বিবাহিত, তালাকপ্রাপ্ত, গ্রামের কৃষকের মেয়ে কিংবা তথ্য লুকানোর অভিযোগে সবা্ই নানা ভাবে এভ্রিলকে ঘায়েল করছেন। তার সমালোচনা করছেন। নানা অশ্লিল বাক্য প্রয়োগে এভ্রিলের চৌদ্দ গোষ্টি উদ্ধার করছে সবাই। কিন্তু একটি বাল্য বিয়ের শিকার কৃষকের মেয়ে শহরে এসে নিজে একাকি সংগ্রাম করে নিজেকে যেভাবে বদলে নিলো, আবার সে পড়া লেখা শুরু করলো। আবার মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শিখলো। সুন্দরী প্রতিযোগিতায় ২৫ হাজার প্রতিযোগির সাথে প্রতিদ্বন্ধিতা করে সেরা ১০ জনের মধ্যে আসতে পারলো সেই বিষয়টাকে আমরা কেউই সাধুবাদ জানাচ্ছি না। আমরা সবাই নারীর ক্ষমতায়নের কথা বলি। আবার কোনভাবে সংগ্রাম করে একজন নারী যোগ্য এবং ক্ষমতাবান হয়ে উঠলে তার নেতিবাচক দিক কিংবা তার অতীত নিয়ে টানা হেঁচরা করতে ছাড়ি না।
এভ্রিলকে আমি চিনি ঠিক এক বছর আগে থেকে। তখন সে চট্টগ্রাম শহরে থাকে একজন নারী নিকটাত্মীয়ের সাথে। হ্যামার স্ট্রেংথ জিম-এ তার শরীর চর্চা এবং হ্যামার স্ট্রেংথ-এর মিস হ্যামার স্ট্রেংথ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহনের কারনের তাকে কাছ থেকে দেখা ও জানার সুযোগ হয়েছিলো।
তার মাত্র তিনমাস টিকে থাকা একটি বিয়ে নামের ঠুনকো অতীত আমাদের প্রায় সবারই জানা ছিলো। কিন্তু এর পরও তার ঘুরে দাঁড়ানোর যুদ্ধ, তার ভেতরের এগিয়ে যাওয়ার স্পৃহা, সংগ্রামী মনোভাব সবকিছুই তখন থেকেই স্পষ্ট ছিলো। তার তিনমাসের ওই অতীতটা তখন কেউ আলোচনাও করেনি।
এই এভ্রিলই যখন দিনের পর দিন সংগ্রাম করে, সকল প্রতিকুলতার সাথে যুদ্ধ করে নিজেকে প্রস্তুত করেছে। যখন সে আলো ঝলমলে মঞ্চে একজন রীতিমত তারকা বনে গেলো, এখন আমরা সবাই মিলে তার অতীত নিয়ে টানা হেঁচরা শুরু করে দিলাম। অর্থাত মুল বিষয়টা দাঁড়াচ্ছে প্রত্যন্ত গ্রামের কৃষকের মেয়েটা কেনো এগিয়ে যাবে? তাকে টেনে হেঁচরে নামিয়ে ফেলতে হবে- এটাই যেনো মানষিকতা।
ধরে নিলাম আমেনা শহরে এসে এভ্রিল হয়েছে। হুম হয়েছে। তাতে কি? সে নিজের চেষ্ঠায় এভ্রিল হয়েছে। তাকে কেউ এভ্রিল বানিয়ে দেয়নি। শহরের হাজার হাজার তরুনীর সাথে প্রতিদ্বন্ধিতা করে সেরা ১০ জনের মধ্যে চলে আসাটাই তার এভ্রিল হওয়ার স্বার্থকতা প্রকাশ করেছে।
সবাই বলবেন সুন্দরী প্রতিযোগিতার নিয়ম ভেঙে নিজেকে অবিবাহিত উল্লেখ করে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে। এটা সত্যি- এভ্রিল তা করেছে। কিন্তু মাত্র তিন মাসের বাল্য বিয়েটিকে এভ্রিল মনে রাখেনি। সুন্দরী প্রতিযোগিতার ফর্মে লিখা ছিলো বিবাহিত নাকি অবিবাহিত। এভ্রিল সেখানে কি লিখবে। এখন তো সে বিবাহিত নয়। তাই স্বাভাবিক কারনেই সে অবিবাহিত লিখেছে।
ধরে নিলাম এতেও এভ্রিল প্রতারণা করেছে- সব কিছু মিলিয়ে এভ্রিল সেরা ১০ জনে এসেছে। চুড়ান্ত প্রতিযোগিতার ফলাফলে প্রতিযোগিতার আয়োজক বিচারকদের রায় উপেক্ষা করে এভ্রিলকে বিজয়ী ঘোষনা করে। আয়োজকরা এই ধরনের প্রতারণার মাধ্যমে এভ্রিলকে সামনে নিয়ে এসে চুড়ান্ত অপমান করেছে এভ্রিলকে । এই কথাটি কেউ বলছেন না। আজ যদি এভ্রিল সেরা ১০ জনের একজন হয়েও থাকতো ঢাকা শহরে সে একজন তারকা হয়েই থাকতো। তার অতীত নিয়ে কেউ ঘাঁটাঘাটি করতো না।
আজ বিবাহিত তথ্য গোপনের অভিযোগে এভ্রিলের মুকুট কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।খেতাব বাতিল করা হচ্ছে। ঠিক আছে এক দিক থেকে এটা হয়তো যৌক্তিক। কিন্তু যে আয়োজক সংস্থা বিচারকদের রায় অমান্য করে তাদের নিজেদের পছন্দের সুন্দরীকে বিজয়ী করেছিলো তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। তারা যেনো ভবিষ্যতে এই ধরনের প্রতারণামুলক প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে না পারে। সেটাই হবে ন্যায়।