রুদ্র মিজান: ‘ওয়েলকাম টু রিলাক্স স্পা অ্যান্ড এসকর্ট এজেন্সি, উই আর ১০০ পার্সেন্ট রিয়েল। উই আর প্রভিডিং হাই ক্লাস এসকর্ট সার্ভিস ইন ঢাকা। উই হ্যাভ বিউটিফুল মডেল, একট্রেস, ম্যানি ওম্যান অব ডিফরেন্ট এ্যাজ। আওয়ার প্লেস ইন গুলশান। ১০০ পার্সেন্ট সিক্রেট প্লেস।...’ এভাবেই ইন্টারনেটে চলছে এসকর্ট সার্ভিসের প্রচারণা। একটি দুটি না, এরকম অর্ধশতাধিক ওয়েবসাইটের খোঁজ পাওয়া গেছে। যেখানে মেয়েদের ছবি ও বর্ণনা দেয়া আছে। এ গ্রেড, বি গ্রেড ও সি গ্রেড। এরকম ভিন্ন ভিন্ন গ্রেডের মেয়েদের ছবির নিচে তাদের সঙ্গ পেতে মূল্য উল্লেখ করা হয়েছে। উল্লেখ আছে নিরাপত্তার বিষয়টিও।
কথা হয় ‘ঢাকা এসকর্ট’ সার্ভিসের একটি ফোন নম্বরে। রিপন নামে এক ব্যক্তি জানান, বাসার নম্বর বললে পাঠিয়ে দেয়া হবে। এতে সি গ্রেডের মেয়ে চাইলে ঘণ্টায় সাত হাজার টাকা। বি গ্রেডের ১৫ হাজার ও এ গ্রেডের ২০ হাজার টাকা। রিপন জানান, সি গ্রেডে বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েরা রয়েছে। বি গ্রেডে সুন্দরী মডেল, নিউজ প্রেজেন্টার ও উপস্থাপক। এ গ্রেডে দেশের পরিচিত কিছু নায়িকা-অভিনেত্রী রয়েছে। তাদের নাম জানতে চাইলে রিপন বলেন, আপনি আগ্রহী হলে বুকিং মানি হিসেবে ২৫ পার্সেন্ট টাকা সেন্ট করতে হবে। অথবা গুলশান-২ এলাকায় এসে কল দিলে সরাসরি ফ্ল্যাটে নিয়ে যাওয়া হবে। তখন সরাসরি টাকা দিতে পারবেন।
এসকর্ট গার্ল সম্পর্কে এরকম আরো একটি সাইটের ডেস্ক কর্মকর্তা বিপ্লব সাহা জানান, কিছু মেয়েরা পূর্ব থেকেই পরিচিত। তাদের দিয়ে এই ব্যবসা শুরু করেছেন তারা। পরবর্তীতে আরো অনেকে স্বেচ্ছায় যোগাযোগ করেছেন। অনেকেই ছবি দিতে রাজি হন না। সিভি পাঠিয়ে দেন। সিভিতে প্রকৃত নাম-ঠিকানা থাকলেও তা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয় না। ওয়েবসাইটে ছদ্মনাম প্রকাশ করা হয়।
ওয়েবসাইটগুলোতে গোপনীয়তা রক্ষার ব্যাপারে বেশ প্রতিশ্রুতিপূর্ণ লেখা আছে। যে কোনো বয়সী নারী চাইলেই এজেন্সির ই-মেইলে দুই কপি ছবিসহ সিভি পাঠিয়ে দিতে পারেন। পরে এজেন্সি তার সাইটে আগ্রহী নারীর ছবিসহ তথ্য সংবলিত বিজ্ঞাপন প্রকাশ করবে। এতে উচ্চতা, ওজনসহ নানা তথ্য উল্লেখ থাকে।
পরিচয় গোপন করে একটি এসকর্ট এজেন্সির দেয়া ফোন নম্বরে কথা বললে আশিক নামে এক ব্যক্তি জানতে চান, এসকর্টকে আপনার বাসায় পাঠাতে হবে নাকি আপনি আমাদের কোনো ফ্ল্যাটে আসবেন। তিনি জানান, গুলশান, উত্তরা, বাড্ডা ও গুলিস্তান এলাকায় তাদের ফ্ল্যাট রয়েছে। কথানুসারে গুলিস্তানে মাজারের পাশে গিয়ে কল দিলে ছুটে আসেন এক যুবক। তিনি নিয়ে যান সরু গলি দিয়ে ১৪৪/এ হামিদুন্নেসা মার্কেটের একটি গলিতে। সেখানে সিঁড়ি দিয়ে তৃতীয় তলায়। কয়েক কক্ষের দরজা খুলে দেখানো হয় ভেতরের দৃশ্য। চমকে ওঠার মতো বিষয়। ওয়েস্টার্ন পোশাক পরিহিত বিভিন্ন বয়সের নারীরা। কেউ মদপান করছেন ছেলেদের সঙ্গে। কেউ সিগারেট টানছেন। ১৫-২০ মিনিট পরপর বন্ধ দরজা খুলে বের হচ্ছেন তরুণ-তরুণী।
শেষ পর্যন্ত পরিবেশ ভালো না লাগার অজুহাতে সেখান থেকে বের হয়ে আসতে চাইলে সংশ্লিষ্ট দালাল গুলশানের একটি ফ্ল্যাটে নিয়ে যাবে বলে জানায়। সেখানে আছেন পরিচিত কয়েক মডেল ও টিভি অভিনেত্রী। পরদিন, গুলশান-২ একটি বাড়িতে লিফটে উঠে চতুর্থ তলার একটি বাসায় ঢুকতেই অন্যরকম পরিবেশ। বাসার ড্রয়িংরুমে আপ্যায়ন করা হয়। তারপর নিয়ে যাওয়া হয় ভেতরের একটি কক্ষে। সেখানেই বসে আছেন পরিচিত দুই মডেল। একজন ফিল্মের বিভিন্ন আইটেম গানে নাচ করেন। কথা শুরু হয় তাদের সঙ্গে। এক পর্যায়ে পরিচয় জেনে যান তারা। প্রতিশ্রুতি দেয়া হয় নাম-ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না। সেই শর্তেই ওই আইটেম গার্ল জানান, ফিল্মে কাজ কম। কাজের জন্য অনেকের মনোরঞ্জন করতে হয়। কিছু কাজ করার কারণে তাকে অনেকেই চিনেন। কাজ ও এসকর্ট গার্ল-এই দুটি পরিচয়ের উদ্দেশ্যই টাকা আয় করা। তিনি তাই করছেন। তিনি বলেন, টাকার বিনিময়ে কাউকে মন দিচ্ছি না। এটা এক ধরনের ব্যবসা। তবে দেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণির তেমন কেউ তার কাছে যেতে পারেন না। টাকার পরিমাণ বেশি। তার কাছে যারা যান তারা উচ্চবিত্ত, ব্যবসায়ী, আমলা এবং বিদেশি।
ওই ফ্ল্যাটেই কথা হয় আরেক তরুণীর সঙ্গে। তিনি জানান, এসকর্ট গার্ল হিসেবে ওয়েবে তার কোনো ছবি নেই। ফেসবুকে একটি আইডি ও পেইজ আছে তার। এতে অনেকেই নক করেন। নানা প্রস্তাব দেন। ব্যক্তির প্রোফাইল দেখে বিত্তশালী, স্মার্ট ও বিশ্বস্ত মনে হলেই সাড়া দেন তিনি। এছাড়াও এসকর্ট থেকে ফোনে মাঝেমধ্যে খদ্দের পান। এসকর্ট এজেন্সির পরিচালকরা জানান, এরকম অনেক নারী রয়েছে যারা বিভিন্ন চাকরি করেন। কেউ গৃহিণী। তাদের ছবি রয়েছে এজেন্সির কাছে। অনেকের ছবি ওয়েবে দেয়া হয় না। সরাসরি দেখানো হয়। আবার কোনো খদ্দের যদি ওয়েবসাইটে ছবি দেখে ফোনে, ই-মেইলে এজেন্সিতে যোগাযোগ করে এসকর্ট গার্লকে বাসায় নিতে চান। এরকম চুক্তি করেন। তখন এজেন্সি থেকে নির্ধারিত এসকর্ট গার্লকে ফোনে চুক্তির কথা জানানো হয়। পরে সেই চুক্তি অনুযায়ী এজেন্সির দেয়া ঠিকানা মতো পৌঁছে যাবে এসকর্ট গার্ল। এজন্য আগেই তাকে অর্ধেক পেমেন্ট করতে হয়। বাকি অর্ধেক পাবে কাজ হওয়ার পর। আর এজেন্সিকে দিতে হবে নির্ধারিত একটি কমিশন। কমিশনের পরিমাণ ২৫ থেকে ৪০ পার্সেন্ট। এভাবেই অবাধে অনলাইনে চলছে যৌন ব্যবসা। সূত্র: মানবজমিন