থী না থাকায় শতভাগ বিজয়ের স্বপ্ন দেখছেন তিনি।
উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো: কামাল উদ্দিন জানান, উভয় প্রার্থীর মধ্যে এখনো সোর্হাদ্যপূর্ণ পরিবেশ বজায় রয়েছে। আমরা তা ভোট গণণা পর্যন্ত অটুট দেখতে চায়। উপজেলা নির্বাচন ও রিটার্ণিং কর্মকর্তা অরুণ উদয় ত্রিপুরা বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য প্রশাসন সব ধরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
প্রসঙ্গত:, নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় মোট ভোটার রয়েছে ৯ হাজার ১২৬জন। তার মধ্যে পুরুষ ৪ হাজার ৭৯০ ও মহিলা ভোটার ৪ হাজার ৩৭২জন।
পাঠকের মতামত