মানব বিবর্তনের ঋণ শুধাতে নারীকে দীর্ঘ-ক্লান্তিকর গর্ভধারণ ছাড়াও প্রচণ্ড প্রসব বেদনা এবং ঝুঁকিপূর্ণ, সময়াসাপেক্ষ ও জটিল সন্তান জন্মদান প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত হতে হয়েছে। প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে কোটি কোটি বছর ধরে হচ্ছে মানব সন্তান প্রসব প্রক্রিয়া অপেক্ষাকৃত সহজ থাকলেও ১০ হাজার বছর আগে হঠাৎ কঠিন হয়ে ওঠে।
বিবর্তনের ধারায় ধীরে ধীরে মানুষের মস্তিষ্কের সঙ্গে সঙ্গে নবজাতক শিশুদের আকৃতি বড় হয়েছে। অন্যদিকে সঙ্কুচিত হয়েছে নারীদের শ্রোণীচক্র ও জন্মনালী। ফলে জন্ম দেওয়ার প্রক্রিয়া দীর্ঘ ও যন্ত্রণাদায়ক এবং মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
রোড আইল্যান্ডের কিংস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞানী হলি ডানস্ওয়ার্থ, নৃ-তত্ত্ববিদ শেরউড ওয়াসবার্ন, কুরকি এবং যুক্তরাজ্যের লন্ডনে ইউনিভার্সিটি কলেজের শৈশব পুষ্টি চর্চা বিশেষজ্ঞ জোনাথন ওয়েলসসহ গবেষকরা বলেন, বিবর্তনের এ ধারা এখনও অব্যাহত আছে।
গত কয়েক দশক ধরে নারীদের শ্রোণীচক্র অন্য চেহারা নিয়েছে বলে গত বছর জানিয়েছেন অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিলিপ মিটারেকার এবং কনরাড লরেঞ্জ বিবর্তন বোধশক্তি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বারবারা ফিশারও। তাদের গবেষণা মতে, বিবর্তনের একটি ফল হিসাবে ভ্রুণের থাকার জন্য মাপসই করতে বিশ্বের কিছু অংশে মাত্র কয়েক দশকের মধ্যে শ্রোণীচক্র ১০ থেকে ২০ শতাংশ বড় হয়েছে। স্থুল বা বড় আকারের শিশু জন্মের প্রেক্ষিতে এটি নব্য রূপ নিচ্ছে, সেই সঙ্গে বাড়ছে জন্ম দেওয়া নারীর সংখ্যাও। এখন সিজারিয়ানের মাধ্যমেও অনেক শিশুর জন্ম হয়।
বিজ্ঞানীরা জানান, নারীর শ্রোণীচক্র তার কিশোর বয়সের শেষের দিকে একটি আকৃতি নেয়। প্রসবের জন্য উপযুক্ত হতে প্রস্তুত হতে থাকে। যখন সে সর্বোচ্চ উর্বরতা অর্জন করে, প্রসবের জন্য তার আরো সহায়ক লাগে। তার ৪০ বছর হলে ধীরে ধীরে এটির আকৃতি পরিবর্তিত হতে থাকে মেনোপজের জন্য।
প্রসবের ওপর এসব বিবর্তনীয় চাপ যেহেতু ভূমিকা পালন করে, সেহেতু এ প্রক্রিয়া এখনও পরিবর্তিত, এমনকি নব্য হচ্ছে বলেও জানান বিজ্ঞানীরা।
আরও অনেক কারণ আধুনিক প্রসব বিবর্তনে জড়িত বলে ৯৯টি কঙ্কাল নিয়ে গবেষণা শেষে জানিয়েছেন ফিশার ও মিটারেকার। তারা বলেন, নারীর মাথার আকার ও তার শ্রোণীচক্রের প্রস্থও এ রকম জেনেটিক বিবর্তনের পর্যায়ে সংযুক্ত।
‘এর মানে এই নয় যে, প্রসব সমস্যার সংশোধন হয়েছে। কিন্তু সমস্যা হলো, মাথা আকার এবং শ্রোণীচক্রের প্রস্থের মধ্যে সংযোগ থাকায়। নারীদের দেহ বয়স বাড়ার সঙ্গে পরিবর্তিত হয়ে সেখানে একটি জটিলতা তৈরি হয়। চলমান বিবর্তনে প্রসব প্রক্রিয়া আরও খারাপ হতে পারে’- বলেন ফিশার।