ঢাকা : শোলাকিয়ার ময়দানে জঙ্গি হামলার প্রসঙ্গ তুলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, ‘বেহেশতে গেলেই হুরপরী পাবে- এমন চোখ ধাঁধানো প্রলোভন দেখিয়ে আমাদের শিক্ষিত তরুণদের জঙ্গিবাদের দীক্ষা দেয়া হচ্ছে। মগজধোলাই করা হচ্ছে। হুরপরীর আশায় নিজেরা নামাজ না পড়ে নামাজীদের হত্যা করছে জঙ্গিরা।’
তিনি বলেন, ‘জঙ্গিদের বলা হচ্ছে- নিহত হলেও বেহেশতে তাদের জন্য হুরপরীরা অপেক্ষা করছে। এই আশায় তারা মানুষকে হত্যা করছে। হাসি মুখে নিজেকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে।’
শনিবার বিকেলে রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এক মতবিনিয়ম সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
‘জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে কারিগরি শিক্ষকদের করণীয়’ শীর্ষক এ মতবিনিয়ম সভার আয়োজন করে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘তরুণদের এমনভাবে মগজ ধোলাই করা হয়, তারা আর স্বাভাবিক থাকে না। তারা হুরপরী পাওয়ার জন্য পাগল হয়ে যায়। যাদের মৃত্যুর পর দিনের পর দিন লাশ পড়ে থাকে, বাবা-মা লাশটাও নিতে চায় না। আর আল্লাহ তাদেরকে নিয়া হুরের সামনে বসায়ে দিবে, এটা কীভাবে সম্ভব? এসব শুনে তরুণরা আস্তে আস্তে বিভ্রান্ত করা হয়।’
সন্তানদের শুধু উচ্চশিক্ষা নয় ভালো মানুষ হিসেবেও গড়ে তুলতে হবে উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘নয়তো তারা মানুষ খুন করে হুরপরীর পেছনে দৌড়াবে। তাই সকলকে দায়িত্ব নিয়ে ছেলে-মেয়েদের বিপথে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে হবে।’
মাদরাসাই জঙ্গি তৈরির কারখানা নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এখন দেখা যাচ্ছে উচ্চবিত্তদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যেখানে সন্তানদের না পড়ালে কিছু মানুষের মান সম্মান নষ্ট হয় সেসব প্রতিষ্ঠানেই জঙ্গি তৈরি হচ্ছে। যারা মেধাবী, স্মার্ট, ইংরেজিতে কথা বলতে পারে, তথ্য-প্রযুক্তি জ্ঞান রয়েছে সেসব তরুণদের দিকেই জঙ্গিরা দৃষ্টি দিচ্ছে, তাদেরকে কাজে লাগাচ্ছে।’
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়কে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘কিছু প্রতিষ্ঠানে জঙ্গিবাদের কার্যক্রম আমরা আগে থেকেই টের পেয়েছি, কিন্তু লেগে থাকিনি। একটি প্রতিষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) আড়াই বছর আগে তদন্তও করেছে। তাদেরকে আমরা ব্যবস্থা নিতে বলেছিলাম, কিন্তু নেয়নি। ওইসব প্রতিষ্ঠান কোন মুখে এখনো ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেয়? অবিভাবকরাই বা কেন সেখানে সন্তানদের ভর্তি করেন?’
প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করার প্রতি জোর দিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, ‘ছেলেমেয়েদের প্রতি শিক্ষকদের দৃষ্টি থাকতে হবে। তার সবকিছু সম্পর্কে জানতে হবে। কোনো শিক্ষার্থীর মধ্যে পরিবর্তন দেখা গেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।’
কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদেরও এসব উগ্রপন্থার সঙ্গে জড়িতের প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাই শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে আরো বেশি সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান শিক্ষামন্ত্রী।
এ সময় শিক্ষা সচিব মো. সোহরাব হোসাইন, ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের (আইডিইবি) চেয়ারম্যান এ কে এম এ হামিদ ছাড়াও সারা দেশের বিভিন্ন কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ বক্তব্য দেন।
পাঠকের মতামত