উখিয়া ও তৎসংলগ্ন নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে বিজিবি সতর্ক অবস্থানে থাকা স্বত্বেও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ প্রতিরোধ করতে পারছেনা প্রতিনিয়ত অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের আটক করে পুশব্যাক করার ফাক ফোকড় দিয়ে আসা স্বপরিবারে রোহিঙ্গার দল কুতুপালং বস্তিতে ঝুঁপড়ি বেধে আশ্রয় নিচ্ছে। তাদেরকে সহযোগীতা করছে বস্তিতে বসবাসকারী ক্যাম্প কমিটি নামধারী কতিপয় রোহিঙ্গা চাঁদাবাজ চক্র। দিন দিন বস্তি এলাকায় নতুন নতুন ঝুপড়ি সম্প্রসারিত হওয়ার বিষয় নিয়ে জানতে চাওয়া হলে ক্যাম্প ইনচার্জ বলছেন, রোহিঙ্গা বস্তি তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকায় খোজখবর রাখেননা। তবে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য ক্যাম্প পুলিশের সার্বক্ষণিক নজরদারি রয়েছে বলে তিনি জানান।
গত শুক্রবার মিয়ানমারের মংডু টাউনশীপের ঢেকিবনিয়া ফকিরাবাজার গ্রাম থেকে স্বপরিবারে চলে আসা সাত সদস্যের একটি রোহিঙ্গা পরিবারের দেখা হয় টিভি র্যালী কেন্দ্র এলাকায়। জানতে চাওয়া হলে বয়োবৃদ্ধ মহিলা খদিজা বিবি (৫৮) জানান, ছেলে সন্তান নিয়ে অভাব অনটনের জ্বালা সইতে না পেরে চলে এসেছেন। সে আরো জানান, সীমান্তের তুমব্রু ঘাট পারা পারের সময় স্থানীয় ডুরা কবির নামের এক দালালকে পাঁচশত টাকা দিলে সে কুতুপালং ক্যাম্প পর্যন্ত পৌছে দেয়। ওই রোহিঙ্গা মহিলা আরো জানান, এখানে সরকারী ত্রাণ সামগ্রী পাওয়া যায়। তাই ইতিপূর্বে অনেক পরিবার এখানে চলে এসেছেন। তারা ভাল আছেন জেনেই আমরা ছুটে এসেছি।
জানা গেছে, উখিয়া ও নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের তুমব্রু, ঘুমধুম, বালুখালী, পালংখালী, রেজু আমতলী এলাকায় বিজিবির স্থায়ী চৌকি থাকলেও অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে বিজিবি সদস্যদের নাগালের বাইরে থাকে অধিকাংশ সীমান্ত পথ। স্থানীয় দালাল চক্র টহল পার্টি গতিবিধি জেনে নিয়ে বিভিন্ন চোরাই পথ দিয়ে টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের স্বপরিবারে এদেশে ঠেলে দিয়ে নির্ধারিত স্থানে পৌছে দেওয়া হয় বলে ঘুমধুম এলাকার আব্দুল করিম স্বীকার করেন, বিজিবি প্রতিদিন অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের আটক করে যথাযথ মানবিক সেবা দিয়ে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো স্বত্বেও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানো যাচ্ছেনা। তিনি মিয়ানমার সীমান্তের মতো বাংলাদেশ সীমান্তে কাটা তারের বেড়া সহ সুপরিসর যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করে দিলে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ সহ চোরাচালান প্রতিরোধ সম্ভব হবে বলে দাবী করেন।
খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, কুতুপালং রেজিষ্ট্রাট ক্যাম্প ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি সাইফুল ইসলাম প্রকাশ জঙ্গী সাইফুল অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের আশ্রয় পশ্রয় দিয়ে তাদের স্থায়ী বসবাসের সুযোগ করে দেওয়ার পাশা পাশি তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা,তার লুটপাটের বিষয়টি প্রশাসনে জানাজানি হয়ে গেলেও পুলিশ তাকে আটকের জন্য তৎপর হয়ে উঠে।
কুতুপালং এলাকায় অস্বাভাবিক রোহিঙ্গার সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী সহ একাধিক লোকজন রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণ করে অনুপ্রবেশ প্রতিরোধ করার জন্য প্রশাসনের প্রতি দাবী জানান। তারা বলেন, নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ফলে স্থানীয়ভাবে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়ে এলাকায় চুরি, ডাকাতি সহ অসামাজিক কার্যকলাপ আশংকাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে কুতুপালং ক্যাম্প ইনচার্জ শাকিল রিদুওয়ান আরমান, নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের কথা স্বীকার করে বলেন, অবৈধ রোহিঙ্গা বস্তি এলাকা তার নিয়ন্ত্রণে না থাকায় ওই সব রোহিঙ্গাদের খোজখবর তার জানা নেই।
কক্সবাজার ১৭ বিজিবির অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল ইমরান উল্লাহ সরকার জানান, রোহিঙ্গা শুমারি শুরু থেকে সীমান্তে বিজিবির অতিরিক্ত টহল জোরদার করা হয়েছে যাতে কোন রোহিঙ্গা এ দেশে অনুপ্রবেশ করতে না পারে। তিনি আরো জানান, যে সব রোহিঙ্গারা সীমান্ত পেরিয়ে এ দেশে চলে আসার চেষ্টা করে তাদেরকে আটক করে মানবিক সেবা দিয়ে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়। বর্তমানে মিয়ানমার ও বাংলাদেশ সীমান্তে রোহিঙ্গারা যাতে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে না পারে সে লক্ষে উভয় দেশের সীমান্তে টহল জোরদার করা হয়েছে।
পাঠকের মতামত