ফিচার ডেস্ক:: চুলের যত্নে, চামড়ার খসখসে ভাব দূর করতে ও ওজন কমাতে নারিকেল তেলের উপকারিতার কথা সবারই জানা। তবে যুক্তরাষ্ট্রের আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন জানাচ্ছে ভিন্ন কথা।
সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এর সম্প্রতি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানা যায়, নারিকেল তেল দেহের এলডিএল (লো ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন) কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়ায়। এলডিএলকে বলা হয় দেহের সবচেয়ে ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল। এই কোলেস্টেরল ধমনীকে চর্বিপূর্ণ করে তোলে যা পরবর্তীতে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি সৃষ্টি করে।
নারিকেল তেল ছাড়াও গরুর মাংস, শুকর, মাখন ও নারিকেলের দুধে এই কোলেস্টেরল পাওয়া যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের পুষ্টি বিশেষজ্ঞ ডক্টর ওয়াল্টার সি উইলেট বলেন, নারিকেল তেলের বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা দাবি করেন অনেকে। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে এই তেল আসলেই উপকারী ভূমিকা রাখে- এরকম কোনো প্রমাণ নেই।
তার মতে, নারিকেল তেলে মাখনের চেয়ে বেশি স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে, যা এলডিএল-এর পরিমাণ অনেক বেশি মাত্রায় বাড়ায়।
অপরদিকে নারিকেল তেলে অনেক বেশি পরিমাণ এইচডিএল (হাই ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন) থাকে। এই এইচডিএলকে বলা হয় উপকারী কোলেস্টেরল। দেহের শর্করার ঘাটতি দূর করতে ও শক্তি যোগাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এই এইচডিএল।
তবে এইচডিল সম্পর্কে উইলেট বলেন, এইচডিএলের কার্যগুণ নিয়ে গবেষকদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। নারিকেল তেলে কয়েক ধরনের এইচডিএল পাওয়া যায় এবং মানবদেহে এদের প্রভাবও আলাদা। এক ধরনের এইচডিএল ধমনি থেকে ক্ষতিকর এলডিএল কমতে সাহায্য করে। কিন্তু অন্যান্য এইচডিএল সেটা করে না। তাই বেশি মাত্রায় এইচডিএল দেহের জন্য ভালো কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, নারিকেল তেল দেহের ওজন কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাছাড়া নারকেল তেলে ‘এমসিটি’ নামক এক প্রকার ফ্যাটি অ্যাসিড থাকায় তা মানুষের হজমে সহায়তা করে, ক্ষুধা সমস্যা দূর করে এবং মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়।
এরপরেও নারিকেল তেলের উপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল না হওয়ার পরামর্শ দেন যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল ইউনিভার্সিটির পুষ্টি বিষয়ক গবেষক কেভিন ক্ল্যাট। তার মতে, নারিকেল তেল দেহের জন্য মাখনের মতো ক্ষতিকর নয়। তবে তা অভিল অয়েল ও সরিষা তেলের মতো উপকারী নয়।
ক্ল্যাট আরও বলেন, দেহের ওজন কমাতে নারিকেল তেল স্বল্প মেয়াদে কার্যকরী হলেও তা ক্ষতিকর এলডিএল বৃদ্ধির চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে না। আপনার খাবারে যদি অনেক বেশি ফ্যাট দরকার হয়, তাহলে মাখনের বদলে নারিকেল তেল ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে যেসব ক্ষেত্রে সয়াবিন, সরিষা বা অলিভ অয়েল দিয়ে কাজ চলে যায়, সেক্ষেত্রে নারিকেল তেল ব্যবহার করা উচিত নয়।
পাঠকের মতামত