বৌদ্ধদের কয়েকটি প্রধান ধর্মীয় উৎসবের মধ্যে অন্যতম উৎসব হলো “প্রবারণা পূর্ণিমা”। এইটিকে অাশ্বিনী পূর্ণিমা নামেও অভিহিত করা হয়। প্রবারণা শব্দটি মূলত বারণ বা বরণ শব্দের সাথে প্র’ উপসর্গ যোগ হয়ে প্রবারণা শব্দটি গঠিত হয়েছে। এইটি একটি সংস্কৃত শব্দ। এর অর্থ হল প্রকৃষ্টরুপে বরণ বা নিষেধ করা। বরণ করা মানে বিশুদ্ধ বিনয়চারে মানবজীবনকে পরিচালিত করার প্রয়াসে অাদর্শের সহিত ত্যাগী,নৈতিক গুণাবলি অর্জন ও ব্রতী হওয়াকে বুঝায়। অার বারণ বা নিষেধ বলতে অার্দশ ধর্মচারের নিকৃষ্টকর্ম বা বিরোধী কর্মসমূহ ত্যাগ করাকে বুঝায়।
বর্ষাবাস শেষপ্রান্তে ভিক্ষুসংঘ নিজের দোষত্রুটি অন্য ভিক্ষুরসংঘের নিকট প্রকাশ করে তার সম্পাদিত কর্মের প্রায়শ্চিত্ত বিধানের অাহবান জানায়। মোটকথা, দৈনন্দিন জীবনে কর্ম সম্পাদনকালে, সম্পাদিত দোষত্রুটি ত্যাগ করে গুণের প্রতি উৎকৃষ্ট থাকার মনোভাব বা ইতিবাচক চেতনা সৃষ্টি করাই প্রবারণার মূখ্য উদ্দেশ্য।
তথাগত সম্যক সম্বুদ্ধ শ্রাবস্তীর জেতবনে অবস্থানকালে ভিক্ষুসংঘের কল্যাণের কথা চিন্তা করে পালনীয় হিসাবে এই প্রবারণার প্রবর্তন করেন।
প্রবারণের শেষের পরদিন থেকে প্রতিটি বৌদ্ধ বিহারে পালিত হয়,যাকে বলা হয় দানের শ্রেষ্ট,বা দানের রাজা, কঠিনচীবর দান। এই উৎসবও বৌদ্ধের কাছে গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই উৎসব বৌদ্ধদেরকে দানচেতনা বৃদ্ধির সহায়তা করে।
এই প্রবারণাকে ঘিরে অন্য একটি উৎসবমূখর দিক হলো ফানুস উড়ানো। বৌদ্ধশাস্ত্রের বিধান মতে বুদ্ধদেব অাধ্যাত্বিক শক্তিবলে দেবলোকে গিয়ে মাকে ধর্মদেশনা করে এইদিন স্বর্গ থেকে মত্যৈলোকে অবতরণ করে। এইছাড়াও অারেকটি কাহিনী এর সাথে জড়িত, সিদ্ধার্থ গৌতম কোনো এক সময় মাথার এক গুচ্ছ চুল কেটে বলেছিলেন তিনি যদি সিদ্ধিলাভের উপযুক্ত হন তাহলে এই কর্তিত চুল যেন নিম্নে পতিত না হয়ে ঊর্ধ্বে উঠে যায়। তাঁর ইচ্ছানুযায়ী চুলগুচ্ছ আকাশে উঠে গিয়েছিল। তাই বুদ্ধের কেশধাতু পূজার স্মৃতিস্বরূপ আকাশে এই ফানুস ওড়ানো হয়। এ করণে আত্মবিশ্লেষণের শিক্ষা, মাতৃকর্তব্য পালন ও বিনয়বিধান অনুশীলনের বহুবিধ মহিমায় এই প্রবারণা পূর্ণিমা মহিমান্বিত। এইছাড়াও বিহারে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সকলে হিংসা ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে সমবেত হয়ে জগতের সুখশান্তি কামনা করে প্রার্থনা করে।। এইকারণে প্রবারণা পূণির্মা বৌদ্ধদের নিকট অতীব মহান অার গুরুত্বপূর্ণ।।
পরিশেষে সবাইকে মহান প্রবারণা পূর্ণিমার মৈত্রীময় শুভচ্ছা জানাচ্ছি।
লেখকঃ
অাশু বড়ুয়া।
পাঠকের মতামত