শামীম ইকবাল চৌধুরী, নাইক্ষ্যংছড়ি::
নাইক্ষ্যংছড়িতে স্ত্রীকে হত্যার পর লাশ গুম করে রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে। দীর্ঘদিন ঘটনাটি ধামাচাপা দিয়ে রাখা হলেও সম্প্রতি আদালতে মামলা দায়ের করার পর বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে। ১৮ আগষ্ট মেয়ের বাবা বাদী হয়ে বান্দরবান নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইবুন্যালে এ মামলা করেন। এ ঘটনায় এলাকায় নতুন করে চলছে নানা গুঞ্জন। অভিযুক্ত পক্ষ ঘটনাটি সমঝোতা করার প্রস্তাবে ব্যার্থ হয়ে বর্তমানে মামলা তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ তোলেছেন আমিনার পরিবার।
সরেজমিনে তথ্যনুসন্ধানে জানা গেছে, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী আশারতলী জারুলিয়াছড়ি গ্রামের আমির হোসেনের মেয়ে আমিনা খাতুন ও একই এলাকার আবুল হাশেমের ছেলে আরিফ উল্লাহর প্রেমের সম্পর্কের জের ধরে চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারী গোপনে বিয়ে করেন। কিন্তু এ বিয়ে মেনে নেয়নি ছেলের পরিবার। বিয়ের পর থেকে তারা দুই জন চট্টগ্রাম শহরে ভাড়া বাসায় থাকত। সংসার চালাতে মাঝে মধ্যে যৌতুকের টাকার জন্য আমিনা খাতুনকে তার পিতার বাড়িতে পাঠাতো স্বামী আরিফ উল্লাহ। কিন্ত পরিবারের পক্ষ থেকে বার বার যৌতুকের টাকা দিতে না পারায় মধ্যখানে এক মাস পিতার বাড়িতেই অবস্থান করে আমিনা। এরই মধ্যে চার মাসের অন্তস্বত্তা হয়ে পড়েছিল আমিনা। পরে অবস্থা বুঝতে পেরে গত ৬ জুন আমিনাকে তার পিতার বাড়ি থেকে নিয়ে যায় স্বামী আরিফ উল্লাহ। এর পর থেকে আমিনার পরিবারের সাথে আরিফ উল্লাহ মোবাইল ফোনসহ সবধরনের যোগযোগ বন্ধ রাখে।
সর্বশেষ গত ১১ জুলাই স্থানীয় হামিদা বেগম, নুর আংকিস নামে দুই নারী বাড়ির পাশর্^বর্তী পাহাড়ী ঝিরিতে বোরকা, ব্যাগ, কাপড় চোপড় দেখতে পেয়ে স্থানীয়দের খবর দেয়। আমিনার পরিবার তার মেয়ের ব্যবহৃত জিনিসপত্রের পরিচয় নিশ্চিত হয়ে গত ২৯ জুলাই নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় গেলে পুলিশ তদন্তের স্বার্থে উদ্ধারকৃত আলামত থানায় রেখে দেয় এবং বিষয়টি তদন্ত করবে বলে আমিনার বাবাকে আশ^াস দেন। কিন্তু এর পর পুলিশ নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করে আসলে আমিনার বাবা আমির হোসেন বাদী হয়ে গত ১৮ আগস্ট বান্দরবান নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইবুন্যালে সংশ্লিষ্ট আইনের ২০০০ এর ১১ (ক)/৩০ প্যানেল কোড ৩৬৪ ধারায় মামলা রুজু করেন।
এদিকে নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় লিপিবদ্ধ জিডি’র তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মনির এ প্রতিবেদককে জানান- আমিনার বাবার আবেদনের প্রেক্ষিতে একটি জিডি লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। ওই ঘটনায় ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করে কর্তৃপক্ষের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। তবে এটি হত্যা নাকি অপহরণ সে বিষয়ে বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি।
আমিনা খাতুনের বাবা আমির হোসেন সাংবাদিকদের জানান- ‘আমার মেয়ের বিবাহ সম্মন্ধ মেনে না নিয়ে স্বামীর সহায়তায় শশুড় আবুল হাসেম ও শাশুড়ি আজু মেহেরসহ অন্যান্য লোকজন আমার মেয়েকে হত্যা করে লাশ গুম করেছে’। মামলা রুজুর পর বিষয়টি সমঝোতা করতে স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী লোক প্রস্তাব দেয়। কিন্তু তিনি প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় বর্তমানে তাঁকে হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাইক্ষ্যংছড়ি ৭নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য আলী হোসেন জানান- আমিনা খাতুন ও আরিফ উল্লাহ গোপনে বিয়ে করেছিল। কিন্তু ছেলে পরিবার তাদের মেনে নেয়নি। সম্প্রতি আমিনা খাতুন নিখোজ রয়েছে বলে শুনা যাচ্ছে। পরে মেয়ের বাবা থানায় একটি জিডিও করেছেন। তবে আমিনাকে হত্যা করা হয়েছে কিনা তা পুলিশ তদন্তে জানা যাবে বলে তিনি জানান।
অপরদিকে এ বিষয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তৌহিদ কবির জানান- বিজ্ঞ আদালতের একটি মামলার কপি পেয়েছি। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত চলছে।