এম.বশিরুল আলম,লামাঃ
স্বপন কুমার দাশ, পিতাঃ মৃত সুশীল কান্তি দাশ, মাতাঃ শেফালি রানী দাশ গ্রামঃ তরই কোড়া,উপজেলা - আনোয়ারা, জেলা- চট্রগ্রাম। ২১ জুন ১৯৫৮ ইং সালে জন্ম গ্রহন করেন। তরইকোড়া নয়নতারা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৭৪ সালে দ্বিতীয় বিভাগে মেট্রিক পাশ করেন। তিনি ১৯৭৮-৭৯ ইং সালে সিলেট হাদিম নগর কৃষি ট্রেনিং ইনিষ্টিটিউট থেকে কৃষি ডিপ্লোমা অর্জন করেন। ১৯৮০ সালের ৫ সেপ্টেম্বরে কৃষি অধিদপ্তরে (বিএসএস) উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিসাবে চাকুরী লাভ করেন। ৬ জানুয়ারী ১৯৮৬ সালে পার্বত্য বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলায় ও একই বছর লামা উপজেলায় যোগদান করেন।
দীর্ঘ চাকুরী জীবনে স্বপন কুমার দাশ লামায় সুনামের সাথে কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিসাবে গজালিয়া ব্লকে দায়িত্ব পালনকালে তার পরামর্শে কৃষক কৃষানিরা কৃষি উৎপাদনে অনেক লাভবান হয়েছে। কৃষকের প্রতিটি আঙ্গিনায় তার বিচরণ ওই ব্লকের কৃষি সেক্টরকে লাবজনক ও আদর্শ কৃষিতে রুপ দিয়েছে। শুধু কৃষি নয় প্রতিটি কৃষককে গবাদি পশু- হাস, মুরগি, গরু-ছাগল পালন ও মৎস্য চাষে উদ্ভুদ্ধ করার পাশাপাশি ফলদ-বনজ বাগান সৃজনে আগ্রহী করে তুলেন। চাকুরী জীবনে তার সফল কর্মকান্ডে তিনি ১৯৮৮ সালে ও ১৯৯২ সালে দু’বার রাষ্ট্রপ্রতি পদক লাভ করে কৃষি বিভাগের ভাবমূর্তি উজ্জল করেন। এছাড়া ইঁদুর দমনে স্থানীয় কৃষকদের উদ্ভুদ্ধ করে সফলতা অর্জনের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৮২-৮৪-৮৭ ও ৮৮ সালে বিভাগীয় পর্যায়ে শ্রেষ্টত্বের গৌরব অর্জন করেন। চাকুরীর দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সমাজ সভ্যতায়ও রয়েছে তার প্রশংসনীয় প্রয়াস। মনুষত্য ও বিবেক বোধকে জাগ্রত করে তিনি কৃষকের সন্তানদেরকে বিদ্যালয় মুখি করার অনুপ্রেরণা যোগাতেন এবং পরিকল্পিত পরিবার গঠনের পরামর্শসহ বিভিন্ন বিষয়ে সচেতন হওয়ার আহবান জানিয়ে আসছেন। গ্রামের অনেক ছাত্রীছাত্রীকে বিনাশ্রমে অবসরকালীন সময়ে পাঠদান করানোর পাশাপশি সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চায় কাজ করেন।
২০০৮ সালে লামা উপজেলায় উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালন নিয়ে জন মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল। বিতর্কিত ওই সময়ও স্বপন কুমার দাশ তার দায়িত্বের প্রতি অবিচল থেকে স্থানীয়দের কাছে হয়ে উঠে পুজনীয় ব্যক্তি। সেই ক্রান্তিকালে দৃড়তা ও নৈতিকতার সাথে লামা কৃষি বিভাগের ভাবমূর্তি পূন:উদ্ধারে কাজ করেছিলেন এই উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা। বর্তমানে তার দীর্ঘ চাকুরী জীবনে সততা ও নিষ্টার সাথে দায়িত্ব পালন ও যোগ্যতা বিবেচনায় কৃষি বিভাগ তাকে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহকারী কৃষি কর্মকর্তা পদে পদোন্নতি দিবেন বলে সূত্রে জানাগেছে।
লামা উপজেলা গজালিয়া ব্লকের উপসহকারী এই কৃষি অফিসার একজন সাধু পুরুষ শুধু নয়, তিনি কৃষক-কৃষানি ও সর্বস্তরের মানুষের প্রতি সুনাগরিক সূলভ আচরণ করে একজন দায়িত্বশীল নাগরিকের পরিচয় দিচ্ছেন। তার ব্যপারে কথা হয় লামা উপজেলা ভুতপূর্ব (বর্তমানে সিরাজগঞ্জ) কৃষি অফিসার রুস্তম আলীর সাথে। তিনি জানান, লামায় যে ক’জন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আছেন, তার মধ্যে স্বপন দাশ অনেক বেশি পরিশ্রমি ও দায়িত্ববান। উপজেলা কৃষি অফিসার নুরে আলম জানান, লামা উপজেলায় বর্তমানে ২০ জন উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা রয়েছে, সবাই ভালো কাজ করেন। তবে স্বপন দাশ অন্য রকম। দায়িত্ব পালনে তিনি খুবই আন্তরিক এবং ডিপার্মেন্ট তাকে ডিপেন্ড করতে পারে। যার ফলশ্রুতিতে গজালিয়া ইউনিয়ন সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা হিসেবে কৃষি বিভাগ তাকে পদোন্নতি দিচ্ছেন।
স্থানীয় কৃষক আ: সালাম পুতু জানান, উ:স:কৃ:ক:ক স্বপন কুমার দাশের উপদেশ মেনে তিনি তামাক চাষ ছেড়ে ধান, আলু, বাদাম ও বিভিন্ন সবজি চাষে আগ্রহী হন। ফলে এ কৃষক আগের তুলনায় অনেক বেশি লাভবান হচ্ছেন।
কৃষক ক্যাহ্লাপ্রু মার্মা জানান, স্বপন কুমার দাশ একজন কৃষি কর্মকর্তা নয়, বোধ বিবেচনায় তিনি বড় মাপের অভিভাবক। তার অনুপ্রেরণায় এলাকার অনেক কৃষক কৃষি কাজে সফল হয়েছেন।
“স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিদ্ধস্থ: দেশে খাদ্য সংকট মোকাবেলায় কৃষি সেক্টরকে এগিয়ে নেয়ার খুবই প্রয়োজন, এমন উপলব্দি থেকে ৭০ দশকের শেষ দিকে আমি কৃষি ডিপ্লোমা করি”। এমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে স্বপন দাশ এ প্রতিনিধিকে জানান, একজন মানুষ ও নাগরিক হিসেবে আমার যে টুকু কমিটমেন্ট রয়েছে শুধু তাই করার চেষ্টা করছি। এর বাহিরে কিছু করতে পারিনি, কৃষকের মুখের হাঁসি যেন আমার অনাবিল আনন্দ। তিনি বলেন একসময় ৮-১০ কি:মি: পথ পায়ে হেটে সাপ-বিচ্ছুর কামড় খেয়ে দায়িত্ব পালন করেছি, ওই সময় কৃষকের উন্নতি দেখে খুব আনন্দ পেতাম তাই ক্লান্তি বোধ করেনি। বর্তমানে লামা উপজেলায় এক ঝাঁক তরুণ উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তাদের নিরলষ প্রচেষ্টায় এই উপজেলার কৃষি সেক্টরে সুবাতাশ বইছে। তিনি বলেন, তামাক চাষ বন্ধ করা গেলে এই উপজেলায় উৎপাদিত কৃষি ও মসল্লাজাত পন্য দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব। এখন প্রয়োজন কৃষি পন্য রক্ষণা-বেক্ষণের জন্য একটি হীমাগার স্থাপন করা।