হুমায়ুন কবির জুশান, উখিয়া
একদিকে নাফনদী, আরেকদিকে বঙ্গোপসাগরের অবারিত জলরাশি। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সীমানা ভাগকারী এই দুই বিশাল জলধারা নিয়েই প্রতিনিয়তই ভয়াবহ আকারে প্রবেশ করছে মরণ নেশা ইয়াবা ও ক্রিস্টাল মেথ বা আইসসহ নানা মাদক। বিজিবি-কোস্ট গার্ড একদিকে টহল বাড়ালে আরেকদিকে রুট আবিস্কার করা হচ্ছে। নিত্যনতুন কৌশলে মিয়ানমার থেকে কক্সবাজারের নাফ নদ ও বঙ্গোপসাগর দিয়ে যেন ঢলের মতো ঢুকছে মাদকের চালান। এর মধ্যে বান্দরবান ও নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের পাহাড়ি অঞ্চল দিয়েও আসছে ইয়াবা। কঠোর অভিযান সত্তেও মাদক চক্রের ভয়ঙ্কর তৎপরতায় উদ্বিগ্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও। উখিয়া থানা অফিসার ইনচার্জ মোঃ আলী বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে শুধু পুলিশ নয়, কোস্ট গার্ড-বিজিবি র্যাব সবাই সতর্ক। কিন্তু তারপরও বন্ধ করা যাচ্ছে না। এক স্থানে বা এলাকায় বাধা দিলে উল্টো আরেক এলাকা বা পথ সৃষ্টির চেষ্টা করছে মাদক কারবারিরা। তাই আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করতে হলে শুধু পুলিশ, কোস্ট গার্ড-বিজিবি র্যাব নয়, আহবান করছি যেন সবাই আমাদের সহায়তা করেন। জানা গেছে, কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ মূলত ইয়াবা ও আইস প্রবেশের মূল পয়েন্ট। সেখানকার স্থানীয় চিহ্নিত ও উঠতি মাদক ব্যবসায়ীরা মিয়ানমারের চক্রের সঙ্গে মিলেমিশেশ ইয়াবা চালান আনছে। এতে বড় ভূমিকা রাখছে মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত একশ্রেণির রোহিঙ্গা। রোহিঙ্গা মাদক কারবারিরা স্থানীয়দের সঙ্গে বৈবাহিকসহ নানা রকম আত্নীয়তার বন্ধন গড়ে ইয়াবার কারবার করে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এসব ক্ষেত্রে উখিখয়া-টেকনাফের বেশকিছু জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতারও শেল্টার রয়েছে। যাদের অনেকেই চিহ্নিত বা আত্নসমর্পনকারী মাদক ব্যবসায়ী। উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের গত কয়েক ধাপের নির্বাচনে মেম্বার পদে বেশ কয়েকজন আত্নস্বীকৃত ইয়াবা কারবারী জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন। যারা গ্রেফতার হয়ে কারাগগারেও ছিলেন। জামিনে মুক্তি পেয়েই তারা ফের সক্রিয় হন ইয়াবা কারবারে। আর সেই মাদক মাদক কারবার নির্বিগ্নে চালাতেই তারা বেছে নেন জনপ্রতিনিধি হওয়ার কৌশল। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন আসলেই তারা বিপুল পরিমাণ টাকা ছড়িয়ে এবং স্থানীয় পর্যায়ে ভীতি-আতঙ্ক সৃষ্টি করে নির্বাচিতও হয়েছেন অনেকেই। এছাড়া কয়েকজন ইয়াবা ব্যবসায়ী ইউপি নির্বাচনে অংশ নিয়ে হেরেও গেছেন। সব মিলিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে মাদক কারবারের চিত্র ভয়াবহ রুপ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরর একাধিক কর্মকর্তা। রোহিঙ্গা অধ্য্যুষিত উখিয়া পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, একের পর এক হত্যাকান্ড, আধিপত্য বিস্তার ও মাদক ইয়াবা কারবারের জেরে সব সময় অস্থিরতা বিরাজ করে রোহিঙ্গা শিবিরে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মাদকের ভয়াবহতা সব চেয়ে বেশি। রোহিঙ্গগাদের সাথে স্থানীয় মাদক কারবারিরাও জড়িত। ক্যাম্পে বিভিন্ন অপরাধী দল সক্রিয়। এসব অপরাধী দলের নেতৃত্বে চলে মাদক কারবার, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, আধিপত্য বিসস্তারে সশস্ত্র মহড়া, অপহরণ, মানবপাচারসহ বিভিন্ন অপরাধ। সু-শাসনের জন্যে নাগরিক সুজনের উখিয়া উপজেলা আহবায়ক সাংবাদিক নুর মোহাম্মদ সিকদার বলেন, যতটুকুই ইয়াবা বা মাদক আটক হচ্ছে তার চেয়ে অনেকগুণ বেশি চালান সরবরাহ সম্পন্ন হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, অভিযানের দিকে যেমন জোর দিতে হবে, তেমনিসরবরাহের বন্ধের দিকেও সমান নজর দিতে হবে। যেহেতু চাহিদা হ্রাস করা যাচ্ছে না, তাই সরবরাহ বন্ধের দিকেই ররং সব চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।