বাংলাদেশ লাগোয়া মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সক্রিয় সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির দৌরাত্ম্যে আতঙ্কে দিন কাটছে কক্সবাজারের টেকনাফের জেলেদের। তারা নাফ নদ ও সাগরে মাছ শিকারে যেতে ভয় পাচ্ছেন। ফলে কয়েকশ মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলার ঘাটে নোঙর করে রাখা আছে।
এক সপ্তাহে রোহিঙ্গাসহ ২৪ জেলেকে জিম্মি করে ট্রলারসহ নিয়ে যায় আরাকান আর্মি। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার তারা ১৯ জনকে নিয়ে যায়।
অপহরণের শিকার জেলেদের পরিবারে কান্না ও বিষাদের ছায়া নেমে এসেছে। তারা অন্তহীন উৎকণ্ঠা নিয়ে স্বজনদের ফেরার অপেক্ষায় আছেন।
সরেজমিন দেখা যায়, একের পর এক অপহরণের ঘটনায় শাহপরীর দ্বীপের জেলেরা ভীতির মধ্যে দিন পার করছেন। দ্বীপের জেটি ঘাট, মিস্ত্রিপাড়া ঘাট, দক্ষিণপাড়া ঘাট ও পশ্চিমপাড়া ঘাটে সারি সারি নৌকা ও ট্রলার নোঙর করা। এসব ঘাটে ছোট-বড় মিলিয়ে কয়েকশ মাছ ধরার ট্রলার ও নৌকা রয়েছে। অপহরণের শিকার জেলে পরিবারের সদস্যরা কাঁদছেন। অনেকে নাফ নদ ও সাগরপারে অপেক্ষা করছেন কখন পরিবারের সদস্যরা ফিরে আসবেন।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ পশ্চিমপাড়ার বেড়িবাঁধে দুশ্চিন্তা নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন সালেহা বেগম (৫৫) ও আনোয়ারা বেগম (৪০)। তারা দু’জনই শাহপরীর দ্বীপের মাঝরপাড়ার বাসিন্দা। গত বৃহস্পতিবার অপহৃতদের মধ্য তাদের স্বজনরা রয়েছেন।
বেড়িবাঁধে কেন বসে আছেন– জানতে চাইলে কান্নাজড়িত কণ্ঠে সালেহা বলেন, ‘আমার এগারো বছরের নাতি পাশের এক মাঝির সঙ্গে সাগরে মাছ শিকারে গিয়েছিল। এখনও তার কোনো খোঁজ মেলেনি। এখানে বসে তার অপেক্ষা করছি– কখন ফিরে আসে। শুনেছি, তাদের মিয়ানমারে ধরে নিয়ে গেছে। কী হবে তাদের, কিছু বলতে পারছি না। খুব ভয়ের মধ্য আছি।’ চোখের পানি মুছতে মুছতে তিনি বলেন, ‘অনলাইনে এক জোড়া কাপড় অর্ডার দিয়েছিল সে। সেটার টাকার জোগাড় করতে সাগরে মাছ শিকারে শ্রমিক হিসেবে গিয়েছিল। তার খুব শখ ঈদের কাপড় অনলাইনে কিনবে। সে কি আর ফিরবে না? সরকারের কাছে দাবি, দ্রুত যেন তাদের ফিরিয়ে আনা হয়।’
পাশে ছিলেন আনোয়ারা বেগম। তিনি বলেন, ‘পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি আব্দুর রহমান। এক দিন পার হলেও মিয়ানমার তাদের এখনও ছাড়েনি। প্রায়ই বাংলাদেশি জেলেদের ধরে নিয়ে যায়। এর স্থায়ী সমাধান করা দরকার। আমরা খুব আতঙ্কের মধ্যে আছি। ওই দেশে মগরা (আরাকান আর্মি) এখনও তাদের ছাড়েনি।’
এ বিষয়ে কক্সবাজারের সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, দীর্ঘদিন পর জেলেদের মাছ ধরার সুযোগ হয়েছে। ফলে তাদের সতর্ক থাকতে হবে, যাতে বাংলাদেশের জলসীমা অতিক্রম করা না হয়। অধিকাংশ জেলে সীমানা অতিক্রমের কারণে আরাকান আর্মি সুযোগ পাচ্ছে। তাই জেলেদের খুব সতর্ক হয়ে মাছ শিকার করতে হবে। জেলেরা সীমানা অতিক্রম করছে কিনা, সেটি নজরদারি রাখাও দরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর।
শাহপরীর দ্বীপ নৌঘাটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল গফুর বলেন, বৃহস্পতিবার ১৯ জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে। এর মধ্য তাঁর ঘাটে দুই নৌকার ১০ জেলে আছেন। তাদের পরিবারে কান্না থামছে না।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, জেলেদের ফেরত আনতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপরতা চালাচ্ছে। জেলেরা যাতে বাংলাদেশের জলসীমা অতিক্রম না করেন, সে জন্য সতর্ক করা হয়েছে।
টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়ন বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল আশিকুর রহমান বলেন, অপহৃতদের ফেরত আনতে তারা কাজ করছেন। সুত্র, সমকাল