বান্দরবান প্রতিনিধি::
বান্দরবান নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নে এক বৌদ্ধ ভিক্ষুকে গলা কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। বৌদ্ধ ভিক্ষুকে হত্যা করা হলেও বিহারের কোনো মূর্তি বা জিনিস চুরি হয়নি। এই হত্যাকান্ডের পেছনে কোনো জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। গত শুক্রবার রাতে কোনো এক সময়ে তাকে গলা কেটে হত্যা করা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে। এই ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। গতকাল শনিবার সকালে তার লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। কারা কেন তাকে হত্যা করেছে এই ব্যাপারে কোনো কিছু জানাতে পারেনি পুলিশ।
বাইশারী ইউনিয়নের উপর চাক পাড়ার কার্বারী (পাড়া প্রধান) অংথোয়াই চাক বলেন, আসল নাম মংসুইউ চাক (৭৫)। বৌদ্ধ ভিক্ষু নাম (বৌদ্ধ ভিক্ষু হিসেবে দীক্ষিত হওয়ার পর নাম) উ ধাম্মা ওয়াইশা। তিনি কারো সঙ্গে খারাপ আচরণ করতেন না। জমি জমা নিয়েও কারো সঙ্গে কোনো শত্রুতা ছিলা না। পারিবারিকভাবেও কোনো ঝামেলা নেই। বলতে গেলে সাদাসিদে জীবন যাপন করতেন। কারো সঙ্গে তার কোনো শত্রুতা আছে কল্পনা করা যায় না।
তিনি বলেন, বাইশারী ইউনিয়নের উপর চাক পাড়া থেকে বৌদ্ধ বিহারটির প্রায় ৩০০ গজ দূরে। উপর চাক পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে। গতকাল শনিবার ভোর পাঁচটার দিকে তার বড় ছেলের বউ শ্বশুরকে সোয়াইন (সকালের খাবার) দিতে বিহারে যান। বিহারে তিনি একাই থাকতেন। বিহারে ভিতরে গিয়ে তার শ্বশুরের গলা কাটা লাশ দেখতে পান। বিষয়টি জানানোর পর পাড়ার লোকজন সেখানে দেখতে যান। বৌদ্ধ বিহারের ভিতরে মেঝেতে গলা কাটা লাশ দেখতে পাওয়া যায়। বিহারের কোনো মূর্তি কিংবা জিনিসও চুরি বা খোয়া যায়নি। এরপর পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। এই হত্যাকান্ডের পেছনে কারা জড়িত থাকতে পারে স্থানীয় লোকজনও কল্পনা করতে পারছেন না। ভেবে কূল পাচ্ছেনা নিরীহ এই লোককে কারা হত্যা করতে পারে। যে ব্যাক্তির সঙ্গে কারোর কোনো শত্রুতা নেই তাকে এমন নির্মমভাবে গলা কেটে হত্যা করতে পারে এলাকার লোকজন বিশ্বাস করতে পারছেন না। এই হত্যা কান্ডের সঙ্গে বড় কোনো যোগ থাকতে পারে এলাকার লোকজনও এমন ধারণা করছেন। বৌদ্ধ ভিক্ষুকে গলা কেটে হত্যার পেছনে জঙ্গি গোষ্ঠির কোনো সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। জঙ্গি গোষ্ঠির সংশ্লিষ্টতার থাকার বিষয়টি পুলিশ উড়িয়ে দিচ্ছে না। পুলিশ ধারণা করছে, জমি জমা নিয়ে শত্রুতা না থাকলে এর পেছনে বড় ধরণের কোনো গোষ্ঠির সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বাইশারী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ উপ-পুলিশ পরিদর্শক আনিসুর রহমান জানান, বৌদ্ধ ভিক্ষুর গলাকাটা লাশ উপর চাক পাড়া বৌদ্ধ বিহার থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। কারা এ হত্যাকান্ডের পেছনে জড়িত রয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এই ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। শুক্রবার রাতে কোনো এক সময়ে এই হত্যাকান্ড হতে পারে। এদিকে এ ঘটনার সংবাদ পেয়ে জেলা সদরে সরকারি কাজে ব্যস্ত থাকা অবস্থাতেই বেলা ২টায় বাইশারীতে দ্রুত পৌঁছেন পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি। তিনি সেখানে বৌদ্ধ বিহারে নৃশংসভাবে সংঘটিত ভিক্ষু হত্যার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। জেলা সদর থেকে সেখানে সকালে যাওয়া জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক এবং পুলিশ সুপার মো.মিজানুর রহমান,নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের কর্মকর্তা এবং স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলেন। প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রাখার তাগিদ দিয়ে সম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যাতে বজায় থাকে এবং সার্বিক আইনশৃংখলার বিঘœ সৃষ্টি না হয় সেদিকে কঠোর অবস্থানে থকাার জন্য প্রশাসনকে নির্দেশ প্রদান করেন। এ সময সেখানে বিজিবির স্থানীয় কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। জেলা পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষকে গলা কেটে হত্যার পেছনে জঙ্গি গোষ্ঠির সংশ্লিষ্টতার বিষয়টিও মাথায় রাখা হয়েছে জানিয়ে বলেন, দেশের বিভিন্ন জায়গায় যেভাবে চোরা গুপ্তা হামলা করে হত্যা চালানো হচ্ছে। তার সঙ্গে এই বৌদ্ধ ভিক্ষুকে হত্যা পেছনে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সম্প্রতি কক্সবাজারের টেকনাফে আনসার সদস্য নিহত হওয়া ও অস্ত্র লুট ঘটনা যারা ঘটিয়েছে তারা এই হত্যাকান্ডের পেছনে জড়িত কিনা তাও দেখা হচ্ছে।