জেলেদের নৌকা। এরকম নৌকাতে করেই রোহিঙ্গাদের নিয়ে আসা হয় বাংলাদেশে
মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের কয়েকজন বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, দালালদের টাকা দিয়ে তারা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন।
তারা বলছেন, জীবন বাঁচানোর জন্যে তারা মিয়ানমার ও বাংলাদেশ দু'খানেই দালালদের অর্থ দিচ্ছেন।
আর সীমান্তবর্তী নাফ নদী পার হচ্ছেন স্থানীয় জেলে/মাঝিদের সহায়তায়।
অর্থের বিনিময়ে কিভাবে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আনার কাজ করছে এসব দালালরা- টেকনাফে এমন দু'জনের সাথে কথা বলে কিছু ধারণা পাওয়া গেছে।
এই প্রতিবেদনে এই পাচারকারীদের ছদ্মনাম ব্যবহার করা হয়েছে।
সন্ধ্যার পর অন্ধকার নেমে এলে কাজ শুরু হয় নৌকার মাঝি সবুরের।
আপাতদৃষ্টিতে তাকে দেখলে মনে হবে তিনি নদীতে মাছ ধরতে যাচ্ছেন।
কিন্তু উদ্দেশ্য তার অন্য।
মোবাইল ফোনে আগেই কথা বলে নেন সবুর।
টেকনাফে রোহিঙ্গা নারী ও শিশু, এ সপ্তাহেই তারা বাংলাদেশে এসেছেন
মিয়ানমার থেকে যারা বাংলাদেশে আসবে তারা মিয়ানমার সীমান্তে নদীর ওপারে বনের ভেতরে অপেক্ষা করতে থাকে।
রাত আরো গভীর হলে সবুর নির্দিষ্ট স্থানে যেয়ে তাদেরকে নৌকায় তুলে নেয়।
তিনি বলেছেন, নৌকায় যারা উঠেন তাদের মধ্যে অনেক মেয়েকে তিনি দেখেছেন মুখে ও শরীরে কালি এবং কাদা মেখে আছেন।
তাদের চেহারা যাতে না বোঝা যায় সেকারণেই এই চেষ্টা।
"জনপ্রতি তাকে কেউ তিন হাজার, কেউ দুই হাজার আবার কেউ পাঁচ হাজার টাকা দেয়," বলেন তিনি।
প্রতিটা নৌকায় ৫ থেকে ১০ জন করে উঠানো হয়।
গত প্রায় দেড় মাসে সবুর এমন ৫০ জনকে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে নিয়ে এসেছেন বলে তিনি জানান।
শুধু নদী পার করে দেয়াটাই তার কাজ।
তবে তার উপরেও লোকজন রয়েছেন যারা মোবাইলে মিয়ানমারের দালালদের সাথে মূল যোগাযোগটা করে থাকেন।
বাংলাদেশে এরকম একজন দালাল আব্দুল। মিয়ানমারের দালালদের সাথে তিনিই যোগাযোগ রাখেন।
মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মাঝখানে নাফ নদী। এপারে বিজিবির পোস্ট
আব্দুল জানান, একদল রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে নিয়ে আসার জন্যে মিয়ানমারের দালালদের সাথে আড়াই লাখ থেকে পাঁচ লাখ কিয়েটের চুক্তি করেন তিনি।
তিনি বলেন, " প্রথমে টেকনাফ থেকে একজন জেলেকে ঠিক করা হয় যিনি রাতের অন্ধকারে নদীর ওপাশে যাবেন রোহিঙ্গাদের আনার জন্যে। পরে রাতের বেলা, কাঁটাতারের বেড়ার পাশে যেসব রোহিঙ্গা লুকিয়ে থাকেন, তাদেরকে নিয়ে আসে তিনি।
দালাল আব্দুল জানান, এজন্যে তিনি জনপ্রতি ২৫ থেকে ২৬ হাজার টাকা নিয়ে থাকেন।
তবে সীমান্তে বিজিবির কঠোর সর্তক অবস্থান আর তাদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে নিয়ে আসাটাই তাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বলছিলেন তিনি।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার জেরে এ পর্যন্ত ২১ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে বলে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা বলছে।
আর এসব রোহিঙ্গার অনেকেই বিবিসির কাছে বলেছেন, জীবন বাঁচাতে দালালদের টাকা দিয়ে তারা বাংলাদেশের সীমান্তে এসেছেন।
টেকনাফের একটি অস্থায়ী ক্যাম্পে পরিবার নিয়ে উঠেছেন এমন একজন ব্যক্তি রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার বর্ণনা দিয়ে বলেন, পরিবারের নারী সদস্যদের সম্মান বাঁচাতে তিনি তাদের নিয়ে পালিয়ে এসেছেন।
আর তার ভাষায় দালালদের দিয়েছেন জন প্রতি ২৬ হাজার মিয়ানমার কিয়েট।
আর এভাবেই প্রায় প্রতি রাতে নাফ নদী পাড়ি দিয়ে টেকনাফে প্রবেশ করছে রোহিঙ্গারা যাদের কেউ কেউ দালালদের অর্থ দিয়ে নদী পার হচ্ছেন।